ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১১ নভেম্বর ২০১৮

শিল্পকলায় থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটকের শুরুতে গ্রামবাসীর সমবেত কণ্ঠের উচ্চারণ ‘মানুষ আসতে আছে যমুনার বানের লাহান...মানুষ আসতে আছে বাচ্চাকাচ্চা-বৌ-বিধবা বইন...কই যাই কি করি যে তার ঠিক নাই...বাচ্চার খিদার মুখে শুকনা দুধ দিয়া...খাড়া আছি খালি একজোড়া চক্ষু নিয়া। অভাবের তাড়নায় ক্লিষ্ট, বিপদে দিশেহারা কিন্তু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উন্নতশির সাধারণ মানুষের অবস্থা ও অবস্থান বুঝানোর প্রয়োজনে নির্মিত এইসব কথামালা সত্যিই অভিনব। থিয়েটার প্রযোজনা সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকটির ১৮৯তম প্রদর্শনী হয় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্ট থিয়েটার হলে শনিবার সন্ধ্যায়। আবদুল্লাহ আল মামুন নির্দেশিত এ নাটকের নব রূপায়ন করেছেন সুদীপ চক্রবর্তী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ নাটকে যে মানুষগুলো অল্প পেলেই খুশি, ভাত-মাছের জন্য যাদের সামান্য প্রত্যাশা, একটু নিরাপদ ঘুমের জন্য যাদের আকুতি, কোন উচ্চাশা কিংবা ন্যূনতম লোভ নেই, তাদের কপালে যদি নেমে আসে যুদ্ধ নামের বিভীষিকা, তাহলে কী যে বিপন্নতা তৈরি হয় চারিদিকে, নাট্যকার বোধ করি ওইরকম এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নীরবে সরব চোখের ভাষার অর্থ-তাৎপর্য ও অভিলক্ষ্য খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছেন। এই কাব্য নাট্যে সারিবদ্ধভাবে পাত্র-পাত্রী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে মাতবর, পীর সাহেব, মাতব্বরের মেয়ে, পাইক, গ্রামবাসী, তরুণদল এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ। তারা সকলে নিজের সামাজিক অবস্থান থেকে বক্তব্য ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সরল এবং সাহসী। গ্রামবাসী তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের জন্য তাদের মাতবরের কাছে উপস্থিত হয় দলে-দলে। গল্পটির সূচনা এখান থেকে। মুক্তিবাহিনীর ডাকে প্রেরণা লাভ করে যুবা-বৃদ্ধ ক্রমাগত যুদ্ধ জয়ের আশার খবর শোনে। পাকবাহিনীর পরাজয় এবং এক এক এলাকার মুক্ত হবার খবরও পায়। এতদিন তারা মাতবরের কথায় দেশবিরোধী (তখন তো দেশ ছিল পাকিস্তান) কাজে যোগ দেয়নি কিন্তু পরবর্তীতে মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখাতে চায় তারা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের শোষণের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ কায়েমের জন্য যুদ্ধের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন এবং সহযোগিতার বাস্তব পরিস্থিতি সাবলীল তুলে ধরা হয়েছে এ নাটকে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানপন্থীদের বিশ্বাসে ও আস্থায় এক সময় ফাটল ধরে। তারা চোখের সামনে দেখতে পায় মুক্তিকামী মানুষের জয়বারতার ইশারা। নাট্যনির্মাতা ও কবি সৈয়দ শামসুল হক ওই শব্দের আওয়াজ তার পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় গ্রন্থে ধারণ করেছের শিল্পীর অনুভবের উদারতায়। পাত্র-পাত্রীর সত্য উপলব্ধির মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ করেছেন। নাটকে বিবৃত সমাজের অধিপতি ও সুবিধাভোগী-পাকিস্তানপন্থী মাতব্বর যেন শুনতে পায় ওই ভাঙনের আওয়াজ।
×