ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিচিত্র নক্সার মন্ডপ সুদৃশ্য তোরণ, উৎসবের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ অক্টোবর ২০১৮

বিচিত্র নক্সার মন্ডপ সুদৃশ্য তোরণ, উৎসবের হাতছানি

মোরসালিন মিজান ॥ রবিবারের কথা। মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে ফার্মগেটের দিকে আসার সময় হঠাৎই চোখে পড়ল সুদৃশ্য তোরণ। প্রশস্ত রাস্তার ঠিক উপরে দুটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে কান্তজী মন্দিরের মোটিভ। দিনাজপুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের আদলে গড়া হয়েছে। অন্যটিতে বৈদ্যুতিক আলোর খেলা। উৎসবের রং। নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলে বুড়ো সকলেই চোখ মেলে তাকাচ্ছিলেন। দেখছিলেন। তোরণের নিচ দিয়ে সামনে এগোলে হাতের বাম পাশে মন্ডপ। সেখানে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। অবশ্য শুধু খামারবাড়ি এলাকায় নয়। শহর ঢাকার আরও অনেক রাস্তার উপর তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। চলছে মন্ডপ তৈরি ও সাজানো গোছানোর কাজ। দেখে বোঝা হয়ে যায়, আসছেন দুর্গতি নাশিনী। তাকে বরণ করে নিতেই এত আনন্দ আয়োজন। আজ সোমবার শুভ মহালয়া। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হবে। দুর্গোৎসব পাঁচদিনের হলেও, মহালয়া থেকেই শুরু। মহালয়া শব্দের মানে- আনন্দ নিকেতন। আজ নিজ নিজ আলয় মহময় বা আনন্দময় হয়ে ওঠবে বলেই বিশ্বাস করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আচারের ধারাবাহিকতায় ১৪ অক্টোবর দেবীর বোধন। ১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে মূল উৎসব শুরু হবে। ১৬ অক্টোবর সপ্তমী। ১৭ অক্টোবর অষ্টমী। ১৮ অক্টোবর নবমী। ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন শেষ হবে উৎসব। এ বছর সারাদেশে মোট ৩০ হাজার ২৫৪টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় পূজা হবে ২৩০টি মন্ডপে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। উৎসবপ্রিয়দের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বনানী পূজামন্ডপ। এখানে বিশাল খোলা মাঠে চোখ ধাঁধানো ম-প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলাবাগান মাঠেও বড় আয়োজন। এখানেও কাজ এগিয়ে চলেছে। রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রাজারবাগের শ্রীশ্রী গীতা সংঘ ঘুরে মনে হয়েছে, বিরাট উপলক্ষ সামনে। দিন রাত চলছে কাজ। তবে আলাদা করে বলতে হয় পুরান ঢাকার কথা। শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দটা এখানে অনেক বেশি প্রকাশিত। শাঁখারি বাজার ও তাঁতিবাজার ঘিরে কত যে কর্মকা- হচ্ছে! মনেই হয় না, পূজার বাকি আছে। ঐতিহ্যবাহী শাঁখারি বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় একাধিক তোরণ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। মাঝখানে এখন অনেকগুলো মন্ডপ। সরু গলি। অপ্রশস্ত সড়ক। তাতে কী, একটু পর পরই মন্ডপ। নিচ দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। উপরে বাঁশ দিয়ে গড়া মন্ডপের কাঠামো। সুবোধ নামের এক তরুণ মন্ডপ সাজানোর কাজ করতে করতেই বললেন, সাজানোর আসলে কোন শেষ নেই। ষষ্ঠীর আগের রাত পর্যন্ত আমরা কাজ করব। এত ছোট জায়গায় এত মন্ডপ। কেন? জানতে চাইলে আরেক কারিগর বেণু পাল বললেন, প্রতিমা বেশি হলে উৎসবটা ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে অনেকেই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা পূজার আয়োজন করে বলে জানান তিনি। তাঁতিবাজারেও বহুকাল ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাস। এখানেও চলছে বহুবিধ প্রস্তুতি। উৎসবের আগেই উৎসবের আমেজ। নর্থব্রুক হল রোড, মালাকার টোলার বিহারী লাল মন্দির, অভয় দাস লেনের ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, হাটখোলা জগবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ- সবখানেই একটা হুলস্থুল চোখে পড়ছে। প্রতিমার গায়ে তুলির শেষ আঁচড়টি দেয়া হচ্ছে। নতুন করে সাজানো হচ্ছে মন্দিরের ভেতর বাহির। অস্থায়ী মন্ডপের আশপাশের এলাকায় আলোক সজ্জা করা হচ্ছে। নর্থব্রুক হল রোডের প্রতিমা শিল্পী সুদীপ বললেন, এবার আমি ৮টি প্রতিমা গড়েছি। ইতোমধ্যে সেগুলো বিভিন্ন মন্ডপে স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে, বাদ্য বাজনা গান নাচ ইত্যাদিও শুরু হয়ে গেছে। শাঁখারি বাজার ও তাঁতিবাজারে বড় বড় সাউন্ড বক্স বসানো হয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামতেই গান বাজছে। হাসি আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এমন আয়োজন বলে জানা যায়। পূজার কেনাকাটাও মোটামুটি জমে উঠেছে। এখন ঢাকার যে কোন মার্কেট শপিংমলে প্রবেশ করলে উৎসবের আগমনী টের পাওয়া যায়। এই উৎসব আনন্দ নির্বিঘ্ন হোক সকলের তাই প্রত্যাশা।
×