ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস মোকাবেলা ও শান্তি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সন্ত্রাস মোকাবেলা ও শান্তি

আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও সক্রিয় হতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল এসেম্বলি হলে অনুষ্ঠিত নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। একথা সত্য যে, বিশ্ব শান্তি এখনও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বহু মানুষ অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছে। জাতিগত সংঘাত, ভীতি এবং অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। বহু দেশে মানুষ বৈষম্যের শিকার। ধর্ম ও নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয়ের কারণে কাউকে কাউকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হচ্ছে কেউ কেউ। তাই ভবিষ্যত শান্তিপূর্ণ বিশ্ব নিশ্চিত করতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সকল বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বিদ্যমান সকল সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন, তাদের অস্ত্র সরবরাহের উৎস বন্ধ এবং তাদের আশ্রয় দান বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা, রাজনৈতিক নেতা এবং মানবহিতৈষী নেলসন ম্যান্ডেলার ১শ’তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের অনেক স্থানে মানুষের জীবন রক্ষা করছে। দুই দশক আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ শান্তি প্রস্তাবের সংস্কৃতি চালু করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, আমরা সংঘাত প্রতিরোধ, উন্নয়ন ও মানবাধিকার উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় সৈন্য সরবরাহকারী রাষ্ট্র। জাতিসংঘসহ বিশ্বের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এক গর্বিত অংশীদার। বিশ্বের ৪০টি দেশে ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর বহু সদস্য কাজ করছে। তাদের মধ্যে নারী সৈন্যও রয়েছেন। যারা ওইসব অঞ্চলে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে। এই শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রূপকল্প আমাদের সবাইকে পথ দেখিয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মানুষের নেতা হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পরে তার আত্মত্যাগ, উৎসর্গ, মানুষের জন্য সহানুভূতি তাকে মানবতা শান্তি, স্বাধীনতা ও ঐক্যের নেতায় পরিণত করেছে। এই প্রসঙ্গে বলতে হয়, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আমাদের শোষণ নির্যাতন থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের বড় অংশ কারাগারে কাটিয়েছেন। শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে-‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। বিশ্বের বিরোধপূর্ণ স্থানে জাতিসংঘের ডাকে শান্তি স্থাপন করা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জরুরী দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে। জাতিসংঘকে শান্তি স্থাপনে সহায়তা দেয়া এবং পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সুশিক্ষিত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী থাকাটা অন্যতম শর্ত। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ, বিশ্বে সকল প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এ শান্তিরক্ষীদের হাত সর্বদা প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছে। মানবতার প্রেম এবং সৌহার্দ্যরে নির্দশনই তাদের এই ক্ষেত্রে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি করছে। শান্তি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় একথাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
×