ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে সেতুবন্ধন পাঠাগার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে সেতুবন্ধন পাঠাগার

পাঠাগারে বই পড়ার আগ্রহ কমেছে শিক্ষার্থীদের। এতে পাঠাগার বন্ধ হয়েছে। তবে সৈয়দপুরের সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত সকল বয়সীদের বই পড়া দেখে অভিভুত সবাই। প্রতিদিন দেড় থেকে দু’শ’ শিক্ষার্থীর বই পড়ার মহাসম্মিলন চলে। সূত্র জানায়, প্রয়োজনের তুলনায় মানসম্মত পাঠাগারের সংখ্যা বাড়েনি। আর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলগুলোতে তো কোন পাঠাগার নেই। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে জগৎ নিয়ে আলোচ্য বইগুলো পড়া থেকে গ্রামাঞ্চলের শিশু কিশোররা বঞ্চিত থাকছে। জানা যায়, পাখি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেতুবন্ধন’ ২০১৭ সালে খালিশা বেলপুকুর গ্রামে সংগঠনের সভাপতি আলমগীর হোসেনের বাড়ির পাশে তিন শতক জমির ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে একটি পাঠাগার ঘর নির্মাণ করেন। বই দিয়ে সহযোগিতা করেন স্থানীয় সাংবাদিক, প্রতিষ্ঠিত লেখক, কবি ও সাহিত্যানুরাগীরা। এতে প্রায় ৬ শত বই সংগ্রহ হয়। ধর্মীয়, সাহিত্য ও বিজ্ঞানভিক্তিক বইয়ে সমৃদ্ধ হয় পাঠাগারের সংগ্রহশালা। পাঠাগারে আমন্ত্রণ জানানো হয় সংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের। পরে বিকেল ও ছুটির দিনে এ পাঠাগারের বই দেখে পাড়ার ছেলেমেয়েসহ বিভিন্ন বয়সীরা বই পড়ছেন। আর ছুটির দিন কিংবা স্কুল শেষে বিকেলে সংলগ্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ার আনন্দে মেতে থাকছেন। সেতুবন্ধনের ওই পাঠাগারে দেখা যায়, একটিমাত্র বইয়ের শেলফ। গাদাগাদি করে সাজানো বই। তিনটি টেবিল আর চারদিকে প্লাস্টিকের চেয়ার। পছন্দের বইটি খুঁজে পাঠে মগ্ন থাকছে পাঠকরা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য পাঠাগার খোলা থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য বিরতি ও বিকেলে। শিক্ষার্থীরা এ সময় পাঠাগারে এসে বই পড়ে। বাড়িতেও পড়ার জন্য বই নিয়ে যায়। রয়েছে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা। এতে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী ও পাঠকরা খুব সহজেই দেশ-বিদেশের খবরাখবর পচ্ছেন। এছাড়াও সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত কবিতা চর্চা, সাহিত্য সভা ও মাসিক গল্প লেখা প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে দেয়া হয় পুরস্কার। এতে দিন দিন সেতুবন্ধন পাঠাগার পাঠকের উপস্থিতিতে আলোকিত হয়ে উঠছে। যার কারণে সেতুবন্ধন পাঠাগারটি সরকারীভাবে নিবন্ধন পায়। এ পাঠাগারের দায়িত্বরত সেতুবন্ধনের সদস্য নওশাদ আনছারি জানান, পড়ার প্রতি আগ্রহ যেন বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধন আরও সুদৃঢ় করেছে। বয়োজ্যেষ্ঠরা জ্ঞানের ভা-ার সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। পাঠকের চাহিদা ও সুবিধা বৃদ্ধিতে তাই পাঠাগারটিকে আধুনিকায়ন ও বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত বই পড়তে আসা স্কুল ছাত্রী জুই জানায়, ‘এখানে আমরা ছড়া ও গল্পের বই পড়ি। পাশাপাশি পত্রিকার মাধ্যমে বিভিন্ন খবরাখবর জানতে পারি। এ পাঠাগারে অনেক উপকৃত হয়েছি। সুজন নামে এ পাঠাগারের এক নিয়মিত পাঠক জানায়, আমরা অবসরে এ পাঠাগারে বিভিন্ন শিশুতোষ ছড়া ও গল্পের বই পড়ি। এক সময় এসব বই কিনে পড়তাম। এখন হাতের কাছে বিনামূল্যে এ সুযোগ পেয়েছি। তাই পড়ার সুযোগ হাতছাড়া করি না। সেতুবন্ধন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেন বলেন, পাঠাগারের মাধ্যমে বই পড়ে জ্ঞানের আলো বাড়ানো যায়। মূলত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনেক সুবিধা পায় না। তাই তাদের মেধার পরিপূরক হিসেবে সাংগঠনিকভাবে এটা গড়েছি। এর উদ্দেশ্য বই পড়ে মেধার বিকাশ ঘটানো। এই ভাবনা বাস্তবায়নের চেষ্টায় কাজ করছি। তবে এর জন্য সরকারী কিংবা ব্যক্তিগত সহায়তার প্রয়োজন। তাহলে এখানে প্রচুর বইয়ের সমাহার ঘটিয়ে আদর্শ পাঠাগার রূপায়ণ সম্ভব হবে। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম. গোলাম কিবরিয়া সেতুবন্ধনের এই নতুন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের কার্যক্রম বরাবরই প্রশংসনীয়। এবারে তাদের পাঠাগার নির্মাণের কাজ আমাদের মুগ্ধ করেছে। সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন সবসময় চেষ্টা করবে সেতুবন্ধনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে পাশে থাকার। -এম আর মহসিন, সৈয়দপুর থেকে
×