ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডুবে যাচ্ছে খালেদার জোট-খড়কুটো ধরে ‘যুক্তফ্রন্ট গণফ্রন্ট’ ভাসতে পারবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডুবে যাচ্ছে খালেদার জোট-খড়কুটো ধরে ‘যুক্তফ্রন্ট গণফ্রন্ট’ ভাসতে পারবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নৌকার মুহূর্মুহু স্লোগানে কর্মী সমাবেশের নামে রাজধানীতে মানুষের ঢল নামিয়ে বিশাল শো-ডাউনের পর এবার অক্টোবরে দেশজুড়ে বিভাগীয় ও মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। কর্মী সমাবেশ থেকে দেশজুড়ে জোটের নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থেকে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারী ও আন্দোলনের নামে নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিয়ে ওদের প্রতিহতের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে জোটের নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার ২০ দল ডুবে যাচ্ছে, ওই খড়কুটো যুক্তফ্রন্ট-গণফ্রন্ট ওমুক ফ্রন্ট ধরে তারা ভেসে থাকতে পারবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমস্ত্র ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এদেশে আবারও গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হবে। পৃথিবীর কোন শক্তিই এই নির্বাচন বানচাল বা প্রতিহত করতে পারবে না। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘বিএনপির অব্যাহত মিথ্যাচার ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে’ ১৪ দল আয়োজিত কর্মী সমাবেশ থেকে জাতীয় নেতারা এ আহ্বান জানান। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী ৯ অক্টোবর রাজশাহী, ১০ অক্টোবর নাটোর এবং ১৩ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশ এবং অক্টোবরের যেকোন দিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করা হবে। নামে কর্মী সমাবেশ হলেও দুপুর দুইটার পর থেকে হাজার হাজার মানুষের মিছিলে মহানগর নাট্যমঞ্চ ছাপিয়ে উদ্যানসহ আশপাশের পুরো এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। ১৪ দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে কর্মী সমাবেশটি এক পর্যায়ে বিশাল সমাবেশে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নেতাকর্মীদের পদচারণায় অনুষ্ঠানটি এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আন্দোলনের নামে কেউ যাতে রেললাইন তুলে ফেলার সাহস না পায়, রাস্তাঘাট বন্ধ করতে না পারে সেজন্য সারাদেশে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করবে তাদের ধরিয়ে দিতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হবে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন মানুষ যদি নদীতে পড়ে যায় সে বাঁচার জন্য খড়কুটো যা পায় তা ধরে বাঁচতে চায়। খালেদা জিয়ার ২০ দল ডুবে যাচ্ছে, ওই খড়-কুটা যুক্তফ্রন্ট-গণফ্রন্ট ওমুক ফ্রন্ট ধরে আজকে তারা যুক্তফ্রন্ট করতে চায়। তারা আজকে অনেক বড় জোট করতে চায়। কিন্তু কোন জোটে কাজ হবে না। দেশে সবচেয়ে বড় জোট হচ্ছে মানুষের জোট। সেই জোট শেখ হাসিনার সঙ্গে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ১৬ কোটি মানুষ যে উন্নয়ন পেয়েছে, সে কারণে তাঁরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বই দেখতে চায়। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ওরা বলছে (বিএনপি) অক্টোবর থেকে নাকি মাঠে থাকবে। কিন্তু সেই অক্টোবর তাদের জীবনে আসবে না। ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সারাদেশের মাঠ গরম রাখব। আমরা যাতে সমাবেশ করতে না পারি ওরা সেজন্য চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আমরা হলাম বাঘের বাচ্চা। যত বাধা দেবে আমরা তত অগ্রসর হব। আজকে কর্মীসভা নয়, রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, চক্রান্ত শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ঘরে বসে থাকার সময় আর নেই, সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চক্রান্ত রুখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত পরিত্যক্ত-পলায়নকারীদের ভাড়া করছে। যাদের নীতি নেই, ঠিকানা নেই। ভাড়াটিয়া দিয়ে নির্বাচনী খেলায় জয়লাভ করা যায় না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিকল্প হচ্ছে গণতন্ত্র। কোন অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় আনার যারা চক্রান্ত করছে তাদের কালো হাত ভেঙ্গে দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতকে ছাড় দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সহযোগীরাই আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দাবি করে ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য, প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মাঠে নেমেছে একটি মহল। আজকে আমরা সমবেত হয়েছি এই মহানগর নাট্যমঞ্চে, কয়েকদিন আগে যারা হাতে হাত মিলিয়েছে তাদের জবাব দিতে। তিনি বলেন, ঐক্যের নামে এরা কারা ? এরাই ওয়ান-ইলেভেনের সেনাশাসিত সরকারের পরামর্শদাতা। বিভিন্ন দল থেকে বাদপড়া, বহিষ্কৃত নেতারা আজকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যে যুক্ত হয়েছেন। তারাই ওয়ান/ইলেভেন সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, আবার তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন যদি কিছু পায়। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা ঐক্য করেছে, কিন্তু কিসের ঐক্য? তারা বাঘ মারার ডর দেখাচ্ছে। এই কামাল হোসেন পল্টনে জেনারেল ওসমানির জনসভার আগের দিন দেশ থেকে পালিয়ে গেল। বি চৌধুরী বঙ্গভবন থেকে দৌঁড়ে মহাখালীর রেললাইনে পালালো। আর আরেক পালানোর নায়ক তারেক রহমান। যিনি অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে আছে। এটা পলায়নের চ্যাম্পিয়ানদের ঐক্য। আযম খানের গানে আছে, ‘বাঘ মারতে যামু, আমি আর মামু’। বাঘ মারতে যাওয়ার ডর আমাদের দেখিয়ে লাভ হবে না। সব ষড়যন্ত্র রুখেই দেশে সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে। জাতীয় পার্টি জেপি’র চেয়ারম্যান ও পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচনের বিকল্প কিছু হতেও পারে না। নির্বাচনের বিকল্প যা হয়, তাতে মানুষের কল্যাণ হয় না। যা ১/১১ সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করে সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে। জাসদ (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টাররা এক হয়ে রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত শুরু করেছেন। ড. কামাল, বি চৌধুরী, মান্নারা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছেন। ১৪ দলের নেতাকর্মীরা যে কোন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করবে। জাসদের (অপর অংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার বলেন, দেশের গণতন্ত্র স্বাধীনতার ওপর যখনই আঘাত এসেছে, তখনই ১৪ দল লড়াই করে তা রক্ষা করেছে। আগামীতেও জাতীয় ঐক্যের নামে যারা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে তাদের প্রতিহত করবে ১৪ দল। তিনি বলেন, বি চৌধুরী ও ড. কামালরা হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারী চক্র। নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করা হলে তাদের প্রতিহত করা হবে। জাতীয় ঐক্যের নেতাদের সমালোচনা করে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জাতীয় ঐক্যের নেতারা বসন্তের কোকিলের মতো। যখনই বসন্ত ভাব দেখেন, তখনই তারা কুহু কুহু ডাক দেন। ড. কামাল, বি চৌধুরীরা হচ্ছেন ১/১১ মাইনাস টু ফর্মুলার নায়ক। সে সময়ে ব্যর্থ হয়ে তারা আবার জোট গঠন করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে ঐক্য আছে, জাতি নেই। রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যাত কিছু নেতারা জোট গঠন করে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওরা নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ১৪ দলের নেতাকর্মীরা তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবেই। আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে হতাশাগ্রস্ত, রাজনীতিতে নিক্ষিপ্ত, জনবিচ্ছিন্নরা একত্রিত হয়ে জোট গঠন করে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া এবং পলাতক তারেক রহমানকে রক্ষা করতে চাইছেন। দেশে কোন সহায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারও দাবি মেনে নেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে কর্মী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের এসকে সিকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, পেশাজীবীদের মধ্যে অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বক্তব্য রাখেন। কর্মী সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
×