ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৬১ নেতাকে খুঁজছে পুলিশ

আন্দোলনের নামে নাশকতার মহড়া বিএনপির

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আন্দোলনের নামে নাশকতার মহড়া বিএনপির

শংকর কুমার দে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে নাশকতা ঘটাতে সহিংস সন্ত্রাসের মহড়া দিতে মাঠে নামছে বিএনপি। দলটির মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচী কেন্দ্র করে পরপর দু’দিনে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির ৬১ কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। বিএনপির এই ৬১ নেতাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ খুঁজছে। অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, সরকারী কাজে বাধাদান ও বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলায় তারা আসামি। বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে রাজপথে সহিংস সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে মানুষজনের জানমাল নিরাপত্তা রক্ষায় হার্ডলাইন বেছে নিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচী কেন্দ্র করে পরপর দু’দিনে এ মামলা তিনটি দায়ের করা হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর। রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির যে ৬১ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার মধ্যে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও এ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খানসহ ৬১ নেতাকর্মী। এদের গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে পুলিশ। তাদের বাসায় গ্রেফতারের জন্য অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের আইনজীবী ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে করা হয়েছে ১ নম্বর আসামি। এ মামলায় আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এমএ মালেক, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শহীদুল ইসলাম বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু ও বেলাল আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুজ্জামান খান শিমুল, হাসান মামুন, রফিক শিকদার, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, শেখ মোঃ শামীম, এ্যাডভোকেট ফেরদৌসী আক্তার ওয়াহিদা, সাবেরা আলাউদ্দিন ও কাজী মফিজুর রহমান প্রমুখ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে পল্টন থানায় আরও দুটি মামলা করে পুলিশ। মামলা দুটিতে আসামির তালিকায় রয়েছেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুলসহ বিএনপির ৬১ নেতাসহ অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতার নাম। বিএনপির অনশন কর্মসূচীতে সরকারী কাজে বাধা ও ভাংচুরের অভিযোগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে পল্টন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলা দায়ের পর গ্রেফতারের জন্য যাদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে তাদের মধ্যে আছেন তরিকুল ইসলাম, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, চলচ্চিত্র অভিনেতা হেলাল খান, আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, হাসান মামুনসহ অনেকেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আসামিরা পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেন এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। ওই দিন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী ও মিছিলের আয়োজন করেছিল বিএনপি। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, কর্মসূচী পালনের সময় পুলিশ যান চলাচলে সহযোগিতা করতে চাইলে বিএনপির এসব আইনজীবী এবং অন্য নেতাকর্মী পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেন এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের নামে যে কোন ধরনের অরাজকতা ও নাশকতা কঠোর হাতে দমন করা হবে। নির্বাচন সামনে রেখে যাতে কোন ধরনের অরাজকতা ও নাশকতা না হয় সেজন্য যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান আইজিপি। রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের কনভেনশন হলে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান-২০১৮’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইজিপি। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নয়। যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকে শুধু তাদেরকেই গ্রেফতার করি। তার কি পরিচয় আমরা সেটা দেখি না। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, বিস্ফোরক ঘটানো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে হস্তক্ষেপসহ সহিংস সন্ত্রাস করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মানুষজনের জানমাল রক্ষার্থে কঠোর হস্তে সহিংস সন্ত্রাস দমন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় নয়, যাদের বিরুদ্ধে মামলা, ওয়ারেন্ট আছে তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
×