ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়া কাপে নিজেদের সম্ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে বললেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য আছে, তবে...

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য আছে, তবে...

মিথুন আশরাফ ॥ এশিয়া কাপে এবার কী করবে বাংলাদেশ? গত তিন আসরের মধ্যে দুই আসরেই ফাইনালে খেলা বাংলাদেশ কী পারবে এবার ফাইনাল খেলতে, চ্যাম্পিয়ন হতে? ক্রিকেটারদের বিশ্বাস, দল শিরোপা জিততে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা যেন বাস্তবতাতেই থাকতে চাইছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে, তবে...।’ এই তবে বলতে বুঝিয়েছেন, অন্য দলগুলোও যে কঠিন প্রতিপক্ষ! চ্যাম্পিয়ন হতে হলে যে খেলতে হবে সেরার সেরা খেলা! বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নিজের ১৩তম বিবাহবার্ষিকীর দিনে মাশরাফির বলা কথাগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো। * শেষ তিন এশিয়া কাপ ও এবারের এশিয়া কাপ মাশরাফি বিন মর্তুজা ॥ এত আগে থেকে মনে হওয়ার কিছু নেই। আগের দুই-তিন এশিয়া কাপে খেলা এখানে খুব বেশি ম্যাটার করবে না। এবার ফরমেটটাও ভিন্ন। দুইটি টিম বাড়াতে আসলে প্রথমে নকআউট পর্ব পার করে আসতে হবে, এরপর সবার সঙ্গে খেলতে হবে। একটু অন্যভাবে সাজানো এবারের ফরমেটটা। মূল কথা হচ্ছে প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। প্রথম ম্যাচটা যদি ভাল করতে পারি তাহলে সবকিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। * বাস্তবতা বিবেচনায় এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা মাশরাফি ॥ সম্ভাবনা কতটুকু এভাবে আসলে বলা যায় না। দলগুলো যদি দেখেন তাহলে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। হয়তো ভারত অনেক ভাল দল। পাকিস্তান তাদের ঘরের (সংযুক্ত আরব আমিরাত হোম গ্রাউন্ড) মাঠে খেলবে। কিছুটা বাড়তি সুবিধা তারা পাবে। তাদের দলে রিস্ট স্পিনার বেশি আছে। তবুও আমার কাছে মনে হয় আমাদের সামর্থ্য আছে তাদের হারানোর। আমরা শুরুটা কেমন করি আর পরের রাউন্ডে যেতে পারি কিনা, সেটা দেখতে হবে। এখানে বিভিন্ন ক্যালকুলেশন আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আমার কাছে মনে হয় আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। * আগের দুই এশিয়া কাপ থেকে এবারের এশিয়া কাপ কঠিন মাশরাফি ॥ আগে যে টুর্নামেন্ট খেলেছি সেগুলোও কঠিন ছিল। এবারও অবশ্যই কঠিন থাকবে, সিচুয়েশন অবশ্যই কঠিন হবে। আর সেখানে (আরব আমিরাতে) আমরা দল হিসেবে খেলিনি, এটাও একটা পয়েন্ট। অনেক জায়গা আমরা সফল হয়েছি, যেখানে আমাদের সামর্থ্যে অনেক প্রশ্ন ছিল। এমন অনেক ভাল খারাপের মধ্য দিয়েও আমরা সফল হয়েছি। এগুলো আসলে আমার কাছে খুব বড় ইস্যু মনে হয় না। ইস্যু হচ্ছে, আমরা শুরুটা কেমন করছি, আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কেমন খেলছি। আমার কাছে মনে হয় আসন্ন ১৫ তারিখটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। * ২৩ বছর পর আরব আমিরাতে খেলা ও ২৫০ উইকেটের মাইলফলক মাশরাফি ॥ একই কথা বারবার আসছে। আসলে আমরা কতটুকু প্রস্তুত আছি টুর্নামেন্টটা জেতার জন্য, আপনারা অনেকে টুর্নামেন্ট জেতার কথা বলছেন। আমি আবার এই টাইপ না, আমি এই ধরনের কথা বলতে চাই না। আমি মনে করি আমাদের সামর্থ্য আছে। বাকি দলগুলোর সঙ্গে যদি তুলনা করেন, কন্ডিশন, উইকেট ও কিছু টুকটাক ব্যাপার থাকে, রিস্ট স্পিনাররা কেমন ফর্মে আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের থেকে বেটার টিম আছে এই টুর্নামেন্টে। তবে বাকি দলের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। সেই পার্থক্যটা আমরা ভাল ক্রিকেট খেলে পূরণ করতে পারি, আমার কাছে সবকিছুই সম্ভব মনে হয়। সবকিছুর আগে নির্ভর করছে আমরা প্রথম ম্যাচটা ভাল খেলে জিততে পারি কিনা। আর আমার নিজের কোন লক্ষ্য থাকে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজও যাইনি, এখানেও যাব না। কখন এমন লক্ষ্য নিয়ে যাই না। আমি চেষ্টা করব অবদান রাখার, যতটুকু পারি। এটা খারাপও হতে পারে, ভালও হতে পারে। এটা নিয়ে আসলে এত মাথা ব্যথা নেই। আর টুর্নামেন্টের শুরুতে তো থাকেই না। * আফগান স্পিন ও রশিদ খান মাশরাফি ॥ রশিদ খান অবশ্যই বিশ্বমানের লেগস্পিনার, বিশেষ করে এই দুই ফরমেটে। একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে টি২০তে শর্টস খেলার চাপ থাকে, ওয়ানডেতে সেটা থাকে না। ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডেতে দুই-তিন ওভার সময় পাবে তাকে দেখে খেলার। তবে তাকে বুঝে উঠতে পারা খুব জরুরী। গুগলি বা লেগস্পিন যেটা আছে সেটা বুঝতে পারতে হবে। যারা বুঝতে পারে তাদের সমস্যা হবে না। আর রশিদ খানকে খেলতে সারাবিশ্বের সব ব্যাটসম্যানদেরই সমস্যা হচ্ছে। এখানে মানসিকভাবে কিছুটা শক্ত হলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে রশিদ খানের আগে আমাদের শ্রীলঙ্কার স্পিন, পেস বোলিং হ্যান্ডেল করা বেশি জরুরী। আমরা যদি প্রথম ম্যাচ জিততে পারি তাহলে যে আত্মবিশ্বাসটা পাব সেটা দিয়ে রশিদ, মুজিব, নবিদের হ্যান্ডেল করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যদি খারাপ হয় তাহলে সেটা দুইগুণ বেশি কষ্ট হবে। প্রথম ম্যাচটা আমাদের জন্য অনেক কিছুই সেট করে দিবে। * দলের দুর্বলতা মাশরাফি ॥ আসলে দুর্বলতা নিয়ে কথা না বলাই ভাল। একটা দল টুর্নামেন্টে যাচ্ছে, এখন ইতিবাচক কথা বলাই ভাল। প্রতিটা দলেরই দুর্বলতা আছে, আমাদেরও অবশ্যই আছে। আমরা সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। একটা টুর্নামেন্টের আগে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই যাওয়া ভাল। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে, টি২০ সিরিজ জিতে এসেছি। আশাকরি প্লেয়াররা সবাই ভাল ছন্দে আছে, ফ্রেম অব মাইন্ডে আছে। যা আমদের সেখানে প্রথম ম্যাচে ভাল খেলতে সাহায্য করবে। * শান্তর ফিটনেস ও রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে মুমিনুল মাশরাফি ॥ শান্তর যে ইনজুরি (বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে চোট) ছিল আশাকরি সেটা ঠিক হয়ে যাবে। টুর্নামেন্টের আগে থেকেই হয়তো সে অনুশীলন শুরু করতে পারবে। আর যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে নির্বাচকদের সঙ্গে আলাপ করে আপডেট জানাব। দুইজন প্লেয়ারকে অবশ্যই আমরা চিন্তা করছি। এটা (মুমিনুল) আসলে নির্বাচকরা জানে। আমি ক্লিয়ার না। এটার আপডেট হয়তো পরে পেয়ে যাবেন। * আরব আমিরাতের উইকেট, তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদের পিএসএল অভিজ্ঞতা মাশরাফি ॥ আসলে দলে তাদের নিজেদেরও তো বড় দায়িত্ব আছে। তামিমের সাম্প্রতিক সময়ের ফর্ম দেখেন, ওর ব্যাটিং, এর দায়িত্ববোধ যদি দেখেন, একই কথা রিয়াদের জন্যও। অবশ্যই তাদের অবদান খুবই জরুরী। আমার মনে হয় না শুধু তাদের কাছ থেকেই ইনপুট নেয়ার প্রয়োজন আছে। অস্ট্রেলিয়ায় যখন ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলি, তার আগে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আমাদের স্মৃতি খুব ভাল ছিল না। সেটাই বললাম, যদি মাঠ বা আউটফিল্ড আমাদের পক্ষে না থাকে তাহলে পারফর্ম করতে পারব না, সেই বিশ্বাস নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। মনে হয় আমাদের সামর্থ্য আছে, তার সঙ্গে রিয়াদ, সাকিব, মুশফিকও খেলেছিল সেখানে। তামিম খেলেছে অনেকদিন এবং সে পারফর্মও করেছে। তাদের ইনপুট থাকাটা জরুরী। আমাদের যারা তরুণ প্লেয়ার, আসলে তারা এখন আর তরুণ প্লেয়ার না। তিন, চার, পাঁচ বছর ধরে খেলছে অনেকে, তাদের আপনারা তরুণ প্লেয়ার বলছেন। তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও তাদের তরুণ প্লেয়ার বলতে একটু বাধা লাগা উচিত। আমার বিশ্বাস যে তারাও পারফর্ম করবে। * কোন দল হুমকি মাশরাফি ॥ আমাদের জন্য সবাই হুমকি। বিশেষ করে আমাদের গ্রুপে যারা আছে, ছয় দল পর্যন্ত যাওয়ার আগে তো আমাদের তিনটা (দুইটা) দলের সঙ্গে খেলা হবে। আফগানিস্তানের বোলিং শক্তি, শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ড সামর্থ্য, সবদিক বিবেচনা করলে যে কোন কিছুই হতে পারে। আমি সবসময় বলে আসছি, আমাদের প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমরা যদি জিততে পারি ভালভাবে তাহলে এশিয়া কাপে ভাল করার সুযোগ থাকবে। এশিয়া কাপের সূচী গ্রুপ ‘এ’ ভারত, পাকিস্তান, হংকং গ্রুপ ‘বি’ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান গ্রুপপর্ব তারিখ প্রতিপক্ষ ভেন্যু ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা দুবাই ১৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান বনাম হংকং দুবাই ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান আবুধাবি ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত বনাম হংকং দুবাই ১৯ সেপ্টেম্বর ভারত বনাম পাকিস্তান দুবাই ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান আবুধাবি সুপারফোর ২১ সেপ্টেম্বর গ্রুপ ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন-গ্রুপ ‘বি’ রানার্সআপ দুবাই ২১ সেপ্টেম্বর গ্রুপ ‘বি’ চ্যাম্পিয়ন-গ্রুপ ‘এ’ রানার্সআপ আবুধাবি ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রুপ ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন-গ্রুপ ‘এ’ রানার্সআপ দুবাই ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রুপ ‘বি’ চ্যাম্পিয়ন-গ্রুপ ‘বি’ রানার্সআপ আবুধাবি ২৫ সেপ্টেম্বর গ্রুপ ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন-গ্রুপ ‘বি’ চ্যাম্পিয়ন দুবাই ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রুপ ‘এ’ রানার্সআপ-গ্রুপ ‘বি’ রানার্সআপ আবুধাবি ফাইনাল ২৮ সেপ্টেম্বর সুপারফোর চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ দুবাই * সব খেলা বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫.৩০ মিনিটে শুরু
×