ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বারো তরুণের মনমাতানো শিল্পসম্ভার ‘বিন্দু বিসর্গ’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বারো তরুণের মনমাতানো শিল্পসম্ভার ‘বিন্দু বিসর্গ’

মনোয়ার হোসেন ॥ আলোকচিত্রকে সঙ্গী করে গড়ে উঠেছে কবিতার সংসার। ফ্রেমবন্দী সাদা-কালো ছবিগুলো মেলে ধরেছে কোন এক নারীর জীবনচক্র। ধাপে ধাপে এগিয়েছে জীবনের শুরু থেকে সমাপ্তি রেখা। সেই ছবিগুলোকেই বিষয় করে রচিত হয়েছে কবিতা। এভাবেই আলোকচিত্র ও কবিতার যুগলবন্দী প্রয়াসে নির্মিত হয়েছে আয়না কাব্য সিরিজের আত্মজা শিরোনামের শিল্পকর্ম। চৌকোনা একটি ফ্রেমে লাল চুরি পরা নারীর হাতটি সযতেœ আঁকড়ে ধরেছে আরেকটি হাত। পাশের ফ্রেমেই দৃশ্যমান বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কবিতা কথনÑ ‘নাড়ি ছেঁড়া নিবিড় বাঁধন জনম নিসর্গে/গড়ে ওঠা তব জীবনধারার বিন্দুবিসর্গে’। আতিকুর রহমানের আলোকচিত্রকে উপজীব্য করে কবিতাগুলো লিখেছেন আরিফুল ইসলাম অপু। এই দুই শিল্পীর যৌথ শিল্পকর্মটি এখন শোভা পাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার চার নং গ্যালারিতে। এখানে ঠাঁই পেয়েছে বারো তরুণ শিল্পীর গড়া শিল্প-প্রকল্প ‘বিন্দু বিসর্গ’। দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর এই শিল্প-প্রকল্পটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে শিল্পরসিকের। চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, কবিতা ও স্থাপনাশিল্পে সজ্জিত এই শিল্পসম্ভার ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে। চিত্রশালার চার নম্বর প্রর্দশনালয়ের দেয়ালসহ চারপাশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তারুণ্যের জয়গান গাওয়া শিল্প-প্রকল্প বিন্দু বিসর্গ। কুড়ি থেকে অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সী নবীন শিল্পীদের শিল্পকর্মগুলো কদর পেয়েছে সাধারণ দর্শক থেকে শিল্প-সমালোচকের। এই শিল্পযজ্ঞে চিত্রকলা নিয়ে হাজির হয়েছেন আজিজি ফাওমি খান, প্রদীপ সাহা ও প্রসূন হালদার। ড্রয়িং ইনস্টলেশনে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ইমাম মাহদি, কুন্তল বাড়ৈ ও সোমা সুরভী জান্নাত। আছে খোকন চন্দ্র সরকারের বিশাল ভাস্কর্যের সঙ্গে কুতুবুল ইসলাম অভির মিনিয়েচার ভাস্কর্য।। ভাস্কর্য ইনস্টলেশনের মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন আমিনুল ইসলাম আশিক। রেখা ও রংয়ের আশ্রয়ে এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে ক্যানভাস রাঙিয়েছেন সাকিব সেলিম। আতিকুর রহমানের আলোকচিত্রের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটেছে আরিফুল ইসলামের কবিতার। আর নান্দনিক এই শিল্প-প্রকল্পের কিউরেটিং করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী। চার নম্বর গ্যালারির প্রবেশপথেই স্বাগত জানায় বিহাইন্ড মাই ট্রাস্ট শীর্ষক নয়নজুড়ানো ভাস্কর্য। লম্বা একটি পাটাতনের উপরে ঠাঁই করে নিয়েছে সিমেন্ট, তার, পেরেকসহ মিশ্র ধাতুতে গড়া তিনটি নারী মুখ। দুই পাশে পেরেক ও তারের সাহায্যে নির্মিত মুখটির মাঝে উপস্থাপিত হয়েছে লালরঙা দেবীর মুখ। সেই মুখের কিছু অংশে শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে ভেসে বেড়াচ্ছে রকমারি ফুল। আরেক অংশজুড়ে অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে মুখের মাঝে সেঁটে আছে বুলেট, গ্রেনেডসহ নানা বিধ্বংসী মারণাস্ত্র। এভাবেই শিল্পের মাঝে সময়ের অস্থিরতাকে তুলে ধরেছেন খোকন চন্দ্র সরকার। মঙ্গলবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টিভেজা বিকেলে বিন্দু বিসর্গের শিল্পকর্মগুলো খুঁটিয়ে দেখছিলেন নুরুজ্জামান কায়সার নামের এক শিল্পরসিক। কেমন লাগলো এই শিল্প-প্রকল্পÑএই প্রশ্নের জবাবে বলেন, এককথায় চমৎকার। প্রতিটি কাজে যতেœর ছাপ আছে। শিল্প সৃজনে তরুণ শিল্পীদের সৃজনশীলতার সঙ্গে নিষ্ঠার চিহ্নটি সহজেই চোখে পড়ে। সবগুলো শিল্পকর্মই খুব গোছানো। এলোমেলো ভাব নেই। এ কারণেই বিন্দু বিসর্গ দেখে পাওয়া যায় দৃষ্টির প্রশান্তি। বহুমাত্রিক শিল্পের সম্ভারে সাজানো আঠারোতম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে ৬৮টি দেশ। চিত্রশলালার ছয়টি গ্যালারিতে উপস্থাপিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের ৪৬৬ শিল্পীর ৫৮৩টি শিল্পকর্ম। পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী।
×