ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন

সরকার শুধু রুটিনওয়ার্ক করতে পারবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৯ নভেম্বর ২০১৮

সরকার শুধু রুটিনওয়ার্ক করতে পারবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তফসিল হওয়া থেকে নির্বাচনকালীন ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। এখন থেকে সরকার কেবল তার রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনা করতে পারবে। কোন ধরনের সরকারী সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী কর্মকা- পরিচালনা করা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে তফসিল ঘোষণার পরই। একই সঙ্গে যেসব দল বা প্রার্থী এতদিন আগাম নির্বাচনী প্রচার পরিচালনা করেছে আজ থেকে তাও বন্ধ। তফসিল ঘোষণার পর থেকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদের আগাম প্রচারসামগ্রী সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে কোন প্রার্থী, দল নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারের জন্য প্রার্থী সময় পাবে মাত্র ২১ দিন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টিভি ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও দেন; একই সঙ্গে তফসিল ঘোষণার পর সকল রাজনৈতিক দল এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণবিধিমালা আজ থেকে মেনে চলার নির্দেশ দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছানো হয়েছে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এই বিধিমালা সরবরাহ করবে ইসি। আচরণবিধিমালা অনুযায়ী এখন থেকে সরকার কেবল তার রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনা করতে পারবে। নির্বাচনকালে সরকারী সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার, রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করা যাবে না। এ বিধিমালা প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার, সরকারের মন্ত্রী, চীফ হুইপ, ডেপুটি স্পীকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী, সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এ বিধিমালায় বলা হয়েছে সরকারী সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারী কর্মসূচীর সঙ্গে নির্বাচন কর্মসূচী যোগ করতে পারবেন না। সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার নিজের বা অন্যের পক্ষে প্রচারে সরকারী যান, প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারী সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। এছাড়া একই উদ্দেশে সরকারী আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়া আচরণবিধিমালায় কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় সরকারী উন্নয়ন কর্মসূচীতে কর্তৃত্ব করা কিংবা এ সংক্রান্ত সভায় যোগদান করতে পারবে না। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আগে পদত্ত মনোনয়ন হয়ে থাকলে নির্বাচনপূর্ব সময়ে তা অকার্যকর হবে। সরকারী সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনের দিন ভোটদান ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ কিংবা নিজে প্রার্থী না হলে গণনা কক্ষে প্রবেশ বা উপস্থিত থাকতে পারবে না। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে অতিগুরুত্বপূর্ণ সরকারী সুবিধাভোগী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনপূর্ব সময়ের মধ্যে কোন সফর বা নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবে না। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটার হলে কেবল ভোট দানের জন্য তিনি এলাকায় যেতে পারবেন। এছাড়া আচরণবিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচনপূর্ব সময়ে প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিল হতে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোন প্রকার অনুদান ঘোষণা বা অর্থছাড় করা যাবে না। বিধিমালার আওয়াধীন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যান্য সরকারী কর্মসূচীর সঙ্গে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী যোগ দিতে পারবে না। আগে এ বিষয়টি উপনির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হলেও এখন তা জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে। এছাড়া সরকারী বাড়ি, সার্কিট হাউসে থাকতে হলে বিধিমালা অনুযায়ী কেবল থাকা ও খাওয়াদাওয়া করতে পারবে। কিন্তু এসব জায়গায় কোন সভা বা রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে পারবে না। নির্বাচনী এ বিধিমালা লঙ্ঘন করা হলে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্বাচনপূর্ব সময় ছিল তিন মাস। বর্তমানে নির্বাচনের তফসিল ঘোষাণার পর থেকে গেজেট হওয়া পর্যন্ত সময়কে নির্বাচনকালীন হিসেবে ধরা হবে। এ সময়ে সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে। তারা কোন পলিসিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, যারা ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সমস্ত ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সরিয়ে ফেলতে হবে। না হলে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
×