অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্থিরতার প্রাথমিক নির্দেশক হচ্ছে মূলধন পর্যাপ্ততা। ব্যাংকের ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত ন্যূনতম ১১.৮১ শতাংশ রাখা প্রয়োজন। কিন্তু জুন পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত ১০ শতাংশ ছিল, যা পূর্ববর্তী কোয়ার্টারের ১০.১১ শতাংশের তুলনায় কম। আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিবার অনুষ্ঠিত ‘ইমপরটেন্স অব কমপ্লায়েন্স’ শীর্ষক আইসিসি কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
মন্দ ঋণ এমন একটা ইস্যু যা কিনা আটটি রাষ্ট্র পরিচালিত বাণিজ্যিক এবং বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের মূলধন পর্যাপ্ততাকে প্রভাবিত করেছে। শিল্প খাতের বড় কর্পোরেট ঋণ গ্রহীতারা মূলত রাষ্ট্রপরিচালিত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে বলে মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ অবদি সরকার সরকারী ব্যাংকসমূহকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ১৪,৫০৫ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ভিত্তির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের পরিমাণ ৭,৫২৭.৩০ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে মন্দ ঋণ হচ্ছে ৮০৩.০৭ বিলিয়ন বা ১০.৬৭ শতাংশ। এছাড়া যদি পুনর্নির্ধারিত ঋণ বিবেচনায় আনা হয় তাহলে অনাদায়কৃত ঋণের ১৭ শতাংশ মন্দ ঋণ হবে।
আইসিসি বাংলাদেশ সভাপতি বলেন, ঋণ খেলাপীদের শাস্তি প্রদান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে এখন পর্যন্ত তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ব্যাংকিং খাতের মন্দ ঋণ সমস্যার সমাধানকল্পে এ খাতের দুর্নীতির গভীরে যেতে হবে এবং ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ যাতে নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে মেনে চলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন আইসিসিবি সভাপতি। আইসিসি বাংলাদেশ ব্যাংকিং কমিশন চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এ. (রূমী) আলী তার বক্তৃতায় বলেন বাণিজ্য অর্থায়ন ঝুঁকির নন-কমপ্লায়েন্স বাংলাদেশের সার্বিক ঝুঁকির হারকে প্রভাবিত করছে। প্রকৃত অর্থে, বাংলাদেশে এটা আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য অর্থায়নের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুতরাং এ ধরনের কর্মশালা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর এবং পূবালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী দেশের ভিতরে এবং বাইরে অবিরত কর্মশালা বা ট্রেনিং আয়োজনের জন্য আইসিসি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। এ ধরনের প্রোগ্রাম ব্যাংকারদের তাদের সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় এবং অভিজ্ঞ আলোচকদের কাছ থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা বিশেষত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অর্থায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে জানার সুযোগ পায় অংশগ্রহণকারীরা। তিনি মত দেন যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক মানের এ ধরনের ট্রেনিংয়ের জন্য বাৎসরিক একটা এলোকেশন থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং কমপ্লায়েন্স আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো কাস্টমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনেরও একটি অংশ বলে তিনি উল্লেখ করেন। আইসিসি বাংলাদেশ সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমানও কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন সুধাকর সঞ্জীবি, সিনিয়র অফিসার, ইন্টারনাল কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট, রাক ব্যাংক, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ৩০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১০৩ জন কর্মশালায় অংশ নেন।