ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগে স্বস্তি ॥ উৎকণ্ঠা বিএনপিতে

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগে  স্বস্তি ॥ উৎকণ্ঠা বিএনপিতে

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একক প্রার্থী নিশ্চিত হয়ে গেলেও বিএনপির রয়েছে প্রায় প্রতিটিতে একাধিক বিকল্প প্রার্থী। ফলে দলটিতে এখনও রয়ে গেছে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও চূড়ান্ত নয়। তাই উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন ধানের শীষের টিকেট প্রত্যাশী নেতারা। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য। অপরদিকে প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় একেবারেই নির্ভার আওয়ামী লীগ ও মহাজোট। চট্টগ্রামে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। শুধু দুটি আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ দুজনকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা হলেও শেষ পর্যন্ত অবস্থা বুঝে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানা যায় দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে। কিন্তু উল্টো চিত্র বিএনপিতে। বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড প্রতিটি আসনেই দুই বা ততোধিক বিকল্প প্রার্থী রেখেছে। সে অনুযায়ী তারা মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। দলটি একইসঙ্গে রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে। শরিকদের সঙ্গে এখনও আসনের চূড়ান্ত বোঝাপড়া হয়নি। আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে বাকিদের প্রত্যাহার করে নিতে বলা হবে। চট্টগ্রামে বিএনপির অভ্যন্তরে এখনও রয়েছে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় কেন্দ্র পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ ও লবিং। শেষ পর্যন্ত একজনকে রেখে বাকিদের সরে যেতে বলা হলেও কজন প্রত্যাহার করে নেবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। একটানা দীর্ঘ বারো বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা একটি নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছেন। নেতাদের আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত সময়টুকু কাটছে অন্যরকম ব্যস্ততায়। মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগের পাশাপাশি চলছে দলের হাইকমান্ডের নজর কাড়ার চেষ্টা। চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে বিএনপির তিনটি আসনে ছাড় দেয়া অনেকটাই নিশ্চিত। আসনগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)। এর মধ্যে চন্দনাইশে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমদ বীর বিক্রম এবং সাতকানিয়ায় জামায়াত প্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলামের আসনে ছাড় নিশ্চিত হলেও হাটহাজারী আসনে রয়েছে এক ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থা। এখানে বিএনপির পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মৃত্যুতে আসনটিতে মীর নাসিরের ভাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিম বীর প্রতীককে নিয়ে। জোটের একটি শরিক দলের প্রধান হওয়ায় এ নেতার দাবি জোরালো হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া কল্যাণ পার্টির দাবি মাত্র একটি আসনের। সেক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকে কে প্রার্থী হচ্ছেন তা এখনও অনিশ্চয়তায় দুলছে। এছাড়া সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাও মনোনয়ন দাবিদার। চট্টগ্রামের এ তিনটি আসন ছাড়া বাকি ১৩টি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয় না থাকলেও নিজেদেরই রয়েছে একাধিক প্রার্থী। তবে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে যথাক্রমে আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর একক মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। বাকি আসনগুলোতে কে কাকে ছাড় দেয় এবং কেন্দ্র কাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সেটি এখন দেখার বিষয়। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থিতায় অনিশ্চয়তা না কাটলেও নিশ্চিন্তে রয়েছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটির পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রতি আসনে একজন করে প্রার্থী। নেতারা যে যার মতো করে নির্বাচনী মাঠ গোছানোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন। একাধিক দফায় প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম জোট শরিকদের দুটি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ভিন্ন দলের হলেও এ দুই প্রার্থীকে নিয়ে আওয়ামী লীগে বিরোধ নেই। ফলে তারাও নেমে পড়েছেন নির্বাচনী কার্যক্রমে। সব মিলিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বিএনপিকে এগোতে হচ্ছে পিছিয়ে থেকে।
×