ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসন বণ্টন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে দুই বড় দল

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

আসন বণ্টন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে দুই বড় দল

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন বণ্টন ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দল বিএনপি উভয়ই চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশে প্রথমবারের মতো দুই বৃহৎ জোট সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে দুই বড় দলই। তাই আসন নিয়ে দরকাষাকষি তোড়জোড় চলছে বেশ। চলছে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব। দেন দরবার। তদবির। আর ক্ষমতার প্রভাব। ২০০১-১৪ সালের নির্বাচন জোটগতভাবে হলেও এবার উভয় দলেই জোট শরিকদের পরিধি বেড়েছে। যদিও এর আগেও জোটগত রাজনীতির ছিল। জোটের বহর বড় হওয়ায় এবারের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশও খুব কঠিন। কতটুকু শান্তিপূর্ণভাবে আসন বণ্টন নিশ্চিত সম্ভব হবে তাই এখন দেখার বিষয়। তবে সব দল ও জোটের অংশগ্রহণে এবারের নির্বাচন যে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা বারবারই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে উভয় জোটকেই প্রতি আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী দেয়া ছাড়া বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন হবে। এছাড়া একই জোটের হেভিওয়েট নেতাদের অনেকেই একই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে চান। এ নিয়েও মতবিরোধ আছে উভয় জোটের শীর্ষ নেতৃত্বে। জোট নির্ভর রাজনীতি হওয়ায় বড়-বড় দলের কাছে ছোট দলগুলোর কদর বেড়েছে অনেকে। তাই আসন বণ্টন ইস্যুতে ছোট ছোট দলও এবার কোন ছাড় দিতে নারাজ। অর্থাৎ শরিক প্রধান দলের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে তৎপর ছোট দলগুলোর নেতারা। চলছে পুরোদমে দরকষাকষি। আওয়ামী লীগসহ বড় দলের নেতারা বলছেন, জোট গঠন হলো আদর্শিক বিষয়। আসন বণ্টন ইস্যু বড় করে দেখা ঠিক হবে শরিক দলগুলোকে। এদিকে ১৪ দলের শরিকরা আসন বণ্টনের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হাতে ছেড়ে দিলেও কোন দল যেন এবার আসন থেকে বঞ্চিত না হয় এমন দাবি নেতাদের। তাছাড়া জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্টসহ অন্যান্য দল আওয়ামী লীগের কাছে ১৫০টির বেশি আসন চায়। বিএনপির কাছে বিশ দলীয় জোটের শরিকরা চায় প্রায় ২০শ’ আসন। ড. কামালে নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট চায় ১০০ আসন। তবে চাওয়া পাওয়ার ফয়সালা আসবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই। নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা বুঝতে পেরেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও। বুধবার গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে সাক্ষাত পর্বের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জরিপ চালিয়েছি। এর ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। কোন প্রার্থীর প্রতি ভোটারের সমর্থন আছে, সেটাই বিবেচনায় নেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জরিপে যারা এগিয়ে থাকবে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সেখানে ছোট নেতা, বড় নেতা দেখা হবে না। যাকে মনোনয়ন দেব তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নইলে বিপদ হবে। ক্ষমতায় আসছি মনে করে নিজেদের মধ্যে যে আসন খাওয়া-খাওয়ির মনোভাব তা পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রার্থী বিরোধিতা ও প্রার্থীর বিপক্ষে বিরোধিতা করা হলে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। একটা সিট হারাব কারও এমন মনোভাব পোষণ করা যাবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলের যারা ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে আছেন তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে না। গত দুই নির্বাচনে ক্ষমতায় এনেছি, এবারও আমিই ক্ষমতায় আনবো- এটা মনে করে কোন লাভ নেই। প্রার্থীর নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকতে হবে। জনসম্পৃক্ত হতে হবে বলেও যোগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আমরা এবারও জোটগত নির্বাচন করছি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শরিক দলগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৭০টি আসন ছাড় দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি ২৩০টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা লড়বেন। তিনি বলেন, এবার জোটের শরিক সংখ্যা বেশি। এ বিবেচনায় আসন বণ্টন তো কিছুটা চ্যালেঞ্জ হবে তা স্বাভাবিক। তবে আমরা মনে করি শরিক দলগুলোসহ আমাদের সবার মানসিকতা এমন থাকা উচিত যে, কতগুলো আসন দেয়া হলো সেটাকে বড় বিষয় হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। বড় বিষয় হলো ঐক্য। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাই মিলে এগিয়ে চলা। দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অনিশ্চয়তা আরও স্পষ্ট হয়। বাম ও কিছু ইসলামী দল বিএনপির সুরে কথা বলেছে। এছাড়াও গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডিসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিল। নানা নাটকীয়তা শেষে হঠাৎ করে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয় ১৩ অক্টোবর। গঠন করা হয় আরেকটি রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্ট। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও গণফোরামের নেতৃত্বাধীন জোট ঐক্যফ্রন্ট গত রবিবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। একই ঘোষণা আসে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীরির নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী দলগুলো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। সব মিলিয়ে সারাদেশে এখন জোটের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। তবে জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে কারা কত আসন পাবে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। চুলছেড়া বিশ্লেষণ। প্রধান শরিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ছোট দলগুলোর দেন দরবার অব্যাহত রয়েছে। তবে কোন জোটেরই আসন বণ্টন এখন পর্যন্ত ফয়সালা হয়নি। মহাজোট ॥ ২০০৮ সালে এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নেয়। অর্থাৎ এরশাদ মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসে। আসন্ন ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচকে কেন্দ্র করে আবারও গঠন হচ্ছে মহাজোট। অর্থাৎ ১৪ দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ৬০ দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোট। এছাড়াও বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন ৭৭ দলের জোট যুক্তফ্রন্টও আসছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আসছে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)। ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি, ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের খ-িত অংশ যারা ১৫টি ইসলামী দল নিয়ে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাম জোটকেও ১৪ দলে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাম নেতারা এতে সারা দেয়নি। জাপার চাওয়া ১০০ আসন ॥ সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৬ আসন পায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সংরক্ষিত নারী আসন মিলিয়ে ৪০ জন সংসদ সদস্য দলটির। তাই আসন্ন নির্বাচনে মহাজোটের অন্যতম শরিক ও দেশের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চায় জাপা। যদিও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে এরশাদ ৮০টি আসন ও নির্বাচিত হলে ১০ জন মন্ত্রী চেয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির কো-চেয়াম্যান জিএম কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চাইব। আশাকরি তারা আমাদের ফেরাবেন না। সম্মানজনক আসন বণ্টন হবে। জাতীয় পার্টির মুখপাত্র এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে তা চূড়ান্ত হবে বলেও জানান তিনি। আলোচনায় কত আসন ছাড় দেবে জাপা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তা ঠিক করবেন দলের চেয়ারম্যান। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, দু’একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন এরশাদ। ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অন্তত ৩০টি আসন নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির শীর্ষ নেতা নুরুর রহমান সেলিম বলেন, ইতোমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ১৪ দলের শরিকের আসন বণ্টনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাকে কোথায় দেয়া যায় তা তিনি বিবেচনা করবেন। অর্থাৎ যেখানে ১৪ দলের শরিক নেতাদের অবস্থান ভাল সেখানে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সেলিম বলেন, গতবারের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে অনেক দল কোন আসন পায়নি। আমাদের দাবি থাকবে এবার কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। সব শরিক দল থেকেই যেন আসন দেয়া হয়। তিনি বলেন, আগে তো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল শরিকদের জন্য ৭০টি আসন থাকবে। এখন শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টি, নাজমুল হুদার বিএনএ, যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন দল যুক্ত হচ্ছে। এই বিবেচনায় ১৪ দলের শরিকরা কত আসন পাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১৪ দলের শরিক নেতাদের মধ্যে যোগ্যতা থাকা সত্যেও যাদের মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হবে না তাদের অন্য জায়গায় পুনর্বাসন করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আসন বণ্টনের পর শরিকদের কতগুলো দেয়া হবে তা পরিষ্কার হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। বর্তমানে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সংরক্ষিত মিলিয়ে ১৭টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে জাসদের ৬, ওয়ার্কার্স পার্টির-৭, তরিকত ফেডারেশনের-২ ও জাতীয় পার্টি জেপির-২টি আসন রয়েছে। ১৪ দলের চাওয়া পাওয়া ॥ ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৫টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) ৩০টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) ১৮টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ২২টি, গণতন্ত্রী পার্টি ২৭টি, তরিকত ফেডারেশন ৩০টি, ন্যাপ ১০টি, গণতন্ত্রী মজদুর পার্টি দুটি, গণআজাদী লীগ পাঁচটি, বাসদ পাঁচটি ও সাম্যবাদী দল পাঁচটি আসন চাইবে। এদের কেউ কেউ জোট প্রধানকে তালিকাও দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, আমরা জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের কাছে ১৮টি আসন চেয়েছি। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাপ্যতা পাব। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আমাদের দলে শতাধিক যোগ্য, মুক্তিযোদ্ধা, এলাকায় সুপরিচিত ও দক্ষ প্রার্থী রয়েছেন। তবে জোট রাজনীতির কারণে আমরা জোটের কাছে ৩০টি আসনে জোর গুরুত্ব দেব। ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘বর্তমান সংসদে আমাদের দলের সাতজন এমপি রয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা দলের মনোনয়ন বোর্ড ৩৫ জনের শর্ট লিস্ট তৈরি করেছি। ১৪-১৫ তারিখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। জাতীয় পার্টি-জেপি থেকে ২২ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে ৪০টি আসন চাওয়া হতে পারে। ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট ॥ জোটের পরিধি বেড়েছে বিএনপিতেও। আগে ২০ দলীয় জোট থাকলেও এখন যুক্ত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির কাছে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের চাওয়া প্রায় ২০০ আসন। বাস্তবতা হলো শরিকদের মধ্যে ১২ দলের নিবন্ধন নেই। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টে পক্ষে গণফোরাম ৪৫, নাগরিক ঐক্য-১৫, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ-১০, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি-২৫টি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া-৫ আসন চাইবে। এছাড়াও ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন করাতে আগ্রহী কামাল হোসেন। তবে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, তারাও ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসন ছাড় দিতে পারে। সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কাছে জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী চায় অন্তত ৬০টি আসন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) ও খেলাফত মজলিস চায় অন্তত ৩০টি করে আসন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ১৫টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১০টি, বিজেপি ২টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এবং লেবার পার্টি চায় ৬টি করে আসন, বাংলাদেশ ন্যাপ ৫টি, এনডিপি ২টি, জাগপা ও এনপিপি চায় ৪টি করে আসন, ডেমোক্র্যাটিক লীগ ও ন্যাপ চায় (ভাসানী) ২টি করে আসন এবং সাম্যবাদী দল চায় ১টি আসন। জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপির কাছে শরিক দল হিসেবে কল্যাণ পার্টি ১০টি আসন চায়। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘তার দলে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি রয়েছেন। সেক্ষেত্রে এলডিপির ৩০টি আসন চাওয়া অযৌক্তিক কিছু নয়। জোটের রাজনীতি ॥ বাংলাদেশে জোটের রাজনীতির শুরু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক নির্বাচনী জয়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে মিল না হওয়ায় একসঙ্গে পথচলা হয়নি। ফ্রন্টের দুই প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ভেঙে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হয়। ষাটের দশকের শুরুতে ও শেষে বিরোধী রাজনীতিকেরা আরেকবার জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আইয়ুব শাহিকে হটাতে। সেই জোটও টিকেনি। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি মিলে গণতান্ত্রিক জোট গঠন করে। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতার ভাগিদার না হয়েও ঐক্য করেছিল ‘বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে।’ পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে-বাঙালী জাতীয়তাবাদী এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ধারায়। জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের আগেই জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন কয়েকটি কট্টর বাম ও কট্টর ডানপন্থী দল নিয়ে। পরে তারা একীভূত হয়ে যায় বিএনপি নামক দলে। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথমে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট, পরে ৯ দলীয় জোট গঠিত হয়। এরশাদের শাসনামলেও বিরোধী রাজনীতি দুই ধারায় প্রবাহিত হতো আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট। নব্বই পরবর্তী কোন দলই এককভাবে সরকার গঠন করতে পারেনি। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সরকার গঠন করতে হয় জামায়াতের সমর্থন নিয়ে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হয়। দলটি জাতীয় পার্টি ও জাসদের সহযোগিতায় সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে বিএনপি চার দলীয় জোট নিয়ে সরকারে আসে।
×