ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

নওগাঁয় টাকার বিনিময়ে মিলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 নওগাঁয় টাকার বিনিময়ে মিলছে  আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৬ অক্টোবর ॥ রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়নে ঘর দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা দিলেই মিলবে ঘর, এমনটা আশা করে ওই ইউনিয়নের অসহায় দরিদ্র মানুষ সুদের ওপর টাকা নিয়ে ঘর পাওয়ার আশায় ঘুষ দিয়েছে মেম্বারদের। আর এই ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে, মেম্বার দীনেশ, জাহিদ ও মহিলা মেম্বারের স্বামী মবকুলের বিরুদ্ধে। তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসহায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে। এমন অভিযোগ ওই ইউনিয়নে চাউর হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ‘জমি আছে ঘর নেই’ এই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে তৃণমূল স্তরের অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য বিনামূল্যে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প দিচ্ছে সরকার। আর এটাকেই পুঁজি বানিয়ে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা যোগসাজশে পারইল ইউনিয়নের অসহায় অতিদরিদ্র মানুষকে একটি করে ঘর দেয়ার নাম করে কারও কারও কাছ থেকে ৫ হাজার, ৮ হাজার, ১০ হাজার এমনকি তার বেশিও টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ১ থেকে দেড় মাস আগে অনেক অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারের লোকজন ঘর পাওয়ার আশায় মেম্বারদের টাকা দিয়েছে। পারইল সরদারপাড়া গ্রামের আরফানের ছেলে রহিদুল জানান, পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার দীনেশ আমাকে ঘর দেয়ার কথা বলে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি এখনও ঘর পাইনি। পারইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের যতীন্দ্রনাথ সাহার ছেলে দিবারন চন্দ্র সাহা (ব্যবসায়ী) জানান, মেম্বার দীনেশ আমাকে ঘর দেয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। পারইল গুচ্ছগ্রামের সায়েদ প্রামানিকের ছেলে আব্দুল আলীম জানান, মেম্বার দীনেশ আমাকে ঘর দেয়ার কথা বলে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে। ঘর দেয়ার নাম করে অসহায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করে পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার দীনেশ বলেন, আমি না সমন্বয় গোটা ইউনিয়ন। পারইল ইউনিয়ন পরষিদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান গোটা ইউনিয়ন এনজিওর মারফতে সমন্বয় করিয়েছে। আমি ১৫-১৬ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। কারও থেকে ৩ হাজার, ৪ হাজার, কারও থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছি তাদের নির্দেশে। তিনি বলেন, শুধু আমি না এই ইউনিয়নের সকল মেম্বাররা এই ঘরের নামে টাকা তুলছে। এছাড়াও পারইল গ্রামের খোরশেদের স্ত্রী পারভীন জানান, আমি গরিব অসহায় মানুষ। আমাকে ঘর দেয়ার নাম করে পারইল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহিদ আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। সেই টাকা আমি সুদের ওপর নিয়ে দিয়েছি। এখন সেই ৫ হাজার টাকার ৩ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়েছে। জাহিদ মেম্বার আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি সুদের ওপর নিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি এখনও ঘর পাইনি। ঘর দেয়ার নাম করে অসহায় অতিদরিদ্র পারভীনের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মেম্বার মোঃ জাহিদ বলেন, ঘর পাবে ভাই, ‘ওয়েট এ্যান্ড সি’। টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলে আচ্ছা আচ্ছা বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন তিনি। অপরদিকে, পারইল গ্রামের মহেন্দ্রনাথ প্রামানিকের ছেলে শ্রী সুরেশ জানান, পারইল ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফরিদার স্বামী মকবুল আমাকে ঘর দেয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নেয়। আমি এখনও ঘর পাইনি। পারইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের শ্রী চন্দন জানান, আমাকেও মহিলা মেম্বার ফরিদার স্বামী মকবুল ঘর দেয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে মহিলা মেম্বার ফরিদার সঙ্গে কথা বলা যায়নি, তবে তার স্বামী মকবুল ঘর দেয়ার নাম করে ঘুষ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। এ ব্যাপারে পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে ঘরের কোন সরকারী বরাদ্দ নেই। অন্যান্য ইউনিয়নে বাড়িঘর হচ্ছে। তাই এনজিও মাঠে নেমেছে। পারইল ইউনিয়নে কেউ কোন টাকা দেয়নি তাই এখানে কোন বরাদ্দ আসেনি। এই বরাদ্দ দিয়ে তারা মেম্বারদের সঙ্গে যোগসাজশে হয়ত কিছু টাকা তুলেছে। যদি কেউ কোন মেম্বারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে মেম্বারদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব।
×