ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াতের তৎপরতায় মার্কিন প্রশাসনে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জামায়াতের তৎপরতায় মার্কিন প্রশাসনে তোলপাড়

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ওয়াশিংটন থেকে পুরো নর্থ আমেরিকায় বিস্তৃত একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতের জঙ্গীবাদী নেটওয়ার্ক! আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন তালেবানের আদর্শে পরিচালিত এ উগ্রবাদী দলটি সরাসরি সম্পৃক্ত ভারতের অধিকাংশ ইসলামী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গেও। ধর্মীও মৌলবাদী চাঙ্গা রাখা এবং নিষ্ঠুর সহিংসতার সঙ্গে আজন্ম সম্পর্ক থাকা একটি জঙ্গীবাদী দলের নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বৈঠক হতে যাচ্ছেÑ এমন খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গণহত্যায় জড়িত জঙ্গীবাদী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন প্রশাসনকে শতর্ক করেছেন মার্কিন গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, মৌলবাদী ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গোপন বৈঠকে বসছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা সাবেক বিচারপতি সিনহার সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন বলেও তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। ‘বাংলাদেশের সাবেক এই বিচারপতির সঙ্গে জামায়াত নেতার গোপন ওই বৈঠক ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা যায়। তবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সম্ভাব্য ওই বৈঠকের খবর ছাপিয়ে এবার সামনে চলে এসেছে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাসহ সেখানকার আরও অনেক বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শ দাতাদের সঙ্গে জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বৈঠকের খবর। মার্কিন গণমাধ্যম ‘দি আমেরিকান স্পেক্টেটর’ জানিয়েছে, অক্টোবর মাসের ৯ থেকে ১২ তারিখের মধ্যেই ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবেন। এ সময় তিনি হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা, হাউজ কমিটির কর্মকর্তাসহ সেখানকার আরো অনেক বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শ দাতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। ‘ওয়াশিংটনে বাংলাদেশী ইসলামী মৌলবাদীরা’ এই শিরোনামে আভা শঙ্কর এবং স্যাম ওয়েস্টরোপ উদ্বেগ জানিয়ে সরকারকে সতর্ক করে লিখেছেন, ‘রাজনীতিবিদদের সঙ্গে একজন আইনজীবীর দেখা করা কোন চিন্তার কারণ নয়। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক একজন আইনজীবী হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামিক মৌলবাদী দল জামায়াত ইসলামের (জেআই) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। সেটাই দুশ্চিন্তার কারণ। হোয়াইট হাউস কর্মকর্তার কি জানেন, কার সঙ্গে তারা দেখা করছেন? ইনভেস্টিগেটিভ প্রজেক্ট অন টেরোরিস্টের সিনিয়র এ্যানালিস্ট আভা শঙ্কর এবং মিডেল ইস্ট ফোরামের প্রজেক্ট ইসলামিস্ট ওয়াচের ডিরেক্টর স্যাম ওয়েস্টরোপ তাদের লেখায় তুলে ধরেছেন একাত্তরেরর গণহত্যা এবং বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকাসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে জঙ্গীবাদে জামায়াতের সম্পৃক্তর তথ্য প্রমান। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যায় জামায়াতের সরাসরি সম্পৃক্তরার কথাও। আভা শঙ্কর এবং স্যাম ওয়েস্টরোপ লিখেছেন, ব্রিটিশ আমলে ১৯৪১ সালে ইসলামিক জঙ্গীবাদের অন্যতম প্রবক্তা আবুল আলা মওদুদীর হাত ধরে লাহোরে যাত্রা শুরু করে জামায়াত ইসলাম। সে সময় থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রতিটি দেশে নিজেদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে থাকে জামায়াত ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে বিশ্বের কাছে জামায়াত ইসলাম পরিচিতি লাভ করে ১৯৭১ সালে। এ সময় লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীকে হত্যায় পাকিস্তানি সেনাদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করে দলটি এবং নেতাকর্মীরা। এ সময় বাংলাদেশে মারা যায় ৩০ লাখ মানুষ। এ ছাড়াও এক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেয়া ভারতে। এরপর থেকে বিগত কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামী সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলাম। বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত অধিকাংশ ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত দলটি। জামায়াতে ইসলামের এই নেতারা প্রত্যক্ষভাবে তালেবানদের পক্ষে নিজেদের মত প্রকাশ করে আসছে এবং তালেবান নেতাদের মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদীন এবং পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামের (অস্ত্রধারী অংশ)কে ‘জঙ্গী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছে ‘দি আমেরিকান স্পেক্টেটর’। বলেছে, বিগত ১০ বছরে ১৯৭১ সালে সংগঠিত গণহত্যার কারণে জামায়াতে ইসলামের কয়েকজন নেতার বিচার করা হয়েছে বাংলাদেশে। মূলত ১৯৭১ সালে সরাসরি হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশ দাতাদের শাস্তি দেয়া হয়। এদের মধ্যে শাস্তিপ্রাপ্ত কয়েকজন জামায়াতে ইসলাম নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আর এই গণহত্যায় শাস্তি পাওয়া লোকগুলোর পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন এই আব্দুর রাজ্জাক। আমেরিকায় কিভাবে জামায়াতের নেটওয়ার্ক কাজ করছে তারও উত্তর পাওয়া যায় মার্কিন এ গণমাধ্যমের খবরে। বলা হয়েছে, নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জামায়াত ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট রয়েছে যা আমেরিকান মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে নিজেদের দাবি করে। এই ইনস্টিটিউট পরিচালনাকারীরা মূলত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে থাকা জামায়াতে ইসলামী দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে কথা ও আলোচনা করে। এই গোষ্ঠীটি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে আন্দোলন করে। এ ছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসিতে জামায়াতে ইসলামের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন তদবির এবং পাবলিক রিলেশন কাজ করে এই ইনস্টিটিউট। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান খান আমেরিকায় জামায়াতে ইসলামীর নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে যার নাম ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা (আইসএনএ)। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা থেকে জানা যায়, এই ব্যক্তি ১৯৭১ সালে হওয়া গণহত্যায় বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাদে বাংলাদেশীদের হত্যা করার জন্য এই দেশে তৈরি করা জামায়াতে ইসলামীর আল-বদর বাহিনীর প্রধান নির্বাহী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, আশরাফুজ্জামান ১৮ বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ এবং হত্যার দায়ে দোষী। এ মামলার রায়ের পরপর সিনিয়র প্রসিকিউটর এমকে রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা (আল বদর বাহিনী) বাংলাদেশের শীর্ষ অধ্যাপক, ডাক্তার ও সাংবাদিকদের অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে। তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে শেষ করে দিয়ে দেশকে মেধা শূন্য করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত আইসিএনএ এত কিছুর পরও জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখেনি। উল্টো জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা সরাসরি বলে প্রতিষ্ঠানটি। আইসিএনএ তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কট্টর ইসলাম পন্থার শিক্ষা দেয় যা মৌলবাদী গোষ্ঠী তৈরি করার লক্ষ্যে করা হয়। এ ছাড়াও দলটি তরুণদের জন্য তৈরি ইয়াং মুসলিম ওয়েবসাইটে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর বই প্রচার করে। কেবল তাই নয়, জামায়াতে ইসলামীর ভারতীয় শাখার নেতা ইউসুফ এলাহী আইসিএনএ কনভেনশনে বক্তব্য প্রদান করে এবং আইসিএনএ পরিচালিত প্রজেক্ট ‘হোয়াই ইসলাম’ এ প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে নাইন ইলাভেনে হওয়া বিমান হামলার জন্য ভারত ভিত্তিক এই জামায়াতে ইসলামীর শাখা ইহুদীদের দায়ী করে। তারা আলীগড়ে বক্তব্য প্রদান করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হওয়া এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেই দায়ী। আমেরিকার দম্ভের কারণে এ হামলা বলে তারা জানায়। আইসিএনএ আন্তর্জাতিক সহায়তা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যার নাম রিলিফ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (৫০১, সি, ৩)। আশ্চর্যজনকভাবে এই সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানটি চার কোটি ডলার সহায়তা সংগ্রহ করে ২০১৬ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সহায়তা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে আইসিএনএ এরপর তাদের কনফারেন্সের আয়োজন করে পাকিস্তানের ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। মজাদার বিষয় হলো এই ফাউন্ডেশনকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট সন্ত্রাসবাদী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেছে ২০১০ সালে। কেননা ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে হামলা করা লস্কর-ই-তৈয়েবাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়ে আসছিল ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশন। আইসএনএর চেয়ারম্যানের সহায়ক মহসিন আনসারি (সাবেক আইসিএনএ চেয়ারম্যান) সরাসরি নিজেকে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য বলে ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যায় অংশ নেয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ‘নায়ক’ বলে অ্যাখ্যা দেন তিনি। আনসারি জানান, এদের পাকিস্তান শত শত বছর স্মরণ করবে। ‘মুসলিম বিরোধী’ ও ‘ইহুদিদের মিডিয়ার প্রপাগান্ডার পরও নির্বাচনে ইসলামিক রাজনীতির জয়ের তিনি প্রশংসা করেন। ২০১৬ সালে আল-বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি প্রদান করলে আইসিএনএর পক্ষ থেকে তার নামাজের জানাজা করার আবেদন জানান আনসারি। তিনি নিজামীর প্রশংসা করে বলেন, তার ছেলে বাংলাদেশে আহত জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রে থেকে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আইসিএনএ। ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেটের বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত দুই নারী আইসিএনএ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কেন্দ্রে আসা যাওয়া করত। এখনও আইসিএনএর বিভিন্ন প্রচার সেই দুই নারীকে (ইতিবাচকভাবে) দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে কানেকটিকাটে আইসিএনএর কর্মকর্তা ফারিদ খান তার সঙ্গে আইসিএনএর সম্পৃক্ততা বিষয়ক মিথ্যা কথা বলে বিচার কক্ষে। এফবিআই দাবি করে, ফারিদ খান ওষুধ আমদানি-রফতানি ব্যবসার মাধ্যমে পাকিস্তানী জঙ্গীদের অর্থ সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও আইন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজ্জাকের দেখা করা জামায়াতে ইসলামীর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ বলেই বলছে মার্কিন এ গণমাধ্যম। বলা হয়েছে, তারা মার্কিন নীতিমালা প্রণয়নকারীদের সঙ্গে বসে জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে আলোচনা করবে এবং জানাবে দলটি কতটা স্বচ্ছ ও ভাল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দলটির দীর্ঘ সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিচালনার কথা অজানা থেকে যাবে এই নীতিমালা প্রণয়নকারীদের কাছে। কেননা তারা হয়ত কখনও জামায়াতে ইসলামী নামে একটা দল আছে, সেটাও ভাবেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে জামায়াতের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের তথ্যও এসেছে লেখায়। যেখানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে সিনিয়র জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ পাউন্ড প্রদান করে মার্কিন নীতিমালা নির্ধারণকারীদের তদবিরের জন্য। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে মার্কিন নীতি নির্ধারকদের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপনের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করায় এক কিশোরকে অপহরণ ও হত্যা করেন মীর কাশেম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জামায়াতের আস্তানার সন্ধানও দিয়েছে গণমাধ্যমটি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য জামায়াতে ঘাঁটি মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (এমইউএনএ)। মীর কাশেমের ভাই মীর মাসুম প্রতিষ্ঠানটি এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য। ২০১০ সালে এমইউএনএ এক পিকনিকের আয়োজন করে যেখানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। ২০১৩ সালে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে ১২০ নিরস্ত্র কৃষককে হত্যার দায়ে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়। জামায়াতকে ‘মৌলবাদী সংখ্যালঘুদের দল’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন এ গণমাধ্যম। মার্কিন প্রশাসনকে জামায়াত সম্পর্কে শতর্ক করে আন্তর্জাতিক দুই অপরাধ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তাদের লেখায় বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী আসলে মৌলবাদী সংখ্যালঘুদের আন্দোলন। দক্ষিণ এশিয়ায় তারা কখনই ভোটে বড় কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। ২০১১ সালে গালআপ পোলের প্রতিবেদন অনুসারে মাত্র ২ ভাগ মুসলিম মনে করে আইসিএনএ তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে। জামায়াতে ইসলামীর কোন ম্যান্ডেট নেই। ধর্মীয় মৌলবাদীকে চাঙ্গা রাখা এবং নিষ্ঠুর সহিংসতার সঙ্গে তাদের আজন্ম সম্পর্ক। তাই মার্কিন নীতি নির্ধারকদের এ দলটি পরিচালনায় অংশগ্রহণকারীদের অতিথি তালিকায় স্থান দেয়া উচিত হবে না। তাদের সন্ত্রাসীদের তালিকায় রাখা যেতে পারে।
×