ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে খুদে কবি সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

নীলফামারীতে খুদে কবি সমাবেশ

তাহমিন হক ববি, নীলফামারী থেকে ॥ কবিতা ও ছড়া ঘিরে এত কৌতূহল, এমন উৎসব সত্যি অবিশ্বাস্য! বড় নয়, বুড়ো নয়। সবাই স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী। তারাই হয়ে উঠছে খুদে কবি। দিন দিন যেন তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে ছিল ১৬ হাজার। ২০১৭ সালে বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৩৩১। এবার ২০১৮ সালে খুদে কবির সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩৩৮। যদি এই সংখ্যাগুলোকে যোগ করা হয় তাহলে দাঁড়ায় ৫৬ হাজার ৬৬৯। অবাক হচ্ছেন? না চোখ কপালে তুলছেন? কেউ হয়তো পাগলের প্রলাপ বলতেও পারেন। কিন্তু না। ঘটনা শতভাগ সত্য। স্কুলে মন দিয়ে লেখাপড়া করছে। সেইসঙ্গে চলছে কবিতা চর্চা। লেখার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত নিজের কল্পনাগুলোকে সাজাচ্ছে তারা। দেশ মাটি মায়ের কথা বলছে। গৌরব করতে শিখছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। আর ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। মঙ্গলবার বেলা ১১টা হতে টানা চার ঘণ্টা নীলফামারীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত হলো খুদে কবিদের সমাবেশ। ভিশন ২০২১ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজিত শিশুদের লেখা ছড়া ও কবিতা প্রতিযোগিতা শেষে সমাবেশে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। প্রায় ২৫ হাজার ধারণক্ষমতার নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর কানায় কানায় পূর্ণ। সামনের সারিতে বসে আছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ খুদে কবিরা। মাঠ উপচে অভিভাবকেরা রাস্তায়। এই খুদে কবিদের দেখতে রাজধানী হতে ছুটে এসেছিলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, আখতার হুসেন, সুজন বড়ুয়া, অভিনয় শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা, কামরুল হাসান, ক্রিকেটার আশরাফুল এবং জাদু শিল্পী শাহীন শাহ। এদের সঙ্গে এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। অতিথির সারিতেও ছিলেন আসাদুজ্জামান নূরের সহধর্মিণী ডাঃ শাহীন আক্তার। কচিকাঁচা শিশুরা অতিথিদের বরণ করে নেয় ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানটি দিয়ে। এরপর জাতীয় সঙ্গীত। সব বয়সী মানুষ হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে গানÑ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...। এর পর বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথিসহ সকল অতিথি। এরপর খুদে কবিদের কবিতা নিয়ে প্রকাশিত ‘আমরা নবীন আমরা কিশোর’ বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করেন সকলেই। খুদে কবিদের সমাবেশে সকল অতিথিরাই বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে অসাধারণ বক্তা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বললেন দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো। দাঁড়াতে শেখো। গাছ হতে শেখো। আকাশের চাঁদ হও। তাহলে এই পৃথিবীতে সত্যিকারভাবে কিছু দিতে পারবে। তিনি বললেন দেশে ও বিদেশে অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। নীলফামারী এসে মনে হলো খুদে কবিদের এটি- দেশ সেরা ও বিশ্ব সেরা। দেখলাম- জানতে পারলাম একটি জেলা শহরে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি সচেতন প্রয়াস। কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন জীবনে এক সঙ্গে এতো কবি দেখিনি। এটি আমার জীবনের ও পৃথিবীর ইতিহাস হয়ে থাকল। তিনি খুদে কবিদের জাতীয় সঙ্গীতের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ শব্দগুলোর সঙ্গে তুলনা করে আগামী দিনে জাগরণের আহ্বান জানান। অতিনয় শিল্পী তিশা চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে অভিভূত হয়ে পড়েন। তিশা বললেন, জীবন আমার আজ ধন্য। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর খুদে কবিদের বললেন যত বই পড়বে তত ভাবনাগুলো পরিপূর্ণ হবে, তোমাদের ভাবনার জায়গাটা অনেক বড়। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন আপনাদের সন্তানদের ভাবনার জায়গাটা ওদেরই ছেড়ে দিতে হবে। ওরা গল্পের বই পড়ুক, কবিতা লিখুক, গানবাজনা করুক, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করুক। এতে করে তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব জাগবে, বড় মাপের মানুষ হবে।
×