ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তির বারতায় উজ্জ্বল প্রশান্তর ক্যানভাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ অক্টোবর ২০১৮

শান্তির বারতায় উজ্জ্বল প্রশান্তর ক্যানভাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাক ধরেছে চুলে। প্রশান্তিমাখা মুখের চারপাশে ছড়িয়ে আছে কাশফুলের মতো শ্বেত-শুভ্র দাড়ি-গোঁফ। কপালে দৃশ্যমান রক্তিম তিলক। বয়সের রেখাটানা চেহারার মাঝে যেন বিশেষ ভাষা পেয়েছে নয়নজোড়া। হিমালয়ের পাদদেশে থাকা ওই সাধুর চোখে বর্ণিত হয়েছে শান্তির বারতা। সংসারত্যাগী মানুষটির চাওয়া শুধু একটাইÑ মানবতার পথে ধাবিত শান্তিময় সমাজ। এ্যাক্রিলিক মাধ্যমে ছবিটি এঁকেছেন প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ। প্রতিশ্রুতিশীল এই চিত্রকরের শান্তির সন্ধানী এমন অনেক চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে মহাখালীর ডিওএইচএসের গ্যালারি কসমসে। সেসব ছবি নিয়ে চলছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘শান্তি’। হিং¯্রতায় ধাবমান অস্থির সময়ে প্রশান্ত কর্মকারের প্রতিটি চিত্রপটেই রয়েছে আনন্দের হাতছানি। হিমালয়ের সাধু যেমন চোখের ভাষায় বলে যায় মানবিক কল্যাণের কথা, তেমনি মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির আশ্রয়ে নৃত্যশিল্পীর প্রতিকৃতিও হয়ে ওঠে শান্তির প্রতীক। বুক সেলফে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বই কিংবা পৃষ্ঠাখোলা গ্রন্থের ওপর নিবিষ্ট মুখাবয়বময় ছবিগুলো সেই প্রত্যাশাকেই মেলে ধরে উজ্জ্বলভাবে। একই মর্মবাণীতে প্রদর্শনালয়ের দেয়ালে ঝুলছে মুক্তিযুদ্ধনির্ভর একটি চিত্রকর্ম। শত্রুমুক্ত স্বাধীন দেশে হিং¯্রতাকে জয় করে শান্তি প্রতিষ্ঠার আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিসেনার দল। বিশৃঙ্খলা, নিষ্ঠুরতা ও হতাশাকে অতিক্রম করে শান্তিপূর্ণ কল্পলোকের কথা বলা এক শিল্পী প্রশান্তর কর্মকার। জাতীয়তার সীমানা অতিক্রম করে সুন্দর ও শান্তিময় পৃথিবীর প্রত্যাশায় দীপ্যমান তাঁর ক্যানভাস। বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের আকাক্সক্ষায় রাঙিয়ে যান চিত্রপট। এ প্রসঙ্গে শিল্পীর ভাষ্যটা এ রকমÑ হয়ত সাধারণ মানুষের কাছে আমার এই চাওয়াটা হতে পারে বোকার স্বপ্ন। কিন্তু অস্থিরতা আর উগ্রবাদে আক্রান্ত সময়ে আশা ছাড়া অর্থবহ হতে পারে না পৃথিবী। তাই আমার শিল্পিত পথরেখায় তীব্রভাবে প্রতিধ্বনিত শান্তির বাসনা। তিন সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদূত মেরি এ্যানিক বউরডিন। এ্যাক্রিলিক ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ৪২টি চিত্রকর্র্মে সজ্জিত প্রদর্শনীটি চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মুখরিত গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ নাটকের সঙ্গে নৃত্য-গীত আর কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে এখন মুখরিত শিল্পকলা একাডেমির আঙিনা। সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার দুটি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে নাটক। বিকেল থেকেই নাট্যশালার সামনের লবিতে ভেসে বেড়িয়েছে গানের সুর কিংবা কবিতার ছন্দ। এভাবেই বহুমাত্রিক আয়োজনে মুখরিত হয়েছে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদ আয়োজিত সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত ১১ দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। বিকেলে নাট্যশালার সামনের মুক্তমঞ্চে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশু সংগঠন হিসেবে পরিবেশনা উপস্থাপন করে তাল কালচারাল একাডেমি। পথনাটক পরিবেশন করে গতি থিয়েটার। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র ও ঢাকা স্বরকল্পন। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজের নৃত্যশিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম, রেজীনা ওয়ালী লীনা ও ফয়জুল্লাহ সাঈদ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন আরিফ রহমান ও নবনীতা জাঈদ চৌধুরী অনন্যা। বিষঘুম নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, সত্য গল্পের চেয়ে বিস্ময়কর। কখনও ভয়ঙ্কর। জীবন যখন মানুষকে কোন এক ভয়ঙ্কর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়, তার আঘাতে কারও জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে সত্য মেনে নিতে পারলে অন্ধকার পেরিয়ে দেখা দেয় আলোর দিশা। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন অরূপ রায়, অংশুমান দাশগুপ্ত, গৌতম সেনগুপ্ত, রূপক চন্দ্র, কৃষ্ণন্দু চক্রবর্তী, সৈকত মুখার্জী, সুচিত্রিতা ঘোষ, শুভ্রা বোস, পায়েল রায়, পিয়ালী চট্টোপাধ্যায় ও তপতী ভট্টাচার্য। ধর্মীয় অনুভূতিকে আবর্তিত করে এগিয়েছে মেরাজ ফকিরের মা নাটকের কাহিনী। জন্মের দীর্ঘ ৩৯ বছর পর আকস্মিকভাবে এক ব্যক্তি জানতে পারে তার গর্ভধারিণী মায়ের ধর্ম আর তার ধর্ম এক নয়। ধর্ম পরিচয়ে যে ফারাক রচিত হয় তা কি মা-ছেলের সম্পর্ককে ফারাক করে দিতে পারে? ধর্মের ভিন্নতার কারণে ছেলে কি অস্বীকার করতে পারে তার মাকে? এমনি সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এবং মানব পরিচয়ের স্বরূপ খোঁজা প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, ত্রপা মজুমদার, মজিবর রহমান জুয়েল, তানজুম আরা পল্লী, মারুফ কবির, সাইফ জোয়ারদার, আবদুল কাদের, তোফা হোসেন প্রমুখ। আজ রবিবার উৎসবের তৃতীয় দিন। এদিন বিকেলে উপস্থাপিত হবে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত মুক্তমঞ্চের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে পরিবেশিত হবে প্রাচ্যনাটের নাটক ‘এ ম্যান ফর অল সিজন্স’। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আরণ্যক নাট্যদল পরিবেশন করবে ‘দি জুবিলী হোটেল’ শিরোনামের নাটক। বিভাগীয় পর্যায়ে চলছে ‘শিল্পের শহর’ কর্মসূচী চলছে ॥ ‘ঢাকা হবে শিল্পের শহর, ঢাকা হবে বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক নগরী’ স্লেøাগানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হলো শিল্পের শহর ঢাকা কর্মসূচী। শুক্রবার শুরু হলো দুই দিনের কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। এদিন সকালে মিরপুর শেখ রাসেল শিশু উদ্যান এবং সন্ধ্যায় আগারগাঁও চতুর্থ উন্নয়ন মেলায় এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী উপস্থাপন করেছে কর্মসূচীর আয়োজন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক দল। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় শহরবাসীকে নির্মল ও রুচিশীল বিনোদন উপহার দিয়ে মানুষের মাঝে শিল্পের বোধ ছড়িয়ে দিতে ‘শিল্পের শহর ঢাকা’ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা শহরে বছরব্যাপী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা শহর সম্পর্কে সমাজে যেসব নেতিবাচক অভিব্যক্তি রয়েছে সেসব দূরীভূত করে ঢাকাকে শিল্পচর্চার নান্দনিক নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই এ কর্মসূচীর লক্ষ্য। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহরেরই নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। শহরগুলোর সেই সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যকে শহরবাসীর সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে ‘শিল্পের শহর’ কর্মসূচী বিভাগীয় শহরসমূহে সম্প্রসারিত হয়েছে। এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অক্টোবর মাসে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ১০টি করে সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাস্তবায়িত হচ্ছে। শিল্পী মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন শিল্পীর পারফর্মেন্স আর্ট পরিবেশনার মাধ্যমে গত ২৬ জুলাই শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘শিল্পের শহর ঢাকা’ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়।
×