ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সুইডেন নয় বাংলাদেশের মতো হতে চাই’

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 ‘সুইডেন নয় বাংলাদেশের  মতো হতে  চাই’

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের উন্নয়নের জন্য বেশি দূরে না তাকিয়ে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির খ্যাতিমান সাংবাদিক জয়গাম খান। সম্প্রতি পাকিস্তানের ক্যাপিটাল টেলিভিশনের টকশো ‘আওয়াম’ এ প্রবীণ এই সাংবাদিক নতুন প্রধানমন্ত্রীকে এই পরামর্শ দেন। ভারতের ইকোনমিক টাইমস ও ইন্ডিয়া টাইমসের বরাত দিয়ে শুক্রবার পাকিস্তানের দ্য নিউজ ডটকমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন ইমরানের তেহরিক-ই ইনসাফ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুইডেনকে অনুসরণ করার কথা ভাবছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনে জাতীয় ঋণ ও মূল্যস্ফীতির হার অনেক কম, পাশাপাশি দেশটির ব্যাংকিং খাতও বেশ শক্তিশালী। ওই টকশোতে সাংবাদিক জয়গাম খান সুইডেনের বদলে বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল অনুসরণ করতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পরামর্শ দেন। সম্প্রচারের পরপরই ওই টকশোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টকশোতে সাংবাদিক জয়গাম খান গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের দুর্বলতা তুলে ধরতে তিনি ঢাকা ও ইসলামাবাদ স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যেকার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। টকশোর অন্য আলোচকরাও বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জয়গাম খান বলেন, ব্যাপক দুর্নীতিসহ দেশের নানা সমস্যা সমাধানে ইমরান খান সক্ষম হলেও বাংলাদেশের কাতারে যেতে পাকিস্তানের অন্তত দশ বছর সময় লাগবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেখানে বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি করে, সেখানে পাকিস্তান করে ২২ বিলিয়ন ডলারের। ‘আমরা সুইডেনের মতো হতে চাই না, আমাদেরকে বাংলাদেশের মতো করে দিন,’ বলেন এই সাংবাদিক। তিনি আরও বলেন, ‘ইমরান খান যদি আগামী দশ বছরের মধ্যে আমাদেরকে বাংলাদেশের কাতারে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলেই আমরা খুশি, যেটা আসলে অসম্ভব।’ জয়গাম খানের এই পরামর্শকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতীয় পত্রিকাগুলো। বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল পাকিস্তান নিতে পারবে কিনা, ওই টকশোর পর এক সাংবাদিক শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে বাংলাদেশের প্রানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন নয়? তারা কোন সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই করব।’ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই এখন এগিয়ে বাংলাদেশ। জাতিসংঘও বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরই মধ্যে তিনটি শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসার যোগ্যতা অর্জন করেছে। শর্ত তিনটি হল-মোট জাতীয় আয়, মানব সম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে বাংলাদেশের যোগ্যতা ২০২১ ও ২০২৪ সালে আরও দুই দফা পর্যালোচনা করবে জাতিসংঘ। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে একটি দেশ কি বেশকিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এর একটি হল মাথাপিছু ১২৩০ ডলারে নিতে হবে। বাংলাদেশে যা এখন ১৬১০ ডলার। মানব সম্পদ সূচকে ন্যূনতম ৬৪ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৭২ আর অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫ দশমিক ২। এটি ৩৬ অতিক্রম করলে একটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে ধরা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লৈঙ্গিক সমতা অর্জন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতার কারণে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
×