ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডাইনোসর পার্কে টেরোসরসকে নিয়ে নতুন গবেষণা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৯ নভেম্বর ২০১৮

ডাইনোসর পার্কে টেরোসরসকে নিয়ে নতুন গবেষণা

জুরাসিক পার্ক চলচ্চিত্রের কল্যাণে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ডাইনোসরসহ অনেক প্রাণী সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা হয়েছে। তবে জার্মানির এক ডাইনোসর পার্কে বিশাল উড়ন্ত প্রজাতির যে কঙ্কাল শোভা পাচ্ছে, তা সত্যি বিস্ময়কর। প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের ডাইনোসরের বিশালাকার হাড়গুলো জোড়া দেয়া হচ্ছে। সেটা আসলে ছিল এক প্টেরোসর, উড়ন্ত প্রাণী। এখনও পর্যন্ত জানা এ ধরনের সবচেয়ে বড় আকারের প্রাণী। এই প্রথম জোড়া লাগানো গোটা কঙ্কাল চাক্ষুষ করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রোমানিয়ার জীবাশ্মবিদ মাটিয়াস ভ্রেমির এই চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছেন। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তিনি আবিষ্কারের পর প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। ভ্রেমির বলেন, ‘এটাই আসল আবিষ্কার। টেরোসরস সম্পর্কে আমরা যা জানতাম, তার তুলনায় এটা এত বড় যে, আমার মস্তিষ্ক প্রথমে তা মানতেই চায়নি, মনে হয়েছে এটা অসম্ভব।’ কিছুকাল আগে পর্যন্তও ভাবা যেত না যে, উড়ন্ত ডাইনোসরদের সর্বোচ্চ পরিধি ১০ মিটারের বেশি হতে পারে। অথচ এই প্রজাতির পরিধি ১৫ মিটারেরও বেশি! পরিধি বড় ট্রাকের মতো হওয়ায় মানুষ অনায়াসে তার পিঠে চড়ে উড়তে পারত। রোমানিয়ার ট্রানসিলভানিয়া অঞ্চলে ভ্রেমির ২০০৯ সালে সেই জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন। দূরবীনে পর্যবেক্ষণ করার সময়ে সেটি তাঁর চোখে পড়ে। খাড়া পাহাড়ের পাশে হাড়ের প্রান্তগুলো উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু সেই জীবাশ্ম অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা ছিল অত্যন্ত জটিল কাজ। রাইমুন্ড আলব্যার্টসডর্ফার নিজেও জীবাশ্মবিজ্ঞানী ও অভিজ্ঞ জীবাশ্ম সংগ্রহকারী। রোমানিয়ায় জীবাশ্ম উদ্ধারের সময়ে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, স্থলে বিচরণ করা স্বজাতিদের তুলনায় তাদের শরীর অনেক নাজুক ছিল। আলব্যার্টসডর্ফার বলেন, ‘হাড়ের সবচেয়ে বাইরের স্তর অত্যন্ত পাতলা। এমনকি হাড়ের মধ্যের উপকরণও ছিল হড়হড়ে। প্রায় ৯০ শতাংশই ছিল ফাঁপা। এভাবে কম ওজনের কারণে তাদের আকাশে ওড়ার ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি। হাড়গোড়ের হালকা গঠনের কারণেই সেটা সম্ভব হতো।’ মিউনিখ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আল্টম্যূলটাল ডাইনোসর পার্কে উড়ন্ত ডাইনোসরের পুনর্গঠিত কঙ্কাল প্রথমবার প্রদর্শিত হয়েছে। কিন্তু বিশাল এই উড়ন্ত প্রাণী কীভাবে জমির ওপর ঘোরাফেরা করত? ওড়ার ক্ষমতা পাখির মতো হলেও তারা সম্ভবত ৪ পায়ে হাঁটতেও পারত। সম্ভবত ডানার প্রতিটি প্রান্ত মুড়ে উপরের দিকে তুলে ধরত। কিন্তু কিভাবে তারা ডানা মেলে আকাশে উড়ে যেত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু বিজ্ঞানীর অনুমান, ওড়ার প্রস্তুতির জন্য এই প্রাণীর কোন খাড়া প্রাচীরের প্রয়োজন হতো। এটাও সম্ভব যে, খুব বড় আকারের প্রাণীরা আকাশে ওড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিত। এই আবিষ্কারের কল্যাণে বিজ্ঞানীরা গবেষণার অনেক নতুন দিশা পেয়েছেন। ডাইনোসর পার্কের দর্শকদের জন্য বিস্ময়ের আরেকটি উৎস যোগ হয়েছে। সূত্র : বিবিসি
×