ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দিনব্যাপী বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন

দক্ষতায় পিছিয়ে সরকারী ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৮ নভেম্বর ২০১৮

দক্ষতায় পিছিয়ে সরকারী ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দক্ষতার মানদ-ে দেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলো এগিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত (সরকারী) ব্যাংকগুলো। দেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলো দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) দু’দিনব্যাপী সপ্তম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন-১৮ (এবিসি-১৮) শুরু হয়েছে বুধবার। সেখানে এই তথ্য তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকগুলোর ঋণ, আমানত, বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও মানব সম্পদ পর্যালোচনা করে তথ্য পেয়েছে বিআইবিএম। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংক তুলনামূলকভাবে অন্য তিন ব্যাংকের থেকে এগিয়ে রয়েছে দক্ষতায়। দুই দিনব্যাপী এ বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার। বিআইবিএম গবর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এবারের বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে চারটি প্লানারি সেশনে ২২টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা এসব সেশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে। দুইদিনের সম্মেলনে দেশী-বিদেশী অংশগ্রহণকারী থাকছেন। ব্যাংকিং সম্মেলনে জার্নাল এবং মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে- যুক্তরাজ্যের সাইন প্রেস লিমিটেড, যমুনা টেলিভিশন, দৈনিক বণিক বার্তা, দ্য এশিয়ান এজ এবং নিউজ পোর্টাল অর্থখবর। অনলাইন পার্টনার আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড। ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে বিআইবিএম। এবার সপ্তম ব্যাংকিং সম্মেলন। প্রথম দিনের একটি সেশনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সেখানে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংকের দক্ষতা নিয়ে বলা হয়, কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক শতভাগ স্কোর অর্জন করতে পারেনি। জনতা ব্যাংকের পরে দক্ষতায় ভাল অবস্থানে রূপালী ব্যাংক। আর সবচেয়ে পিছিয়ে সোনালী ব্যাংক। তৃতীয় স্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলো দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে। উল্লেখিত সময়ে দেখা যায়, সাউথ ইস্ট ব্যাংক সবচেয়ে বেশি দক্ষ। এরপর রয়েছে এবি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। আর ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে। সরকারী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সর্ব্বোচ্চ পরিমাণ অদক্ষ, যার পরে অবস্থান করেছে বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ইসলামিক ব্যাংক। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকগুলো গড়ে ৯৬ ও ৮৯ শতাংশ প্রায়োগিকভাবে দক্ষ যথাক্রমে আমানত সচলতা ঋণ এবং অগ্রিম প্রদানের ক্ষেত্রে, যেখানে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলো গড়ে ৮৩ ও ৮৪ শতাংশ প্রায়েগিকভাবে দক্ষ। ভারতীয় ব্যাংকিং নিয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে সরকারী বেসরকারী ব্যাংক অনেক বেশি স্থিতিশীল তা বলা যাবে না। যদিও ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল। এশিয়া দেশগুলোর খেলাপী ঋণ নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপী ঋণ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশাল এক উদ্বেগ। বাংলাদেশ, চীন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের খেলাপী ঋণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে বাংলাদেশের খেলাপী ঋণ সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো যত ভাল করুক, নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসুক কিন্তু সুশাসন না থাকলে টিকে থাকতে পারবে না। সুশাসনকে আগামী দিনগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে বিশে^ ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়। অর্থনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। তাই আমাদের সামনে তাকাতে হবে। পেছনের আর্থিক সমস্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। এ সময় আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমাদের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে নানা নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোকে আমাদের সম্ভাবনা ও ঝুঁকির দিকগুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি ব্যাংকিং খাতের খেলাপী ঋণ, একক গ্রাহককে বড় আকারের ঋণ ২০১৭ সালে ব্যাংক খাতের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল বলে জানান।
×