ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি আন্দোলন নয়, সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৭ অক্টোবর ২০১৮

বিএনপি আন্দোলন নয়, সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে গোপনে নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি আন্দোলন নয়, বোমা-সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এসব করে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। নাশকতা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারাভিযানের ষষ্ঠতম দিন শনিবার রাজধানীর চকবাজারের আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা বাদ দিয়ে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ ও দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে। তাদের কাছে দেশ, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিরাপদ নয়। ‘এক মাসের মধ্যে দেশের চেহারা বদলে যাবে’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘উনি একজন বহুরূপী। কোন ঐশী বাণী থেকে তিনি এটা পেয়েছেন? মওদুদ আহমদের কি এক মাস শেষ হয়নি? বরং আপনারা দেখেন এক মাসে দেশের চেহারা নাকি বিএনপির চেহারা পরিবর্তন হয়। বিএনপি মওদুদ আহমদের পরামর্শ যত শুনবে তত ডুববে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে, মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় আনতে হবে। দেশ রক্ষায়, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। উন্নয়ন করতে হলে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প আছে? এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘না’, ‘না’ বলে তাঁর বক্তব্যেকে সমর্থন জানান। বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, তাদের আমলে পুরান ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই বিদ্যুত থাকত না। অপারেশন থিয়েটারেও লোডশেডিং থাকত। এখন সবাই বিদ্যুত পাচ্ছেন, সারাদেশ আজ আলোকিত। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই দেউলিয়া হয়ে গেছে। কেননা বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে আর জাতিসংঘ মহাসচিবের ভুয়া চিঠি দেখিয়ে বলে- জাতিসংঘ তাদের ডেকেছে। নিজ দলের চেয়ারপার্সনের মামলার রায়ের আগে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে দুর্নীতিবাজ ও দ-প্রাপ্ত আসামিকে নেতৃত্বে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। এসব কর্মকা-ই তাদের দেউয়ালিয়াপনা প্রকাশ করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা সরকারের দেউলিয়া হওয়ার কোন কারণ নেই। কেননা দেশের উন্নয়ন করে বিশ্বে মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছে সরকার। বাংলাদেশ এখন নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ। আওয়ামী লীগ ছোটখাটো কর্মসূচী দিলেই ব্যাপক জনসমাগম হয়। কিন্তু বিএনপির অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা ১০ বছর ধরে আন্দোলনের কথা বলে আসলেও এক ঘণ্টার জন্যও আন্দোলন করতে পারেনি। দলটির নেতারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে একে অপরকে সরকারের দালাল বলে গালাগালি করে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের সময়টুকুতেও তারা আন্দোলন করতে পারবে না। ঘরে শুয়ে শুয়ে হিন্দী সিরিয়াল দেখে। দেখতে দেখতে ১০ বছর। আন্দোলন হবে কোন বছর? ঘরে বসে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বাইরে পুলিশের গতিবিধির খবর নেয়- এই হলো তাদের সাংগঠনিক অবস্থা। তিনি বলেন, দেশে কোন অশান্তি নেই। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। তবে আমরা দেশে অশান্তি হতে দেব না। আর দেশের রাজনীতিতে কোন সঙ্কট নেই। তবে বিএনপিতে সঙ্কটে রয়েছে। তারা কোন সমাবেশ করলে নিজেরাই মারামারি করে আহত হয়। মনোনয়নের নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় কেউ লিপ্ত হলে তার খবর আছে মর্মে দলীয় নেতাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। তবে এটা নিয়ে কোন অসুস্থ রাজনীতিতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কোন দখলবাজ, চাঁদাবাজ আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকেট পাবেন না। এখন যারা মনোনয়ন দৌড়-ঝাঁপে আছেন তাদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে। কোন প্রকার অসুস্থ রাজনীতিতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলবে না। জনপ্রিয়তা যার বেশি আমরা তাকেই মনোনয়ন দেব। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, রাজনীতির মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করেছে বিএনপি। এর আগে মানবিক মূল্যবোধ ছিল, খালেদা জিয়া কোন বিপদে পড়লে চলে যেতেন শেখ হাসিনা। কুমিল্লার হাসপাতালে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাঁকে দেখতে গিয়েছেন। খালেদার সন্তান মারা যাওয়ায় দেখতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কি আচরণ করেছেন দেশবাসী জানে। তারাই রাজনীতির মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য পুরান ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে পুরান ঢাকা ঐতিহ্যকে ধারণ করে নতুন ঢাকায় পরিণত করা হবে। এ সময় তিনি পানি, বিদ্যুত, মোবাইল, ইন্টারনেট, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পাঠানো, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। পরে মন্ত্রী দলীয় নেতাদের নিয়ে চকবাজার মোড়ের বিভিন্ন মার্কেটে সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির জামায়াতের নাশকতার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করতে তৈরি দলীয় লিফলেট বিতরণ করেন। ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিক টিম শনিবার রাজধানীর বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ চালিয়ে নৌকা ভোট চেয়ে নগরবাসীর মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছেন। বিকেলে ইস্কাটন রোডে রমনা থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় নেত্রী মারুফা আক্তার পপিসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন এবং দোকানে দোকানে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।
×