ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৫ অক্টোবর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ হয়তো বা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না/বড় বড় লোকেদের ভিড়ে, জ্ঞানী আর গুণীদের আসরে/তোমাদের কথা কেউ কবে না/তবু হে বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা, তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না...। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কোনদিন শোধ হবে না। শোধ হওয়ার নয়। ইতিহাসের পাতায় জীবন বাজি রেখে লড়াই করা বীরদের নাম থাকবে। কিংবা থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালীর হৃদয়ে ঠিকই বেঁচে থাকবেন মুক্তিযোদ্ধারা। বেঁচে আছেনও। তবে পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসীরাও বসে নেই। সক্রিয় আছে বিভ্রান্ত প্রজন্ম। ইতিহাসটি তাই স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। সেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর সবকিছু উলটপালট হয়ে গিয়েছিল। মুখ থুবড়ে পড়েছিল একাত্তরের চেতনা। মুক্তিযোদ্ধারা নিজ পরিচয়ে কোথাও দাঁড়াতে পারেন নি। চরমভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। নতুন করে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাববে, তেমন সরকার ছিল না। এর কুফল হিসেবে যারা দেশ দিয়েছেন তারাই হয়ে যান করুণার পাত্র! এর বহু বহু কাল পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দায় স্বীকার করার সুযোগ লাভ করেন। সরকারে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্যোগ নেন তিনি। বাস্তব প্রয়োজনের নিরিখে জরুরী কিছু সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় বাস্তবায়ন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রজন্ম দাঁড়িয়ে গেছে মাথা তুলে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা, দীর্ঘকাল ধরে চলা উদাসিনতা, বিচ্যুতি, বিকৃতি তরুণ সমাজের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করেছে। স্বাধীন দেশে রাজাকারদের পুনরুত্থান দেখে উৎসাহিত হয়েছে সুবিধাবাদ। ব্যক্তিস্বার্থ। এখন লেখাপড়া জানা অনেক ছেলেমেয়ে বয়সের ভারে ন্যুব্জ মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে কথা বলছে! ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তারা বলতে চাইছে, মুক্তিযোদ্ধারা অনেক পেয়েছেন। যুদ্ধ করেছেন বলে কী দেশটা তারা কিনে নিয়েছেন? তাদের ছেলেমেয়ে নাতি নাতনীদের সরকার কেন দেখবে? এর চেয়ে চরম অকৃতজ্ঞতা আর কী হতে পারে? সরকারও কিছুটা যেন পিছু হটেছে! বৃহস্পতিবার প্রথমও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বাদ পড়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটাও। অথচ বাস্তবতা কী যে করুণ! এখনও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাদের সন্তানরা পথে পথে ঘুরছে। এ অবস্থায় সরকারের পিছু হটা মানে গুরু দায়িত্বকে অবহেলা করা। আর তাই প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। ঢাকার শাহবাগে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তারা। সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল ও প্রিলি থেকে কোটা সুবিধা বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন তারা। গত মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব অহিংসা দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একযোগে পালিত হয়। এবারও হয়েছে। বাংলাদেশে ছিল একাধিক আয়োজন। এদিন বিকেলে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বিশেষ নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ইউনিভার্সেল থিয়েটার মঞ্চস্থ করে তাদের বহুল আলোচিত নাটক ‘মহাত্মা ॥ অহিংসার পথে যাত্রা’। নাটকের নির্দেশনা দেন মাজহারুল হক পিন্টু। মূলত এই নাট্যায়োজনের মধ্যদিয়েই হিংসা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে, হানাহানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রচার করা হয় অহিংসার বাণী। ইতিহাসটি সকলের জানা, ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া, সন্দ্বীপসহ বেশ কিছু এলাকায় এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ। খবর পেয়ে সেখানে স্বদলবলে ছুটে যান মহাত্মা গান্ধী। ক্যাম্প স্থাপন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান তিনি। মানবতার বাণী প্রচার করেন। ঐতিহাসিক সেই পদযাত্রার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, মৌল বাণী প্রচার করে নাটকটি। মঞ্চায়ন শেষে বর্তমান বাস্তবতার আলোকে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পর্ষদের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকালে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে শরত উৎসবের আয়োজন করা হবে। শহর ঢাকার প্রকৃতিপ্রেমীদের উৎসবে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকরা।
×