ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কামরুল হাসান শাকিম ;###;আবুল হাসান

স্নাতকের পাঠ চুকিয়ে সেন্টমার্টিনে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

 স্নাতকের পাঠ চুকিয়ে সেন্টমার্টিনে

মনটা যেন আজ পাখির ডানা, হারিয়ে যেতে তাই নেইতো মানা। হ্যাঁ, সদ্য স্নাতকের পাঠ চুকিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হারিয়ে গিয়েছিলাম সমুদ্রে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা দুঃখ ভুলানোর অন্যতম স্থান সমুদ্র। যেহেতু পরবর্তীতে আমাদের সবাই একসঙ্গে হবার সম্ভাবনা কম সেজন্য শেষ বেলায় দুঃখগুলো বিসর্জন দিয়ে হাসি আনন্দে মেতে উঠতে গিয়েছিলাম নীল পানি ঘেরা দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। গত ১৪ নবেম্বর রাত ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে টেকনাফের উদ্দেশে আমাদের বাস ছাড়ে। ১৫ নবেম্বর সকালে টেকনাফ পৌঁছে হালকা নাস্তা করেই জাহাজে করে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হই। একদিকে আরাকান পাহাড় ঘেরা মিয়ানমার আর অন্যদিকে সবুজের সমারোহে আচ্ছন্ন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সাদা রঙের সি-গাল পাখিগুলো পদপ্রদর্শকের মতো ছুটে চলছে আমাদের জাহাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। তাদের কলতানে সবার মন জুড়ালো। আমাদের ছুড়ে দেয়া চিপস-বিস্কুট মুহূর্তেই লুফে নিচ্ছে সি-গাল পাখিগুলো। আর পাখিদের সেসব ধরে খাওয়ার দৃশ্য ছিল মনোমুগ্ধকর। নাফ নদীর পানিতে সূর্যের আলোর ঝিকিমিকি আর অসংখ্য সি-গালের আনন্দ কোলাহল দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল মিশে যাওয়া, তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল বৃক্ষের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু পবনের কোমল ¯পর্শ উপভোগ করতে করতেই আমরা দুপুর প্রায় ১২ টায় দিকে সেন্টমার্টিন পৌঁছে যাই। হোটেলে পৌঁছেই দুপুরের খাওয়া এবং খানিকক্ষণ বিশ্রাম শেষে চলে যাই সমুদ্র সৈকতে। সৈকতে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই নীল জলের সফেদ ফেনার ঢেউ একে একে আছড়ে পড়ল আমাদের পায়ের কাছে। স্বচ্ছ নীল জল দেখে কোনমতেই গা ভিজানোর লোভ সামলাতে পারছিলাম না। মুহূর্তেই শুরু হয়ে গেল হৈ-হুল্লোড়, লাফালাফি-ঝাপাঝাপি আর দল বেঁধে সাতার কাটা। থেমে ছিল না বিচে সাইকেল দিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর ফুটবল খেলা। কিছুক্ষণের জন্য আমরা ফিরে গিয়েছিলাম ছেলেবেলার দুরন্তপনায়। রাতে সৈকতে রুপালি চাঁদের আলোকছটায় জমকালো বারবিকিউ পার্টির সঙ্গে জমে উঠে আড্ডা, গল্প, গান আর কবিতা। পরদিন সকালে সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ শেষে জেটিতে এসে ট্রলারে করে ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হই। মাথার উপরে ঘন নীলাকাশ আর চারদিকে স্বচ্ছ জলের নীল সাগরে ইঞ্জিনের বিকট শব্দে হেলেদুলে এগিয়ে চলছে আমাদের ট্রলার। ট্রলার থেকেই চোখে পড়ে প্রবালের প্রাচীর আর কেয়া গাছের বেষ্টনী ঘেরা ছেড়া দ্বীপ। জনমানবশূন্য ছেড়া দ্বীপে কেয়া বন ছাড়া বিশেষ কোন গাছ কিংবা প্রাণী চোখে পড়েনি। চারদিকে শুধু প্রবাল আর প্রবাল। ব্যাপক ঘোরাঘুরি আর সেলফিবাজি শেষে ক্লান্ত দেহকে প্রশান্ত করার জন্য চলে ডাব খাওয়া। উদ্দেশ্য এবার সেন্টমার্টিনে পুনরায় ফিরে যাওয়া। এ দিন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে পরেরদিন দারুচিনি দ¦ীপকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে কেনাকাটা এবং রাতের খাবার শেষে বেশকিছু সুখ স্মৃতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসি।
×