ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসেই ফরাসী কোম্পানির কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ

কোন টিভি চ্যানেল এখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি চায়নি

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

কোন টিভি চ্যানেল এখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি চায়নি

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) কাছে এখন পর্যন্ত বেসরকারী কোন টিভি চ্যানেল ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে আবেদন করেনি। বিদেশী স্যাটেলাইটের সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। চুক্তি বাতিল করে দেশের স্যাটেলাইটের কাছে আসতে সময় লাগবে। এদিকে, স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া কোম্পানি এ মাসেই বিটিআরসির কাছে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রয়ণ হস্তান্তর করবে। বিটিআরসি আবার বিসিএসসিএলের কাছে স্যাটেলাইট হস্তান্তর করে দেবে এ মাসেই। এ কারণেই বিসিএসসিএল স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক বিপণনের কাজ শুরু করেছে। সরকারের একটি সংস্থা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে ফ্রিকোয়েন্সি নেয়ার চুক্তি করেছে। কিন্তু কোন টিভি স্টেশন ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে আবেদন করেনি। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহাজাহান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে গেছে। এ মাস থেকে বেসরকারী টেলিভিশনগুলো বাণিজ্যিকভাবে সেবা নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোন টেলিভিশন ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে আবেদন করেনি। তারা সিঙ্গাপুর ও হংকং ভিত্তিক স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। অনেকেরই ওই চুক্তির মেয়াদ দীর্ঘদিনের রয়েছে। দেশে মোট ৪৪ টিভির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৩২ টিভি অন এয়ারে রয়েছে। বাকি ১২ টিভি চালু হওয়ার অপেক্ষায়। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিপণন কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বেসরকারী টিভিগুলো ফ্রিকোয়েন্সির জন্য আবেদন করবে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানে আমাদের স্যাটেলাইটের বড় বাজার রয়েছে। অনেক দেশেরই কোন স্যাটেলাইট নেই। তাদের টেলিকম ও ক্যাবল টিভির জন্য আমাদের স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে। আমরা এখন থেকেই চেষ্টা করছি ওসব দেশে ‘মার্কেটিং’ করার। বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, বাণিজ্যিক বিপণনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের মধ্যে সেবা দিতে বিসিএসসিএলের সঙ্গে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। চুক্তির ফলে স্যাটেলাইট থেকে নৌযানে অত্যাধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। অল্প দিনের মধ্যে দেশের আরও কয়েকটি দফতরের সঙ্গে বিসিএসসিএলের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে বিসিএসসিএল যোগাযোগ করে যাচ্ছে। এসব দেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা খুব ভাগ্যবান। কারণ, পৃথিবীর যেসব দেশ যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে তারা কেউ এত সুন্দর সেবা পায়নি। উৎক্ষেপণের পরে কোন না কোন ত্রুটি ধরা পড়েছে। একমাত্র আমাদের স্যাটেলাইটের কোন ত্রুটি ধরা পড়েনি। এখন পর্যন্ত মহাকাশ থেকে গ্রাউন্ড স্টেশনে যে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে তা নির্ভুল। প্রথম সিগন্যালটিই ‘টেলিমেট্রি’ ছিল অসাধারণ। স্যাটেলাইটটি যখন ফ্যালকন-৯ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তখন এ ধরনের সিগন্যাল পাওয়া যায়। পৃথিবীর ৫৭ টি দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ। আমরা এখন স্যাটেলাইট মালিক দেশগুলোর সদস্যপদ লাভ করেছি। এটা যে কত গৌরবের তা টাকার অঙ্ক দিয়ে কেনা যাবে না। মন্ত্রী বলেন, স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে সর্বপ্রথম নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয়েছে। এজন্য আমরা সবচেয়ে বেশি গর্বিত। অভ্যন্তরীণ নৌপথে ও সাগরে যেসব নৌযান চলাচল করবে সেগুলোর অবস্থান, গতিবিধি এবং সার্বিক অবস্থা আমরা জানতে পারব স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে। পুরনো তিনটি লাইট হাউস আধুনিকায়নের সঙ্গে আরও সাতটি লাইট হাউস করছি। এখন আমরা বিদেশে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছি। আশা করি, এ বছরের মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তবে দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত কোন টিভি চ্যানেল আবেদন করেনি। তবে আমরা আশা করছি, টিভি চ্যানেলগুলো দ্রুত ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে আবেদন করবে। উল্লেখ্য, এ বছরের ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ২৩ মে স্যাটেলাইটটি এর জন্য নির্দিষ্ট জিওস্টেশনারি স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব অবস্থানে পৌঁছায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ইন অরবিট টেস্ট (আইওটি) সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে এর নেটওয়ার্ক একসেপটেন্স রিভিউ (এনএআর) চলছে।
×