ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামের জঙ্গীদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ অক্টোবর ২০১৮

আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামের জঙ্গীদের

শংকর কুমার দে ॥ চট্টগ্রাম আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়ার টার্গেট নিয়ে জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় এলাকার চৌধুরী ম্যানশনে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলেছিল জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ভবন গুঁড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি একে-২২ রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। যাতে আবারও বিদেশীদের কাছে আলোচনা আসে জেএমবি। আস্তানায় পাওয়া একে-২২ বোরের একটি রাইফেল, তিনটি পিস্তল ও পাঁচটি গ্রেনেডের সঙ্গে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ফের মাঠে নামানো হয়েছে জঙ্গীদের। সারাদেশে কিছুদিন ধরে জঙ্গী তৎপরতা নিষ্ক্রিয় থাকলেও নাশকতার উদ্দেশ্যে ফের চট্টগ্রামের আদালতকে টার্গেট করে চট্টগ্রামকে ঘিরে আস্তানা জঙ্গী গোষ্ঠী গড়ে তোলে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট র‌্যাব সূত্রে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম আদালত ভবনে বড় ধরনের একটি নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির। মহাসড়কের একেবারে পাশে হওয়ার দরুন পরিবহন যোগাযোগ তাদের জন্য বেশ সুবিধাজনক। এ জন্যই তারা চৌধুরী ম্যানশন নামের বাড়িটিতে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলে। গত দুই মাসে সারাদেশে র‌্যাব প্রায় ৩০ জনের মতো জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এসব জঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য নিয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান করে জানা যায়, চট্টগ্রামের একটি জেএমবির গ্রুপ সক্রিয়। এই জঙ্গী গ্রুপের কাছে রয়েছে বিপুল পরিমাণ মজুদ গোলাবারুদ। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই এ অভিযানটি চালানো হলে দুই জঙ্গী শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার পর তাদের লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সূত্রটি আরও বলছে, জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে মাঠে নামিয়ে নাশকতা, টার্গেট কিলিং, বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য সৃষ্টি করার ছক কষছে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি। এবার জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে যারা পর্দার অন্তরালে খেলছে, সেই খেলোয়াররা জঙ্গী তৎপরতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে হামলার টার্গেট যেমন বিস্তৃত হয়েছে, তেমনি ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস আছে কি নেই সেই বিতর্কের মধ্যেই জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে সংগঠিত করানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেও জঙ্গী তৎপরতা থামানো যাচ্ছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতেই এই পরিকল্পিত হামলা। গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার, রংপুরে জাপানী নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা, বগুড়ায় শিয়া মসজিদে নামাজের সময় হামলা চালিয়ে মুয়াজ্জিনকে হত্যাসহ বহু মামলার দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস। এছাড়া আশুরার মিছিলে বোমা হামলা, দিনাজপুরে ইতালীয় ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টাসহ চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যার সঙ্গে ‘জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’ বা জেএমবি জড়িত বলে দাবি করছে পুলিশ। জেএমবি জঙ্গী গোষ্ঠীর উত্থান ॥ ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ সেøাগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদী সংগঠনের গোড়াপত্তন হয় ১৯৯২ সালে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে (১৯৭৯-৮৯) বেশ কিছু মুজাহিদ আফগানদের পক্ষে যুদ্ধ করেছে যারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়ে মুজাহিদ দলে যোগ দিয়েছিল। তালেবানদের বিজয়ে উদ্বুদ্ধ আফগান ফেরত এই ব্যক্তিরাই জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ’ (হুজি) নামে একটি দল গঠনের ঘোষণা দেয়। এর দুই বছর পরে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বায়েজিদ খান পন্নি ওরফে সেলিম পন্নির নেতৃত্বে ‘কোমরে হাতুড়ি’ সংগঠন ‘হিজবুত তাওহীদ’ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৮ সালে হুজি থেকে বেরিয়ে এসে শায়খ আব্দুর রহমান জামালপুরে ‘জামা ’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’ গঠন করে। শায়খ আব্দুর রহমানের পরামর্শে সিদ্দিকুল ইসলাম ‘বাংলা ভাই’- এর নেতৃত্বে জেএমবির আরেকটি অংশ ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ’ (জেএমজিবি) গঠন করে। পরের বছর কাওসার হুসাইন সিদ্দিকী নামে একজন গড়ে তোলেন আরেকটি জঙ্গী সংগঠন শাহাদাত-ই আল হিকমা। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের অংশ হিসেবে ২০০১ সালে ‘হিযবুত তাহরীর’ ও ২০০৭-০৮ সালে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ (এবিটি) বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার সূচনা হয় ১৯৯৯ সালে। পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন ‘তেহরিক-ই আজাদি-এর অস্ত্র-বোমা তৈরিতে প্রশিক্ষিত শেখ রহমত উল্লাহ মাসুম ২০১২ সালে জেএমবিকে সংগঠিত করেন বলে জানা গেছে। জঙ্গী হামলার শিকার প্রগতিশীলরাই ॥ জঙ্গীরা প্রথম হামলা করেছিল কবি শামসুর রাহমানের ওপর। তবে সেবার মার্চে বড় আকারে প্রথম বোমা হামলা হয় যশোরে উদীচী সম্মেলনে। উদীচীর রেশ কাটতে না কাটতেই খুলনা শহরে আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা হয়। রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা হয় ২০০১ সালের শুরুতেই। তিন মাস পার না হতেই রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বাগেরহাটের মোল্লারহাটে খলিলুর রহমান ডিগ্রী কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে আরেক নির্বাচনী আলোচনা সভায় বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটানো হয়। মাত্র দুই দিন পরে সাতক্ষীরা শহরের একটি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে সার্কাসের প্যান্ডেলে বোমা হামলা হয়। ওই বছর বিজয়ের মাসের ময়মনসিংহ শহরে চারটি সিনেমা হলে (অজন্তা, ছায়াবাণী, অলকা ও পূরবী) দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর কয়েকটি বোমা হামলা হয়। এ হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গীবাদী হিসেবে লাইমলাইটে আসে জেমএমবি। ২০০৩ সালে সবচেয়ে বড় বোমা হামলা হয় জানুয়ারিতে। টাঙ্গাইলের সখীপুরের দরিয়াপুর গ্রামের ফালুচাঁন পাগলার মাজারে রাতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খুলনায় বাণিজ্যমেলায় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলা, খুলনায় এ্যাডভোকেট মঞ্জুর ইমামের ওপর বোমা নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ, খুলনা বাস টার্মিনালে একটি পরিবহনের গাড়িতে বোমা হামলা হয়। জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ॥ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ভয়াবহভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ২০০৪-০৫ সাল। বোমা ও গ্রেনেড হামলার কারণে শুধু ২০০৪ সালেই শতাধিক লোক প্রাণ হারায়। ২০০৪ সালটা শুরু হয় জানুয়ারিতে হযরত শাহজালাল (র) মাজার প্রাঙ্গণে দুই দফা বোমা হামলা দিয়ে। এ হামলায় বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী আহত হন ও প্রাণ হারায় সাতজন। জানুয়ারিতে নিহত হন সাংবাদিক মানিক সাহা, ফেব্রুয়ারিতে হামলা হয় হুমায়ুন আজাদের ওপর, জুনে হামলায় মারা যান সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু, জুলাইয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বোমা হামলায় ছয়জন রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। আগস্টে সিলেটে হোটেলে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণে ১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয় এবং ডিসেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ইউনুস আলীকে হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহীর বাগমারায় ও নওগাঁর আত্রাই-রানীনগর এলাকায় সর্বহারা দমনের নামে সিনেম্যাটিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলা ভাই’-এর জেএমবি। বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের পলাশী গ্রামে মোনায়েম হোসেন বাবুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ‘বাংলা ভাই’- এর তা-বলীলা শুরু হয়। আট-নয় মাসের মধ্যে একে একে সে ২৪ জনকে হত্যা করে এবং তিন শতাধিক লোকের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। যাত্রা-সংস্কৃতির সময়ে পরপর তিন মাসে তিনটি যাত্রা প্রদর্শনীতে বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত ও ২৬ জন আহত হয়। নবেম্বরে মৌলভীবাজার, ডিসেম্বরে গাইবান্ধা ও জানুয়ারিতে বগুড়ায় হয়েছিল এ তিনটি হামলা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- সিনেমা হলে, যাত্রামঞ্চে জেএমবির এসব হামলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে বোমা হামলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। সেটি হলো আদালতের এজলাস ও এনজিও প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা। লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি ও গাজীপুরে বিভিন্ন আদালতে হামলায় বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী, বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও কয়েকজন আইনজীবীসহ নিহত হয় ১৮ জন, আহত হন নব্বই জনেরও বেশি। এ বছরে দুই বার এনজিও ‘ব্র্যাক’ কার্যালয়ে হামলা হয়। গোপালগঞ্জ ও নওগাঁয় এ হামলায় আহত হয় পঞ্চাশ জনেরও বেশি। জঙ্গীদের বোমা আতঙ্ক ॥ ২০০৫ সালের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলা। এ দিনে জেএমবি ৬৩টি জেলার ৫১১টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায়। এতে ৩ জন নিহত ও ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়। সে বছরই হবিগঞ্জে বোমা হামলায় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত হয়, আহত হয় ৫০ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালবাসা দিবসের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় ৮ জন, গাজীপুর ডিসি অফিসে বোমা হামলায় নিহত হয় ১ জন ও আহত হয় ৪৮ জন। নেত্রকোনায় উদীচী ও শতদল শিল্পগোষ্ঠীর অফিসে বোমা হামলায় নিহত হয় ৮ জন ও আহত হয় ১০০ জন। ২০০৬ সালে সিলেটের টিলাগড় এলাকা থেকে হলিউড সিনেমার কায়দায় শায়খ রহমান (২ মার্চ), ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় (৬ মার্চ) বাংলা ভাই এবং ১৯ মার্চ ডেমরা থেকে খালেদ সাইফুল্লাহ গ্রেফতার হয়। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ২০০৭ সালে জেএমবি কর্তৃক ঝালকাঠির পাবলিক প্রসিকিউটর হায়দার হোসেনকে গুলি করে হত্যা এবং এর দুই বছর পরে গাজীপুরের পুলিশ সুপারের সম্মেলনে গ্রেনেড হামলা ছাড়া দীর্ঘদিন বড় ধরনের জঙ্গী নাশকতা দেখা যায়নি। তাই মানুষের মন থেকে জঙ্গীবাদ, বোমাতঙ্কও ধীরে ধীরে মুছতে থাকে। টার্গেট কিলিং ॥ ২০০৫ সালের পর ৮ বছরের ব্যবধানে আবারও বাংলাদেশে ২০১৩ সালে এবিটি, জেএমবি, হুজিদের হত্যা মিশনে নতুন সংযোজন হলো- নাস্তিকতার ব্যাখ্যায় ‘টার্গেট কিলিং’। একের পর এক তাদের হামলার শিকার হন আসিফ মহিউদ্দীন, রাজিব হায়দার, জগতজ্যোতী তালুকদার, সানাউল রহমান, আরিফ রায়হান দ্বীপ, উম্মুল মোমিনিন তৈয়ুবুর রহমান ও তার পুত্র, তন্ময় আহমেদ, জাকারিয়া বাবু ও পীর লুৎফর রহমান। এ ধরনের হামলা পরের বছরেও চলতে থাকে। এ বছর শিকার হন রাকিব, টিভি উপস্থাপক শেখ নুরুল ইসলাম ফারুকী, আশরাফুল ইসলাম এবং সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ‘টার্গেট কিলিং’ হয় ২০১৫ সালে। একে একে হামলার শিকার হন চট্টগ্রামে নার্সিং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা অঞ্জনা দেবী, ব্লগ সাইট মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাস, নীলয় নীল, শিক্ষক মানব চন্দ্র রায়, ইতালির নাগরিক তাবেলা, জাপানী নাগরিক হোসি কুনিও, আধ্যাত্মিক নেতা খিজির খান, প্রকাশক আরেফিন ফয়সাল দীপন, শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুল, বাহাই সেন্টারের ডিরেক্টর রুহুল আমিন এবং ইসকনের প্রেসিডেন্ট বীরেন্দ্র নাথ। আগের বছরের মতো হত্যার অস্ত্র হিসেবে ‘চাপাতি’ বহাল থাকল। তবে কয়েকটি হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে আইএস। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিয়া ও দ্বিতীয় বারের মতো আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। অক্টোবরে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলায় নিহত হয় একজন, আহত হয় অর্ধশতাধিক লোক। পরের মাসে বগুড়ায় শিয়া মসজিদে ঢুকে গুলি চালানো হলে মুয়াজ্জিন নিহত হন। রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। একই মাসে দিনাজপুরে রাসমেলার যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা বিস্ফোরণে ১০ জনেরও বেশি আহত হয়। সব হামলাতেই আইএস ও জেএমবি উভয়ই দায়িত্ব স্বীকার করে। ২০১৬ সালের শুরু থেকে একে একে যারা জঙ্গীবাদের শিকার হন তারা হলেন- পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে হিন্দু পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ, ঝিনাইদহে শিয়া ধর্ম প্রচারক আব্দুল রাজ্জাক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী, ‘রূপবান’ পত্রিকার সম্পাদক জুলহাস মান্নান, নাট্য ও সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের কর্মী মাহবুব তন্ময়, নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, রাজশাহীর তানোর উপজেলার ‘পীর সাহেব’ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বান্দরবানের বাইশারী ইউনিয়নে চাক পাড়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু মংশৈ উ চাক, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জুতা ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিক, নাটোরে খ্রীস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ, ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি, পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসংঘ সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পাড়ে, ঝিনাইদহে হিন্দু সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ও বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মংশৈনু মারমা। এসব হত্যাকা-ের কয়েকটিতে আনসার-আল-ইসলামের নাম এলেও অধিকাংশ হত্যার জন্য আইএস দায়িত্ব স্বীকার করে। জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার ॥ উদীচী, রমনা, একুশে আগস্টের সংঘবদ্ধ জঙ্গী হামলা, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার পরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ঘটনার নাম গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলা। এদেশে চোরাগোপ্তা, আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার ইতিহাস থাকলেও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের স্টাইলে জিম্মিকরণের মাধ্যমে এমন হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম। এই জিম্মি ঘটনায় ১৭ বিদেশীসহ (নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানী, ১ জন ভারতীয়) ২০ জন, ৫ জঙ্গী ও এক সন্দেহভাজন এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন নিহত হয়। এছাড়া ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পুরো জাতিকে আতঙ্কিত করা এ হামলার রেশ কাটতে না কাটতে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের কাছে বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশসহ নিহতের সংখ্যা চারজন। আহত হয় ১২ জন, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশের সদস্য। দেশে একের পর এক জঙ্গী হামলা শুরুর পর জঙ্গীবাদ দমন ও জঙ্গীদের ধরপাকড়ে তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধঘোষিত এসব জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে শাহাদাত-ই আল হিকমা, হুজি, জেএমজেবি, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর ও এবিটি অন্যতম। সোনাপাহাড় গ্রামের ৭ বছর আগের ঘটনা ॥ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় মহাসড়কের পাশের জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলে দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হয়েছে, ৭ বছর আগেই জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলায় হয়েছিল সেই সোনাপাহাড় গ্রামে। ২০১১ সাল থেকে কয়েক বছর সোনাপাহাড় গ্রামের বাড়ি বাড়ি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে জিহাদের ডাক দিয়ে আসছিলেন জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার শফিকুল ইসলাম ওরফে জাবেদ। ২০১৪ সাল পর্যন্ত কখনও প্রকাশ্যে কখনও গোপনে রাষ্ট্রবিরোধী ওই কাজে যোগ দিতে গ্রামের বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করছিলেন তিনি। মাদ্রাসা পড়ুয়া কয়েক যুবক তাতে আকৃষ্টও হয়। গ্রামের আবুল বশরের ছেলে রাসেল ওরফে মামুন, সেকান্দর বাদশার ছেলে হেলাল উদ্দিন ওরফে হেলাল, মনু মুন্সির ছেলে হারুনুর রশীদ ওরফে রুবেল, তোফাজ্জল হোসেন দুলালের ছেলে মিনহাজুল ইসলাম সাজিল ওরফে সাজিদ, ছবুর আলীর ছেলে শিবলুসহ কয়েকজন দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে রুবেল ও শিবলু পলাতক আছে। মামুন ও হেলাল ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর গাজীপুরে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে ‘নাশকতার প্রস্তুতিকালে’ র‌্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়। মিনহাজুল ইসলাম সাজিল ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে গ্রেফতার হয়। সে কারাগারে রয়েছে। সাজিলও বর্তমানে কারাগারে। সোনাহাড়া এলাকার যে সকল জঙ্গী জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছে। অনেকে জেলে আছে। আবার দু-একজন পলাতক রয়েছে। সোনাপাড়া গ্রামের চৌধুরী ম্যানশনে গড়ে তোলা জঙ্গী আস্তানায় নিহত জঙ্গীদের সঙ্গে স্থানীয় কোন জঙ্গী সদস্যের যোগসূত্র ছিল বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামকে ঘিরে জঙ্গী আস্তানা ॥ জঙ্গীর আস্তানা গড়ে তোলা, বোমা, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলে সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, নাশকতার প্রস্তুতি গ্রহণের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম শহরের বাইরে মহাসড়কের পাশে গ্রামীণ জনপদ ও পাহাড়ী এলাকাকে বেছে নিয়েছে জঙ্গী গোষ্ঠী। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে গ্রামের বেকার যুবক ও মাদ্রাসা ছাত্রদের সংগঠিত করে গোপনে দেয়া হচ্ছে জঙ্গী প্রশিক্ষণ। বিগত বছরগুলোতে জেলার হাটহাজারী, বাঁশখালী, সীতাকু-ও মীরসরাই উপজেলাসহ নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিটি জঙ্গী আস্তানাই ছিল পাহাড়ী এলাকা কিংবা নির্জন জনমানবশূন্য এলাকায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে একটি জঙ্গী আস্তানা থেকে আত্মঘাতী দুই পুরুষ জঙ্গীর ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার সময়ে শিক্ষিত অভিজাত ঘরের ছেলেদের জঙ্গী হওয়ার ঘটনার আগে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মূল টার্গেট বিভিন্ন মাদ্রাসার নিরীহ শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক। ধর্মীয় অপব্যাখ্যার আলোচনা, জিহাদী বই-পুস্তক পড়তে দেয়া, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিহত মুসলিম শিশুর ভিডিও দেখান, ভিডিওতে ইরাক, সিরিয়া, আরকান, ফিলিস্তিনী, আরাকানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখিয়ে উত্তেজিত করা, ওসামা বিন লাদেন, আইমান আল জাওয়াহিরি ও অন্যান্য জঙ্গী নেতার বক্তব্য এবং সাক্ষাতকার, বিভিন্ন জিহাদ বিষয়ক ভিডিও, বিভিন্ন দেশে জঙ্গীদের যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলার দৃশ্য দেখিয়ে ‘জিহাদে’ উজ্জীবিত করান হয়। জঙ্গী বানিয়ে তাদের প্রশিক্ষণে নেয়া, কিভাবে বিমান হাইজ্যাক করা হয়, কিভাবে কাউকে অপহরণ করতে হবে তার ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। জঙ্গী সদস্যদের প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দুর্গম পাহাড়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় হাতে কলমে প্রশিক্ষণের জন্য। আগ্নেয়াস্ত্র চালনা, গ্রেনেড-বোমা প্রস্তুত ও বিস্ফোরণ ঘটনান, আত্মঘাতী হওয়ার প্রশিক্ষণ শেষে লোকচক্ষকে ফাঁকি দিতে জনসমাগম কম হয় এমন গ্রাম এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়া, বাসা ভাড়া নিতে ছদ্মনাম ব্যবহার, দুর্গম চরাঞ্চল, পাহাড়ী এলাকায় জঙ্গী ঘাঁটি গড়ার সুবিধাজনক স্থান হিসেবেই চট্টগ্রামের পাহাড় ও পাহাড়ী এলাকাকে বেছে নিয়েছে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লটমনি পাহাড়ে শহিদ হামজা ব্রিগেড নামে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। গরু ও মুরগির খামারের আড়ালে সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলাত জঙ্গীরা। এরপর ২০১৭ সালের মার্চে সীতাকুন্ড উপজেলার কলেজ রোডে ছায়ানীড় নামের একটি বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। ওই অভিযানে চার সন্দেহভাজন জঙ্গী নিহত হওয়া ছাড়াও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মীরসরাই ও সীতাকু- উপজেলার ওপর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-চট্টতগ্রাম মহাসড়ক, রয়েছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত সুবিধাজনক, পাহাড়বেষ্টিত অঞ্চল। সাগরপথে পালিয়ে যাওয়ার সুবিধা, কলকারখানায় ছদ্মনামে চাকরি পাওয়ার সুযোগসহ নানাবিধ সুবিধায় উত্তরা-পূর্বাঞ্চল রাজশাহী-দিনাজপুরের পরিবর্তে এখন আবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকাগুলোকেই বেছে নিচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী। চট্টগ্রাম আদালতকে টার্গেট ॥ চট্টগ্রাম আদালতকে এর আগেও টার্গেট করেছে জঙ্গী গোষ্ঠী জেএমবি। ২০০৫ সালে সিজির বোমা হামলার সময়ে বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা, বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, গাজীপুর, চট্টগ্রাম আদালতে বোমা হামলা করেছে জঙ্গী গোষ্ঠী জেএমবি। ২০০৫ সালের ১৪ নবেম্বর জেএমবি জঙ্গীদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান ঝালকাঠির দুই বিচারক সোহেল আহমেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়ে। ওই দিন সকাল নয়টা নাগাদ নিজেদের সরকারী বাসভবন থেকে মাইক্রোবাসে করে জেলা জজ আদালতে যাচ্ছিলেন তারা। হামলা চালানো হয় সেই মাইক্রোবাসেই। ঘটনাস্থলেই মারা যান সোহেল আহমেদ। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান জগন্নাথবাবু। আহত অবস্থায় ধরা পড়ে হামলাকারী জেএমবি সদস্য ইফতেখার হাসান আল মামুন। তাকে জেরা করে বেরিয়ে আসে আরও অনেকের নাম। জঙ্গীদের ঝালকাঠিতে এনে জেলা জজ আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারকাজ চলে। ২০০৬ সালের ২৯ মে সাতজনকে ফাঁসির আদেশ দেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহমেদ। প্রাণদ-ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যায় আসামিরা। উচ্চ আদালতেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ছ’জনের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়। ফাঁসি হয় জেএমবি প্রধান আবদুর রহমানের। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, সামরিক শাখা প্রধান আতাউর রহমান সানি, উত্তরাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী আবদুল আউয়াল, দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী খালেদ সাইফুল্লাহ ও বোমা হামলাকারী ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়। আবারও জঙ্গী গোষ্ঠী চট্টগ্রাম আদালতে জঙ্গী হামলার টার্গেট করে জঙ্গী ঘাঁটি গড়ে তোলে চট্টগ্রামে। কিন্তু চট্টগ্রাম আদালতে জঙ্গী হামলার আগেই সোনাপাড়া গ্রামের জঙ্গী ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে দুই জঙ্গীর আত্মঘাতী হওয়ার মধ্য দিয়ে ভয়াবহ জঙ্গী হামলা থেকে বেঁচে যায় চট্টগ্রাম। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, হঠাৎ করেই চট্টগ্রামে জঙ্গী আস্তানায় হানা অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার গুলিতে জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনায় মনে হচ্ছে সারাদেশে আরও জঙ্গী আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকতে পারে। অন্ধকার ঘড়ে সাপ মনে হয় যেন সমস্ত ঘরেই যেন সাঁপ! তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে টার্গেট কিলিং, ভয়াবহ জঙ্গী হামলা, নাশকতাসহ জঙ্গী তৎপরতায় অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতির তৈরি করানোর বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করানো হচ্ছে, যা চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় মহাসড়কের পাশের জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় এলাকায় চৌধুরী ম্যানশনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার পর জঙ্গীবিরোধী অভিযানে দুই জঙ্গীর আত্মঘাতী ঘটনাটিই প্রমাণ বহন করছে।
×