ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথে সুইডেন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথে সুইডেন

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফ্যান লোফভ্যান তার সোস্যাল ডেমোক্র্যাটস ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে থাকার পর অন্য দলগুলোর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সমঝোতার জন্য মধ্য-ডানপন্থী বিরোধী জোটকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। গত এক শতাব্দীতে এবারই সোস্যাল ডেমোক্র্যাটস সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে। এএফপি ও বিবিসি। স্ইুডেনে সাধারণ নির্বাচনে হার-জিত এখনও নির্ধারণ হয়নি। রবিবার এ নির্বাচনে ভোট নেয়া হয়। প্রধান দুটি জোট প্রায় সমানসংখ্যক ভোট পাওয়ায় ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথে দেশটি। পরবর্তী সরকারে কে আসছেন, তা জানতে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। সুইডেনের সাধারণ নির্বাচনে দুই প্রধান জোটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। শাসক দল বামপন্থী জোট সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। বাম জোট পেয়েছে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। আর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অভিবাসনবিরোধী ডানপন্থী জোট পেয়েছে ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। এ ছাড়া এবার নির্বাচনে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সুইডেন ডেমোক্র্যাটস (এসডি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এসডি দলের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের ফল দেখে বোঝা যাচ্ছে অভিবাসন সঙ্কট ইউরোপের এই উদারপন্থী দেশের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে। ভোটাররা অভিবাসনবিরোধী দলগুলোর দিকে ঝুঁকেছেন। শুধু তা-ই নয়, বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ রয়েছে এমন দলও এবার বেশি ভোট পেয়েছে। নির্বাচনের পর সুইডেনে জোট সরকার গঠনের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। তবে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দুটো দলই এসডির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। যদিও এসডির নেতা বলেছেন, তিনি সব দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এসডি দলের নেতা জিমি এ্যাকেসন দলের সমাবেশে বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে আমরা আমাদের আসনসংখ্যা বাড়াব এবং সামনের সপ্তাহ, মাস ও দিনগুলোতে সুইডেনে যা ঘটবে, তার ওপর আমাদের অপরিসীম প্রভাব থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী স্টিফ্যান লোফভ্যানের নেতৃত্বে তার দল সোস্যাল ডেমোক্র্যাটস ও দ্য গ্রীন পার্টি জোটে সমর্থন রয়েছে বাম দলের। অন্যদিকে, চারটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছে ডানপন্থী জোট। এই জোটের হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে আছেন উলফ ক্রিসটেরসন। তিনি শাসক জোটকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী লোফভেন দলীয় সমাবেশে বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তিনি বলেছেন, ‘পার্লামেন্ট শুরু হতে আরও দুই সপ্তাহ বাকি। সুইডিশ নির্বাচনী পদ্ধতি ও ভোটারদের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি নীরবে কাজ করব।’ ভোটের ফলে এবার চমক দেখানও এসডি দলটি ২০১০ সালে প্রথম পার্লামেন্টে প্রবেশ করে। এ দলের সঙ্গে নব্যনাৎসিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে দলটি তাদের রূপ বদলের চেষ্টা করছে। দলের প্রতীক মশালে (যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতীকের মতো) পরিবর্তন এনে সুইডেনের পতাকার রং হলুদ ও নীল রঙের আদলে করা হচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে দলটি কর্মজীবী মানুষদের প্রতিনিধি বললেও তারা এখন আরও নারী ও উচ্চ বেতনের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। দলের নেতা এ্যাকেসন বলেন, বর্ণবাদী আচরণের বিষয়ে তারা শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছে। বর্ণবাদী আচরণের কারণে ইতোমধ্যে দল থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও এখনও দলটির বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। দলের এক প্রার্থী ফেসবুকে একটি গান শেয়ার করেছিলেন, যেটির ভাষা ছিল, ‘সুইডিশরা সাদা, আর দেশটি আমাদের’। সুইডেনের অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও অনেক ভোটার আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণমূলক সেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ২০১৫ সালে অভিবাসন সঙ্কট শুরু হওয়ার পর দেশটি এ বিষয়ে চাপের মধ্যে পড়ে। ওই বছর সুইডেন রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৬৩ হাজার অভিবাসীকে আশ্রয় দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা অনুসারে এটা ছিল সর্বোচ্চসংখ্যক অভিবাসী গ্রহণ।
×