ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনয়ের জন্য মনটা খুব কাঁদে -প্রবীর মিত্র

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১১ অক্টোবর ২০১৮

অভিনয়ের জন্য মনটা খুব কাঁদে -প্রবীর মিত্র

আনন্দকণ্ঠ : কেমন আছেন? প্রবীর মিত্র : ভাল নেই। দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে। দিনরাত বাসায় থাকি। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই লাঠিতে ভর করে। অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। বাসাবন্দী বাইরে বের হতে পারি না। বড্ড খারাপ লাগে। চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয়। আনন্দকণ্ঠ : বাসায় থেকে দিন কাটাতে কেমন লাগছে? প্রবীর মিত্র : লাগালাগি নাই। বাধ্য হয়েই বাসায় থাকতে হচ্ছে। উপায় নেই। এ ভাবেই দিন কাটাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এফডিসি যেতে খুব ইচ্ছে করে। যেতে পারি না হাঁটার সমস্যা। হাটলে পেইন হয়, কষ্ট হয়। এফডিসি আমার স্বপ্নের জায়গা। অনেক ভালবাসার জগত। এটাকে ভুলতে পারি না। ভাল হলে যাব ইচ্ছে আছে। আনন্দকণ্ঠ : অনেক দিন ধরেই অসুস্থ রয়েছেন। আপনার সহশিল্পীরা খোঁজখবর নেয়? প্রবীর মিত্র : যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। কে কার খবর রাখে? কেউর খবর রাখার সময় নেই। আমি কি কেউর খবর রাখতে পারি? কাকে দোষ দেব? নিচ্ছে না বলব না। কিছু মানুষ খোঁজখবর নেয়। আনন্দকণ্ঠ : অনেক অসুস্থ শিল্পীর পাশে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বা থাকেন। আপনার অসুস্থতার ব্যাপারটি জানিয়েছেন? প্রবীর মিত্র : না জানাই নাই। সে জানে কি-না তাও জানি না। আপনারা জানালে জানাতে পারেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিল্পবান্ধব। তার উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানাই। শিল্পী সংস্কৃতি মানুষদের কষ্টটা ফিল করেন তিনি। অসহায় শিল্পীদের পাশে এসে বরাবরই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আসছেন তিনি। এ জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। নিজ অর্থ দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। পরমুখাপেক্ষি হয়ে আছি। হোক না সে আমার ছেলে বা বউ মা। আমি তো কিছুই করতে পারি না। পরমুখাপেক্ষি হয়ে থাকা কঠিন ব্যাপার। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি নিজ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় আমার আপত্তি নেই। আনন্দকণ্ঠ : সর্বশেষ কবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন? প্রবীর মিত্র : মনে নেই। লাস্ট একটা ছবি করতে ছিলাম বৃদ্ধাশ্রম। তারপর আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারিনি। আনন্দকণ্ঠ : অনেক দিন থেকে অসুস্থ। শিল্পী সমিতি থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন? বা খোঁজখবর রাখে? প্রবীর মিত্র : হ্যাঁ খোঁজখবর রাখে। জেনারেল সেক্রেটারি বলেছে কোন অসুবিধা হলে আমাদের জানাবেন। আমি কেউ কে বিষয়টি জানাই নাই। কারণ কে কাকে নিয়ে ভাববে? সবাই তো ব্যস্ত সবাই তো যন্ত্রণার মধ্যে আছে। কেউ ভাল নেই। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে ইচ্ছে আছে আপন ভুবনে ফেরার। এটাই আমার পেশা। এটাই আমি জানি। এটার মধ্যেই আমার প্রাণ। আনন্দকণ্ঠ : অভিনয়ের জন্য কে অনুপ্রোরণা দিয়েছিল? প্রবীর মিত্র : অনুপ্রোরণা বুঝি না। অভিনয় ভাললাগত। নাটক করতাম। ভাললাগা থেকে ভালবাসা। এভাবেই পেশা হিসেবে নেয়া। আনন্দকণ্ঠ : ৭৮ বছর বয়সে অভিনয় জীবনের প্রাপ্তি- প্রবীর মিত্র : এগুলো হিসেব করতে ভাললাগে না। কি পাইনি, কি পাইছি এগুলো হিসাব করতে মন চায় না। অনেক কিছুই পাই নাই, আবার অনেক কিছুই পেয়েছি। আনন্দকণ্ঠ : এখনকার বেশিরভাগ শিল্পীদেরই তো মঞ্চের সঙ্গে উল্লেখ করার মতো যোগাযোগ নেই। প্রবীর মিত্র : এ জন্যই শিল্পী নেই। কারণ মঞ্চটা হচ্ছে প্রধান এবং প্রথম। এখান থেকে শিল্পী আসবে। এখানে অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়। মাসের মাস রিহার্সাল দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। শিল্পী তৈরি হবে মঞ্চ থেকে। সেটাকে উপেক্ষা করলে হবে না। আনন্দকণ্ঠ : অনেকেই বলা বলি করছে, ঢাকাই চলচ্চিত্রে সিনিয়ার শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে ভাবা হয় না। এর সত্যতা কতটুকু? প্রবীর মিত্র : সিনিয়ার শিল্পীদের নিয়ে ভাবা হয় কি-না তা জানি না। প্রয়োজন যদি হয় সেখানে না নিলে মনে কষ্ট পাই। যেখানে প্রয়োজন সেখানে নিতে হবে। সে যেই হোক। যেখানে যাকে দরকার সেখানে দিতে হবে। আনন্দকণ্ঠ : অনেকে প্রযোজনায় অন্য উদ্দেশ্য আসে... প্রবীর মিত্র : এগুলো সব জায়গায় আছে ভাল খারাপ। তবে এখানে একটু বেশি। গ্লামারের জায়গা তাই এখানে অনেকে আসে আনন্দ ফুর্তি করতে। এ রকম কিছু লোক আছে। এদের কে এবাউট করা উচিত। আনন্দকণ্ঠ : একজন বর্ষীয়ান অভিনেতা হিসেবে যদি বলতেন, আমাদের এই সময়ে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সঙ্কট কী? প্রবীর মিত্র : কেউই সিনসিয়ার না। কেউ সিনসিয়ারভাবে কাজ করতে আসে না। তারা আসে ফায়দা লুটতে। ফায়দা লুটে চলে যায়। এটা ঠিক না। খুব খারাপ। আগে অনেক সিনেমা হয়েছে। এবং সবাই সিনেমা হলে যেত। তাদের মুখে তখন ছিল সিনেমা হলে যাওয়া। সেটা থেকে যদি বিমুখ হয়ে যায় তাহলে আমরা হতভাগ্য। যে দর্শকদের আমরা হারাচ্ছি। দর্শকরা সিনেমা দেখতে চায় না হলে আসতে চায় না। আগে দর্শক হুমরি খেয়ে পড়ত সিনেমা দেখার জন্য। মাসের পর মাস হাউজফুল। সবাই ছবি দেখার জন্য অস্তির। সবাইকে হলমুখী করতে সিনসিয়ালি কাজ করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাজের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। তাহলে ভাল কিছু তৈরি হবে। মায়ের ভূমিকায় কাজল
×