ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় জীবন্ত হচ্ছে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ অক্টোবর ২০১৮

  নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় জীবন্ত হচ্ছে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সনাতন বাঙালী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ক’দিন বাদেই। বছর ঘুরে আবার ব্যস্ত পালপাড়ার কারিগররা। এরই মধ্যে দিন গণনাও শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় ভক্তকুলে জেগেছে সাজ সাজ রব, বইছে খুশির জোয়ার। নগরীর পঞ্চবতি-আলুপট্টির পালবাড়িসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শিল্পীর নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে কাদামাটিতে গড়া প্রতিমায় ভরে উঠেছে ‘পালপাড়া’। আগামী ১৪ অক্টোবর দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে ছয় দিনের দুর্গোৎসব শুরু হবে। প্রতিমা গড়তে ব্যস্ত শিল্পীরা। চারদিকে ব্যস্ততার ছাপ। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে রূপায়ণের কাজ। রং আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিকৃতি। পালবাড়িতে ঘুম নেই কারো। মনের আনন্দে কাজের ছন্দে চলছে পার্বণের জোর প্রস্তুতি। মন্ডপে মন্ডপেও শুরু হয়েছে প্রতিমা সাজানোর কাজ। সাজানো হচ্ছে মন্ডপ। রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা গড়ার সঙ্গে জড়িত কার্তিক চন্দ্র পাল। সব পুজোরই প্রতিমা গড়েন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা হয় শারদীয় দুর্গোৎসবে। তার পঞ্চবতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি শেষ। মূলত প্রতিবছর রাজশাহী শহরে বেশিরভাগ পূজা মন্ডপই সেজে ওঠে পালবাড়ির প্রতিমায়। সে লক্ষ্যেই কাজ করেন এখানকার প্রতিমা শিল্পীরা। নিপুণ হাতে গড়ে তোলা প্রতিমার সাজসজ্জা শেষে দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গাকে তুলে দেয়া হয় বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ভক্তকুলের কাছে। প্রতিমা শিল্পী কার্তিক পাল জানান, বংশপরম্পরায় এ পেশায় তিনি। বাবা বাবু চন্দ্র পাল তার শৈল্পিক হাতে প্রতিমা গড়তেন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এগুলো দেখে দেখেই তার বেড়ে ওঠা। প্রতিমা গড়ার নেশা তাকে বইপত্রে মন বসতে দেয়নি। তাই, মাত্র দশ বছর থেকে দীক্ষা নেন বাবার কাছে। বাবার কাছেই শেখেন কাদামাটি আর কাঠ-খড় দিয়ে কিভাবে প্রতিমা গড়া হয়। কার্তিক জানান, ২৮ বছর থেকে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। তার কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিমার ক্যাটালগ আছে। তা দেখেই প্রতিমার অর্ডার দেন পূজামন্ডপের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। ক্যাটালগ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় প্রতিমা গড়েন তিনি। তিনি জানান, দুর্গাপূজা শুরুর কমপক্ষে দুই মাস আগে থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। পূজা শুরুর ২/৪ দিন আগে থেকে প্রতিমাগুলো ডেলিভারি হয়। তবে কেউ চাইলে এক সপ্তাহ আগেও নিয়ে যেতে পারেন। তার অধীনে বেশ কিছু কারিগর বর্তমানে কাজ করছেন। সবারই লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ শেষ করা। তবে মাটি ও উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্তিক পাল জানান, চারঘাটের সরদহ থেকে প্রতিমা তৈরির মাটি কিনতে হয়। মাটির চেয়ে পরিবহন খরচই বেশি। প্রতিমা সাজানো চুলের দামও বেড়েছে। রং, শাড়িসহ অন্যান্য সাজসজ্জার উপকরণ রয়েছে। এসব খরচ মিলিয়েই পারিশ্রমিক রেখে বিক্রি করেন প্রতিমা। কার্তিক পাল বলেন, এবার আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তারা প্রতিমা গড়তে শুরু করেছেন, অবকাঠামো ও প্রতিমার আকৃতি বানানোর কাজ শেষ হয়েছে আগেই। চূড়ান্ত রং লাগিয়ে পোশাকপরিচ্ছদে সুসজ্জিত করা হচ্ছে এখন। তারপর সময়মতো যাবে বিভিন্ন মন্ডপে। শুধু শিল্পী কার্তিক নয়, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার মন্ডপে মন্ডপে শুরু হয়েছে কাজকর্ম। অনেক মন্ডপেই বসে প্রতিমা তৈরিও করা হয়। রাজশাহী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অনিল সরকার জানান, আগামী ১৪ অক্টোবর দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে ছয় দিনের এই শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। ১৫ অক্টোবর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ১৬ অক্টোবর সপ্তমীবিহিত, ১৭ অক্টোবর দেবীর মহাঅষ্টমীবিহিত ও কুমারী পূজার সঙ্গে সন্ধিপূজা, ১৮ অক্টোবর নবমীবিহিত এবং ১৯ অক্টোবর মহাদশমীতে বিহিত পূজা, সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন এবং সন্ধ্যা আরত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালী হিন্দুদের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব শেষ হবে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘোষ বলেন, রাজশাহীতে এবার ৪৫৮ ম-পে দুর্গাপূজা হবে। এর মধ্যে মহানগরে মন্ডপের সংখ্যা ৯৭, অন্যত্র ৪৬১ টি। নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ ॥ আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নগরীর আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদারসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আরএমপির সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, এবার মহানগরীতে পূজামন্ডবের সংখ্যা ৯৭। এসব ম-পে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
×