ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মজুরি বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রফতানিমুখী পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। ফলে তৈরি পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দাঁড়াবে ৮ হাজার টাকা। শ্রমিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী সবদিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বর্তমানে তাদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ১০০ টাকা। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের পঞ্চম সভায় বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় দেড় ঘণ্টা দর-কষাকষির পর পোশাক শ্রমিকের মজুরি বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। পরে সচিবালয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামোতে মজুরি পাবেন পোশাক শ্রমিকরা। রাজধানীর তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার কিছুক্ষণ পর বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন পোশাক খাতের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি শামছুন্নাহার ভূঁইয়া, শ্রমিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি ফজলুল হক, মালিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দিন ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি কামাল উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার পর বৈঠক শেষে বোর্র্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা সচিবালয়ে যান। সেখানেই পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার ৮৪ শতাংশ অর্থ আয় করে তৈরি পোশাক খাত। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু সমাধান দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী সবদিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি এবার ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে তৈরি পোশাক শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি দাঁড়াবে ৮ হাজার টাকা। গেজেট প্রকাশের পরই এই বেতন কার্যকর করা হবে বলে তিনি জানান। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে ৮ হাজার টাকা। আগামী ডিসেম্বর থেকেই তা কার্যকর হবে। জানুয়ারিতে শ্রমিকরা এই নতুন বেতন হাতে পাবে বলে তিনি জানান। শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি ৫ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মজুরি কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সে হিসেবে, আগামী ডিসেম্বরে নতুন করে পুনর্মূল্যায়ন করা মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মজুরি বোর্ডের বৈঠক শেষে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, এর আগে চারটি বৈঠকে একমত হতে না পারায় উভয়পক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান। প্রধানমন্ত্রী উভয়পক্ষের কথা শুনে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেন। দেশের পণ্য রফতানির আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে আসে। এ খাতে কাজ করেন প্রায় ৩৬ লাখ শ্রমিক। ১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে সেটি বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি কার্যকর হয়েছিল। এর আগে, গত ১৬ জুলাই তৃতীয় বৈঠকে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ তাদের প্রস্তাব জমা দেন। ওই বৈঠকে শ্রমিকপক্ষ সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার দাবি জানান। বিদ্যমান মজুরি ১২৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তারা। বিপরীতে মালিকপক্ষ ৬ হাজার ৩৬০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। পরে বোর্ডের চতুর্থ বৈঠকে বোর্ড চেয়ারম্যান দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে ভারসাম্যে আসার আহ্বান জানান। এদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক জরুরী সম্মেলনে নতুন মজুরি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে মালিক প্রতিনিধিরা দাবি করেন, তাদের পক্ষে শ্রমিকদের ৬ হাজার টাকা বেতন দেয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। বারবার মজুরি বোর্ডের ঝামেলা এড়াতে প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সমন্বয়ে মজুরি বাড়ানোর চিন্তার কথা জানান পোশাক মালিকরা। সর্বশেষ ২০১৩ সালে দেশে পোশাক শিল্পের মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করা হয়। সে বছর ন্যূনতম মজুরি হার ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর করা হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হবে। তবে গত কয়েক বছর ধরেই শ্রমিক সংগঠনগুলো ১৬ হাজার টাকা বেতনের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর করতে এ বছরের ১৪ জানুয়ারি নতুন মজুরি নির্ধারণে বোর্ড গঠন করে সরকার। এদিকে, বৃহস্পতিবার মজুরি বোর্ডের বৈঠক চলাকালে অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ দেখিয়েছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। ১৬ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে এসব সংগঠনের নেতারা এখনও অটল রয়েছেন। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নামের দু’টি সংগঠনের নেতারা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, মাছের বাজারের মতো মজুরি নিয়ে এখন দরদাম কষা হচ্ছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে। বোর্ডে থেকে তিনি এটা বলতে পারেন না।
×