ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

রুমেল খান ॥ শিরোপা জয় সবসময়ই চিত্তসুখের। তার সঙ্গে যদি যোগ হয় প্রতিশোধও, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা হবে স্বর্গীয় সুখের কাছাকাছি। শনিবার নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে সেই সুখই যেন পেল বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ জাতীয় ফুটবল দল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে টাইব্রেকারে ৩-২ (১-১) গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায় সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের পঞ্চম আসরে। এটা তাদের দ্বিতীয় শিরোপা (প্রথমবার জিতেছিল ২০১৫ সালে, নিজেদের মাটিতে)। মজার ব্যাপার, সেবারও বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়েছিল টাইব্রেকারে জিতেই, ৪-২ (১-১) গোলে। এর ফলে ভারতের সমকক্ষতা অর্জন করলো তারা (২০১৩ ও ২০১৭ আসরের শিরোপাধারী)। রানার্সআপ পাকিরা জিতেছিল অপর শিরোপাটি। তারা সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১১ সালে। সেবার সেমিতে তাদের কাছেই ২-০ গোলে হেরেছিল লাল-সবুজরা। ছয় বছর পর তাদের ফাইনালে প্রতিশোধটা তাই বেশ কড়ায়-গ-ায়ই নিল তারা। আর শিরোপা পুনরুদ্ধার করার মিশনে সফল হলো পাক্কা দুই বছর পর। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে আজ দেশে ফিরছে কোটি দেশবাসীকে গর্বিত করা এবং আনন্দের বন্যায় ভাসানো বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। শনিবার তাদের এই স্মরণীয় সাফল্যে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসেসিয়েশনের (বিডিডিএফএ) সভাপতি আজম নাছির উদ্দীন ও মহাসচিব তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। এছাড়া আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্তরের ফুটবল সংগঠক, মনসুর স্পোর্টিং ক্লাবসহ অনেক সংগঠন। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, সাফজয়ী অনুর্ধ-১৫ দলকে খুব শীঘ্রই আর্থিক প্রণোদনাসহ সংবর্ধনা দেয়া হবে। গত আগস্টে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে শিরোপা খুইয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এবার একই টুর্নামেন্টে ঠিকই শিরোপা জিতলো বাংলাদেশের ছেলেরা। শনিবারের ফাইনালে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান। এই গোলরক্ষক টাইব্রেকারে পাকিস্তানের নেয়া তিনটি শটই অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিহত করে হৃদয় ভেঙ্গে দেয় পাকিদের। অথচ ম্যাচে মেহেদী নামে বদলি গোলরক্ষক হিসেবে, একেবারে শেষ মিনিটে। তাকে নামিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয় নিয়মিত গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে। কারণ আগের সেমির ম্যাচে মিতুল কার্ড নিষেধাজ্ঞার জন্য খেলতে না পারায় তার জায়গায় মেহেদীকেই খেলানো হয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ টাইব্রেকারে জেতে এবং মেহেদী ঠেকিয়ে দেয় দুটি শট। ফাইনালে মিতুল ফিরে আসায় মেহেদীকে আবারও ফিরে যেতে হয় সাইডবেঞ্চে। তবে কোচ মোস্তফা আনোয়ার পারভেজের পরিকল্পনায় ঠিকই ছিল মেহেদী। সেটা ছিল খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে ৯০ মিনিটের ঠিক আগেই মেহেদীকে বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হবে। কোচের এই পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবে রূপ দিয়ে মেহেদীতে রাঙালো বাংলাদেশের শিরোপা। মেহেদীকে এখন অনায়াসেই ‘টাইব্রেকার স্পেশালিস্ট’ বলা যেতেই পারে। টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দলীয় (১৩) গোল এবং ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলদাতারও (৪টি, নিহাত জামান উচ্ছাস) মালিক হয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার চ্যাম্পিয়ন হলেও সার্বিকভাবে খুব একটা ভাল খেলতে পারেনি তারা। এমনকি বাংলাদেশ ২৫ মিনিটে গোল করে যে এগিয়ে যায়, সেটাও তারা করেনি। বরং পাকিস্তানই আত্মঘাতী গোল করে বসে! তবে দ্বিতীয়ার্ধে এই লিড নিজেদের ভুলেই ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ৫৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে হজম করে বসে গোল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোন দলই গোল করতে পারেনি। ফলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে (বাইলজ অনুযায়ী কোন অতিরিক্ত সময় নয়, ম্যাচ সরাসরি গড়ায় টাইব্রেকারে)। যেখানে টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নেয় বাংলাদেশের রাজন হাওলাদার। তার শট চলে যায় বারের অনেক ওপর দিয়ে। তবে পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদ শাহের শট রুখে দেয় বাংলাদেশের বদলি গোলরক্ষক মেহেদী হাসান। এছাড়া টাইব্রেকারে বাংলাদেশের পক্ষে গোল করে তৌহিদুল ইসলাম হৃদয়, রোস্তম ইসলাম দুখু মিয়া এবং রাজা আনসারী। বাংলাদেশের অপর গোলটি মিস করে রবিউল আলম। তার শট আশ্রয় নেয় সরাসরি পাকিস্তানী গোলরক্ষকের হাতে। পাকিস্তানের পক্ষে গোল করে মহিব উল্লাহ এবং ওয়াসিফ। মিস করেন জুনায়েদ আহমেদ শাহ, আদনান এবং মুদাসসর নজর। তিনটি শটই ফিরিয়ে জয়ের নায়ক বনে যায় মেহেদী। জয়ের পর লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে দল বেঁধে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে উচ্ছাসরা। কোচ পারভেজকে শূন্যে ভাসিয়ে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ শ্লোগানে মুখরিত হয় পুরো দল। এ এক মধুর দৃশ্য, যা বারবার দেখতে চায় দেশবাসী। এই আসরটি শুরুতে ছিল অনুর্ধ-১৬ বছর বয়সীদের নিয়ে (২০১১ সালে)। সেটা অব্যাহত থাকে ২০১৩ এবং ২০১৫ আসরে। ২০১৭ আসর থেকে আসরটি পরিণত হয় অনুর্ধ-১৫ বছর বয়সীদের নিয়ে। মালদ্বীপকে ৯-০ গোলে, নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেমিতে ভারতকে টাইব্রেকারে ৪-২ (১-১) গোলে হারিয়ে নাম লেখায় ফাইনালে। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপে ভারতকে ২-১ গোলে, ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। সেমিতে স্বাগতিক নেপালকে ৪-০ গোলে হারিয়ে তারা ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে ওঠার আগে পাকিস্তানের সঙ্গে তিনটি ব্যাপারে মিল ছিল বাংলাদেশের। দু’দলই এ আসরে শিরোপা জেতে একবার করে। দু’দলই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারতকে হারিয়ে। এবার দু’দলই হারায় ভারতকে, পাকিস্তান জেতে গ্রুপপর্বে, বাংলাদেশ সেমিতে। সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দিয়েও জয় সেভাবে উদযাপন করেনি বাংলাদেশ দল। কারণ একটাই দলের সবার লক্ষ্য ফাইনাল জেতা। সেই লক্ষ্য পূরণে শতভাগ সফল টিম বাংলাদেশ। এখন আর বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে উঠতে নিশ্চয়ই আর বাধা নেই উচ্ছাসদের।
×