ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু একাডেমিতে ৭ দিনের খেলনা মেলা উদ্বোধনকালে প্রতিমন্ত্রী

শিশু মায়ের কোলে যেমন নিরাপদ, তেমনি স্কুলেও নিরাপদ রাখতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৮ অক্টোবর ২০১৮

শিশু মায়ের কোলে যেমন নিরাপদ, তেমনি স্কুলেও নিরাপদ রাখতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিশুদের অধিকার রক্ষায় সারাদেশের শিশু ও কিশোরদের জন্য প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ ক্লাব গঠনের কাজ শুরু হবে। প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জনকে এক সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এতে ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও যৌতুক প্রতিরোধসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এছাড়াও দেশ এগিয়ে নিতে হলে সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুসহ সবশিশুকেই সম্পদে পরিণত করতে হবে বলে জানান তিনি। রবিবার সকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবসের কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শিশুদের নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ‘গড়তে শিশুর ভবিষ্যত, স্কুল হবে নিরাপদ’ এই প্রতিপাদ্যে উদ্বোধন করা হয় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১৮। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কিশোর-কিশোরী ক্লাব করে দিচ্ছি। যা নানা ভূমিকা রাখবে। এছাড়া সকল ক্লাবের সদস্যরা বিভিন্ন দিবস উদযাপন, খেলাধুলা, বই-ম্যাগাজিন, সঙ্গীত, আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, মুক্ত আলোচনা, কারাতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, শিশু যেমন মায়ের কোলে নিরাপদ, ঠিক স্কুলেও তাদের নিরাপদ রাখতে হবে। স্কুলে অত্যাচার চলবে না, তাদের ভালবাসতে হবে পাশাপাশি মানবিক আচরণও শেখাতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিশুরা কৌতূহলী। নানা বিষয়ে প্রশ্ন আমরা অনেক সময় বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলি ‘চুপ’ থাক। ‘এত প্রশ্ন কেন’, এই ধরনের আচরণ শিশুকে হতাশ করে। শিশুরা হীনম্মন্যতায় ভোগে, এতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাহত করে। আর শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুর ৮০ শতাংশ বিকাশ সাধিত হয়। তাই শিশুকে ধমক দেয়া, প্রহার করা কিংবা অপমান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। শিশুর প্রতিভার দিগন্তকে প্রসারিত করতে হবে। শিশুরাই আগামীর নেতৃত্ব দেবে। তাদের এগিয়ে নিতে হলে সব শিশুকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শিশু কিশোরদের শিক্ষায় উৎসাহিত করতে বছরের প্রথম দিন বিনা টাকায় নতুন বই দেয়া হয়। নতুন বইয়ের মলাটের গন্ধই আলাদা। অধিকার বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের নিরাপদ খাদ্যসহ সব শিশুকে খাদ্যে পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের যতœ নিতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিশুরা হলো আমাদের আগামী। আগামী দিনকে সমৃদ্ধ করতে হলে সুস্থ শিশুর বিকল্প নেই। সুস্থ শিশুর পূর্বশর্ত সুস্থ মা। আমাদের আগামীকে সুন্দর করতে হলে প্রতিটি নারীকে অর্থাৎ মাকে ভাল রাখতে হবে। তাদের যতœ নিতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম শিশুদের বলেন, তোমরা হবে উন্নত বাংলাদেশের কর্ণধার। তোমরা ভুল পথে পা বাড়াবে না। মাদকের সংস্পর্শে যাবে না। মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব লাইলা জেসমিন, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন সেকশনের প্রধান জন লিবি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। এছাড়াও শিশুদের পক্ষে দুজন শিশু সার্জিয়া নওশিন ও আদিব কিবরিয়া বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত আমাদের ছোট রাসেল সোনা ব্রেইল বই (দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য) ও সিডির মোড়ক উন্মোচন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। আলোচনা সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে ৭ দিনের খেলনা মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে মালদ্বীপ শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ে পারফর্ম করেন। এজন্য উপস্থিত অতিথিরা ধন্যবাদ জানান। এছাড়ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করবে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আগামী ৯ অক্টোবর সকাল দশটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল খেলার মাঠে পথশিশু সমাবেশ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলার উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে শিশু একাডেমিতে পথশিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। আর দুপুর বারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন হবে। ১০ অক্টোবর সকাল নয়টায় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে র‌্যালি বের করা হবে।
×