ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাণ্ডারিয়ার ৭ রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৭ নভেম্বর ২০১৮

ভাণ্ডারিয়ার ৭ রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পিরোজপুরের ভা-ারিয়া থানার ৭ রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এই সাত রাজাকারের মধ্যে রয়েছে পিরোজপুরের ভা-ারিয়া থানার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নান (৭৫), আজাহার আলী হাওলাদার ওরফে আজু মুন্সী (৮৮), আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার (৬৭) এবং মোঃ মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ (৬৮)। এ মামলায় আরও ২ জন আসামি এখনও পলাতক থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা। একই এলাকার মোঃ ফজলুল হক হাওলাদার (৭৫) কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকাবস্থায় গত ৩০ অক্টোবর মারা যান। আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪ জনকে হত্যা, ১ জনকে ধর্ষণ, আসামিদের গুলিতে ৩ ব্যক্তি শরীরে এবং একজন মহিলার স্তন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি মঙ্গলবারই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ৬৬তম প্রতিবেদন। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানম-িতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম এ হান্নান খান এ তথ্য জানান। এ সময় আরেক সমন্বয়ক সানাউল হক উপস্থিত ছিলেন। এম এ হান্নান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পিরোজপুরের ভা-ারিয়া থানার ৭ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা বদরুল আলম এ তদন্ত শুরু করেন। এরপর ৬ নবেম্বর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত শেষে এ মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এসব আসামির প্রত্যেকেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। বর্তমানে তারা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থক। আসামিদের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ প্রথম অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভা-ারিয়া থানার ৩নং ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারি মল্লিক ওরফে ধুলাইড্যা, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতীশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও অনন্ত চাষীকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণপূর্বক গুলি চালিয়ে হত্যা করে এবং আনুমানিক ৪০/৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। একইসঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তৃতীয় অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্রকান্ত মিস্ত্রিকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০ টাকার বিনিময়ে আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পান। চতুর্থ অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর সদরের সরকারী বালক উচ্চবিদ্যালয়ে তৎকালীন স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভা-ারিয়া থানার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদারসহ ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে। এর মধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। আসামিদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরে এর মধ্যে দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
×