ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির রায় প্রত্যাখ্যান ॥ ৭ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ অক্টোবর ২০১৮

বিএনপির রায় প্রত্যাখ্যান ॥ ৭ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে মন্তব্য করে এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইনীভাবে এটি মোকাবেলা করা হবে। এ রায়ের প্রতিবাদে ৭ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ১৩ অক্টোবর সারাদেশে ছাত্রদলের, ১৪ অক্টোবর সারাদেশে যুবদলের ও ১৫ অক্টোবর সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল। এ ছাড়া ১৬ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। আর ১৭ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশ মহিলা দলের মানববন্ধন ও ১৮ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে শ্রমিক দলের মানববন্ধন। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির দুর্ভাগ্য যে, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সরকার আদালতকে ব্যবহার করে আরেকটা ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যেমনটি করেছে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদ- দিয়ে। তিনি বলেন, দেশবাসী জানেন, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারই এ ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য মামলা দায়ের করে। স্থানীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এফবিআই ও ইন্টারপোলকে সম্পৃক্ত করা হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়ায় দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কথাই প্রমাণিতÑ যেদেশে প্রধান বিচারপতিই সুবিচার পান না সেদেশে কোন নাগরিকেরই সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে অন্যায়ের জবাব দেয়া হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সরকারই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছিল। এসব তদন্ত বা ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আন্দোলনের ফসল’ ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলের তদন্ত প্রতিবেদনের কোথাও তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এমনকি ওই সময়ে ১৬১ ধারা অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে দেয়া জবানবন্দীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। ৬২ সাক্ষীর কেউই তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি বা বিএনপির নামও উচ্চারণ করেননি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৯ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদাপন্ন করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে চাকরিতে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে এটাকে একটা রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করে। ফখরুল বলেন, বিএনপি সরকারের সময় অবসরে পাঠানো পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে প্রকাশ্যে সভা, সমাবেশ, মিছিল ও মিটিং করেছেন। পোস্টার-লিফলেটও বিলি করেছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা জেনেই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে। এই নতুন তদন্ত কর্মকর্তাই মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে নিয়ে সীমাহীন অত্যাচার করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে বানানো এক জবানবন্দীতে মুফতি হান্নানের স্বাক্ষর নিয়ে তারেক রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। পরবর্তী সময় মুফতি হান্নান আদালতে তার সেই জবানবন্দী প্রত্যাহার করে বলেন, তিনি তারেক রহমানকে চেনেন না। তার সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। আরও জানান, তাকে অত্যাচার করে এই মামলার জবানবন্দীতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ফখরুল বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্য কোন সাক্ষী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন কথা না বলায় ও মুফতি হান্নান তার জবানবন্দী প্রত্যাহার করায় এই মামলায় তারেক রহমানের কোন সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো যে, কোন নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।
×