ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুর আগে জাপাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান এরশাদ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মৃত্যুর আগে জাপাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৃত্যুর আগে জাতীয় পার্টিকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, আমরা আর গৃহপালিত বিরোধী দল হতে চাই না। দেশবাসীর ভালবাসায় নেতাকর্মীদের শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই। পার্টিকে ক্ষমতায় দেখা একমাত্র ইচ্ছা বলে উল্লেখ করেন। শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের এক যৌথ সভায় তিনি এই ইচ্ছা পোষণ করেন। যৌথসভা উপলক্ষে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা এই যৌথসভায় আসেন। শ্যামপুর-কদমতলি থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে জড়ো হন। ফলে যৌথসভা পরিণত হয় জনসভায়। সড়কে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারাও মিছিল নিয়ে যৌথসভায় যোগ দেন। ঢাকার বাইরে থেকেও নেতাকর্মীরা বিশাল মিছিল নিয়ে সকালে যৌথসভায় যোগদান করেন। সভা থেকে আগামী ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় যৌথসভার কার্যক্রম। শুরুতে এরশাদ বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ, আর পেছনে ফেরার সময় নেই। ৬ অক্টোবর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে হবে। মহাসমাবেশের মাধ্যমে দলের নির্বাচনী কৌশল জানিয়ে দেয়া হবে। নেতাকর্মীদের সমাবেশে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, সমাবেশে সবাইকে আসতে হবে। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে হবে। সবাইকে বুঝিয়ে দিতে হবে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা আর গৃহপালিত বিরোধীদল হতে চাই না। এবার সরকার গঠন করতে চাই। যৌথসভার সমাপনী বক্তৃতায় সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত নেতা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। আমাদের হাতে রক্তের দাগ নেই। মানুষের ভালবাসা আছে, সমর্থন আছে। এবার আমরা কাজে লাগাতে চাই। আমরা ক্ষমতায় গিয়ে দেশ থেকে সন্ত্রাস, খুন, গুম, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি আর সহিংস রাজনীতি দূর করব। সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ব। শান্তির বাংলাদেশে খুন-গুম থাকবে না, আমরাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। মানুষের ভালবাসা রয়েছে, আমরা বিজয়ী হব। তোমরা প্রস্তুতি নাও। এ সময় এরশাদ বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ, আর পেছনে ফেরার সময় নেই। জয় নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি জেলা, থানা ও ইউনিয়নে অতিদ্রুত সফল কমিটি ঘোষণা করতে হবে। দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তৃণমূলের কাছে আমার একটাই চাওয়া- পার্টিকে ক্ষমতায় নাও। নিজেদের মধ্যে ঐক্য জোরালো করে মানুষের কাছে ছুটে যাও। আমাদের শাসন আমলের কথা সবার কাছে পৌঁছে দাও। যৌথসভায় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির সামনে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ এসেছে। নিজেরাই এবার ক্ষমতায় যাব। দলকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়াই এবার আমাদের লক্ষ্য। এবারের সংগ্রাম ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রাম। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তা আর কোন সরকারের আমলে হয়নি। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে যেসব কাজ করেছি, তৃণমূলের নেতাদের, কর্মীদের সেসব সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নতুবা তারা ভুলে যেতে পারে। বক্তব্যের শেষে রওশন এরশাদ অনুষ্ঠানে ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা’ গানও গেয়ে শোনান। পার্টির আরেক কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, দেশবাসীর সামনে পরিষ্কার হয়েছে- ১৯৯১ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ন’বছর এদেশের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল। তিনি দলাদলি না করে চেয়ারম্যান এরশাদের পরামর্শে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। সভায় তৃণমূল নেতারা সমালোচনা করে বলেন, আগামী নির্বাচনের পর দল থেকে মন্ত্রী-এমপির সংখ্যা বাড়াতে হবে। তা না হলে দলের মধ্যে অসঙ্গতি দেখা দেবে। দলকে চাঙ্গা রাখতে হলে দলের মধ্যে ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাহলে আগামীতে জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে।
×