ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার নবান্ন উৎসবের সঙ্গে নির্বাচনী উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩ অক্টোবর ২০১৮

এবার নবান্ন উৎসবের সঙ্গে নির্বাচনী উৎসব

সমুদ্র হক ॥ আশা করা হচ্ছে, এবারের শীত মৌসুমেই যে নির্বাচন তা প্রায় নিশ্চিত। নির্বাচনীবাদ্য তো বেজে উঠেছেই এবারের নবান্নের উৎসবের সঙ্গে যোগ হবে নির্বাচনী উৎসব। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা জানিয়েছেন, অক্টোবর শেষে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তা হলে পরে মাঠ পর্যায়ে নবান্নের নানামুখী উৎসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে নির্বাচনী আনন্দঘন আয়োজন। যা উৎসবের বড় মাত্রা এনে দেবে। ইলেকশন ফিভারে কাঁপবে দেশ। সেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে। বগুড়া অঞ্চলের কয়েকটি এলাকা ঘুরে সাধারণের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়গুলো জানা গেল। এবারের নির্বাচনী দৃশ্যপট কেমন হবে তারও একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে এখনই। যমুনা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে গেলে এই সময়ে দৃষ্টিতে আসে ঢেউ বয়ে যাচ্ছে কত শান্ত ভাবে। শীত মৌসুমে ঊষারবি এই ঢেউয়ের ওপর পড়লে নিসর্গের ঝলক উছলে ওঠে। এ সময় নৌকার মাঝি মাল্লাদের বৈঠার আওয়াজ জানিয়ে দেয় বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্যের কথা। গত দশ বছরের উন্নয়নের ধারায় গ্রামগুলো অপরূপ হয়ে উঠেছে। সেদিনের দুঃখ বেদনাগুলোকে সরিয়ে দিয়ে মানুষ নৌকার পাল তুলে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। তারা খুঁজে পাচ্ছে তীর। এবারের নির্বাচন সেই তীরকে শক্ত কাঠামোর মধ্যে ধরে রাখার নির্বাচন। সাধারণ মানুষ তাই চায়। এবারের নির্বাচনেও একটি ব্যতিক্রমী চিত্র চোখে পড়ছে। তা হলো- নির্বাচনের মাঠে বসন্তের কোকিলের আবির্ভাব। প্রতিবার সাধারণ নির্বাচনের সময় দেখা যায়, নির্বাচনী আসনগুলোতে অচেনা মানুষের আগমন বেড়ে যায়। যারা গত ক’বছরে নির্বাচনী এলাকায় যান নাই, গ্রামের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, গ্রামের লোকের আপদে বিপদে পাশে থাকেননি, কারও রোগ ব্যাধি হলে সামান্যতম সাহায্য- সহযোগিতার হাত বাড়াননি তারাই দাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাদের সঙ্গে লেজুড় হিসেবে থাকে গ্রামের এক শ্রেণীর টাউট তরুণ। যাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনী-টুপাইস কামিয়ে নেয়া। এবারও এমন বসন্তের কোকিলের আগমন ঘটছে। তবে এবার তাদের নির্বাচনী আসর বসাতে কিছুটা বেগও পেতে হচ্ছে। প্রতিবার তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের সামনে যান সেগুলোর প্রায় বেশিরভাগই পূরণ হয়েছে। এই বসন্তের কোকিলরা গ্রামে গিয়ে কুহু কুহু ডাক দিতে গিয়ে নিজেরাও কিছুটা বিস্মিত হয়ে যাচ্ছেন। কারণ গ্রামের মানুষ এমন সুমধুর ডাক প্রতিনিয়ত শুনছে। আগে তারা যে গ্রামে গাড়ি হাঁকিয়ে যেতেন মাটির রাস্তায় এখন সেই পথ এখন পাকা। আগে তারা যে ফেরি পার হতেন এখন সেখানে ব্রিজ। সন্ধ্যায় যে গ্রামে জ¦লতো কুপি ও হারিকেন সেখানে এখন বিদ্যুতের আলো। যে গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ যায়নি সেই গ্রামের মানুষ আর বসে থাকেনি। নিজেরাই সোলার প্যানেল বসিয়ে আলো জ¦ালিয়েছে। গ্রামের দোকানগুলোতেও এখন টিস্যুপেপার, দামি পণ্য, বক্স আইসক্রিম, সফট ড্রিংকস ও উন্নতমানের খাবার পাওয়া যায়। বগুড়ার একজন প্রবাসী প্রতিবার সাধারণ নির্বাচনের সময় নগরীতে আসেন। কিছুদিন আগে তিনি বগুড়া এসে নগরীতে থেকে আদমদীঘি এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি ভাবতেও পারেননি তার দামী মোটরগাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে পারবে। পাকা পথ ধরে তিনি গ্রামে পৌঁছে দেখতে পান ভোটের আগে নির্বাচনী আশ^াস দেয়ার মতো কিছু নেই। উচ্চবিত্ত এই ব্যক্তি মহানগরীতে যা পান নিভৃত গ্রামেও এখন তা পাওয়া যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল কিছুই গ্রামে আছে। অবাক বিস্ময়ে কিছুটা সময় থাকার পর তিনি বুঝতে পারেন মনোনয়ন চাইলে এলাকার প্রকৃত নিবেদিতপ্রাণ নেতাই মনোনয়ন পাবেন। প্রতিটি এলাকায় গত দশ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- সাধারণের দৃষ্টিতে এসেছে। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর দশটি বিশেষ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তা চলমান। ঘরে ঘরে কতটা বিদ্যুত গিয়েছে তার একটি উদাহরণ বগুড়ার সোনাতলা এলাকা। যেখানে সরবরাহের বিদ্যুতে লোড শেড হলেও সড়ক বাতি (স্ট্রিট লাইট) নেভে না। গুরুত্বপূর্ণ ৮০টি পয়েন্টে সৌর (সোলার) বাতি বসেছে। সড়ক, বড় ব্রিজ, ফাঁকা জায়গা, হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসস্ট্যান্ড, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় সোলার বাতি রাতে এলাকাকে সর্বক্ষণিক আলোকিত করে রাখে। আগে কেউ ভাবেনি গ্রামেও এখন এভাবে বাতি থাকবে। এ ছাড়াও গ্রামের উচ্চ মধ্যবিত্তের ঘরে আইপিএস আছে। জোরগোছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রুস্তম আলী ম-ল বলেন, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে ৩৬টি সোলার লাইট বসেছে। পাকুল্লা ইউপির চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমানের কথা, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে গ্রামের সকল মানুষ। যমুনা তীরের এলাকা সারিয়াকান্দির কাজলা, কুতুবপুর ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চরগ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় অতিদরিদ্র ৩শ’ পরিবারে সিমেন্টের খুঁটির টিনের ঘর দেয়া হয়েছে। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না তাদের ঘর হয়েছে। এ ছাড়াও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবার দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচনে যারা বসন্তের কোকিল হয়ে আসেন উন্নয়ন দেখে তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এলাকায় গিয়ে তাদের আর বলার কিছু থাকছে না। এবারের নির্বাচনে বসন্তের এই কোকিলরা না পারছেন কুহু ডাক দিতে না পারছেন ভোল পাল্টাতে। তারা বুঝতে পেরেছেন এলাকায় সাধারণের মধ্যে উন্নয়ন করতে পারলেই কেবল ভোটাররা গ্রহণ করবে। তা না হলে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাদের কোন গতি নেই। এলাকার লোকজনও বলতে শুরু করেছেন- তারা এখন মানুষ চেনে। কে সুবিধা নেয়ার জন্য আসে আর কাজ করে তা তারা বুঝতে পারে। এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রার্থী বাছাইয়ে তারা সচেতন হবে।
×