ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র জাবি

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৪ অক্টোবর ২০১৮

দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র জাবি

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) যৌন হয়রানিকে কেন্দ্র করে আল-বেরুনী হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আল-বেরুনী হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এর মধ্যে ১০-১২ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে সাভারের একটি বেসরকারী হাসপাতলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় বুধবারের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ৩০ মিনিট বিলম্বিত হয়েছে। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় ৪৫তম আবর্তনের চার শিক্ষার্থী এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করে। পরে ওই নারী শিক্ষার্থী আল- বেরুনী হলের তার সহপাঠীদের ডেকে আনলে এ নিয়ে ওই চার শিক্ষার্থী এবং ওই নারী শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আল -বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা ওই চারজনকে মারধর করে। এতে মীর মশাররফ হোসেন হলের একজন গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত ১২টার দিকে দেবাশিস বিশ^াস (৪১ ব্যাচ), আজিম হুসাইন রতন (৪২ ব্যাচ), অনিক (৪২ ব্যাচ), রবিউল ইসলাম (৪২ ব্যাচ), লায়েব আলী (৪৩ ব্যাচ) নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী রামদা, পাইপ, রড, ক্ষুরসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল-বেরুনী হলে হামলা চালায়। পরে আল-বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা মীর মশাররফ হলের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় উভয় হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া গুরুতর আহত ১০-১২ জনকে সাভারের একটি বেসরকারী মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়।এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ও দ্রুত বিচারের দাবিতে সকাল ৭টার দিকে আল- বেরুনী হল সংলগ্ন জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করে রাখেন আল- বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা। এতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে প্রায় ৩০ মিনিট দেরি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আশ্বাসে তারা তালা খুলে দিলে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও প্রক্টরের প্রতি চার দফা দাবি জানান। বুধবারের মধ্যে হামলাকারী ও উত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না দিলে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তারা। তাদের দাবিসমূহ হচ্ছেÑ কোন প্রকার তদন্ত কমিটি ছাড়া বুধবারের মধ্যে হামলাকারীদের বিচার, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, অরক্ষিত আল- বেরুনী হলের চারপাশে দ্রুত প্রাচীর নির্মাণ করা এবং গতকাল রাতে চৌরঙ্গী এলাকায় এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ে জড়িতেদের দ্রুত বিচার করা। সংঘর্ষের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও আল- বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র আবু সাদাত সায়েম বলেন, ‘মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, পাইপ, রামদা, ক্ষুর, বোতল নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া বোতল, রামদা, ক্ষুরের আঘাতে আমাদের হলের ৪০ এর অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় তারা দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছে।’ এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘এটি ছাত্রলীগের কোন কোন্দল নয়, ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনসহ আমরা আলোচনায় বসব। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’ এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মোঃ জুলকারনাইন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে এমন ঘটনা আশা করি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
×