ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান, প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি নেপাল ও পাকিস্তান

সাত জাতির সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সাত জাতির সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু আজ

জাহিদুল আলম জয় ॥ ঢাকায় সাত জাতির ১২তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের পর্দা উঠছে আজ। ‘সাফ সুজুকি কাপ’ নামের এই আসরে উদ্বোধনী দিনে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে মাঠে নামছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে লাল-সবুজের দেশ। ম্যাচটি মাঠে গড়াবে সন্ধ্যা ৭টায়। জামাল-মামুনুলদের ম্যাচের আগে একই গ্রুপে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে নেপাল ও পাকিস্তান। ‘এ’ গ্রুপে এই চার দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এ আসরে ‘বি’ গ্রুপে খেলছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। অতিথি ছয় দেশই বর্তমানে ঢাকা অবস্থান করছে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সব দেশই বিভিন্ন গ্রাউন্ডে অনুশীলন করেছে। টুর্নামেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সাফ শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইকে সর্বসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছে ১০ হাজার পোস্টার। এছাড়া রাজধানীর ৫০০টি ডিজিটাল ব্যানারে খেলার ফিক্শ্চার দেখানো হচ্ছে। টুর্নামেন্ট কাভার করতে প্রায় ৫০ বিদেশী সাংবাদিক বাংলাদেশে অবস্থান করছে। দুই গ্রুপের সাতটি থেকে চার দল সেমিফাইনালের টিকেট পাবে। বাকি তিনটি দলকে গ্রুপ পর্ব থেকে তল্পিতল্পা গোছাতে হবে। দুই গ্রুপের সেরা দুটি করে মোট চার দল শেষ চারে উঠে আসবে। সেমিফাইনালের ম্যাচ দুটি হবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর। সেমির দুই বিজয়ী দল ফাইনালে মুখোমুখি হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। এর আগে ১১ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাত্র একবার। তাও আবার সেই ১৫ বছর আগে ২০০৩ সালে। সেবার এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই বিজয় উল্লাস করেছিলেন রজনী, কাঞ্চন, মতিউর মুন্নারা। এর মাঝে ২০০৯ সালে আরেকবার স্বাগতিক হলেও সফল হতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার চেনা মাঠে দ্বিতীয়বার মুকুট জয়ের স্বপ্ন বুনছে বাংলার নতুন প্রজন্ম। তবে কাজটা যে সহজ হবে না সেটা বলাই বাহুল্য। কেননা প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলের মান প্রায় কাছাকাছি। অর্থাৎ উনিশ-বিশ। সাত দেশের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে পেছনে শুধু পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এগিয়ে বাকি চার দেশ ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপাল। এ কারণেই শিরোপা স্বপ্ন থাকলেও আগে থেকে স্বপ্নের কথা শোনাচ্ছেন না বাংলাদেশ কোচ। টুর্নামেন্টে আগের ১১ বারের মধ্যে সাতবারই শিরোপা শোকেসে তুলেছে ভারত। আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। সাউথ এশিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে সাত দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ২০০৫ সালে অষ্টম দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে আফগানিস্তান। এবার অবশ্য আফগানরা খেলছে না। ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া এই আসরে একতরফা শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে চলেছে ভারত। এবার তরুণ দল নিয়ে আসলেও দেশটির লক্ষ্য অভিন্ন। টুর্নামেন্ট সফলভাবে শেষ করতে আশাবাদী আয়োজকরা। টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আয়োজক দেশ হিসেবে আমরা সুনামের সঙ্গে আয়োজন করতে চায়। আশা করি সবকিছু ভালমতো হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা আশা করছি’। পাশাপাশি বাংলাদেশ দল প্রত্যাশিত সাফল্য পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বাংলাদেশের সাফল্য প্রসঙ্গে বাস্তববাদী সাফ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। কিংবদন্তি এ ফুটবলার ২০০৮ সালে প্রথমবার বাফুফের মসনদে আসীন হন। এক বছর পরই ঢাকায় হয়েছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এই পর্যন্ত তিনবার বাফুফে সভাপতি হওয়া কাজী সালাউদ্দিনের সময়ে কখনোই সাফ জিততে পারেনি লাল-সবুজের দেশ। বরং দেশের ফুটবল নেমে গেছে অতলে। নয় বছর পর আবারও ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত টুর্নামেন্ট। বাফুফে বস তাই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। সোমবার বাফুফে ভবনে সাফের স্পন্সর পরিচিত এবং লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘একজন ফুটবলার এবং বাফুফে সভাপতি হিসেবে আমি প্রত্যাশা করি চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। তবে কী হবে সেটা বলতে পারব না। সব কিছু নির্ভর করছে খেলোয়াড়দের ওপর।’ এবারের আসরের জন্য দীর্ঘদিন থেকে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন জামাল, সুফিল, ওয়ালিরা। এত প্রস্তুতির পর সালাউদ্দিনের বিশ্বাস এবার পারবে বাংলাদেশ, ‘সাফের জন্য যত কিছুর দরকার ছিল আমরা করেছি। আমি কিংবা সালাম মুর্শেদী তো খেলে দিতে পারব না। আমার মনে হয় এখন খেলোয়াড় এবং কোচদের কাজ করার সময়। কাতার, ইন্দোনেশিয়া এর পর নীলফামারীতে ম্যাচ খেলেছে। দলের প্রস্তুতিতে আমি খুশি। ফুটবল দলের জন্য যা কিছু দরকার আমরা সবকিছুই করেছি।’ খেলাপাগল মানুষদের জাতীয় দলকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই তারকা ফুটবলার বলেন, ‘জাতীয় দলকে সমর্থন দিন। আশা করছি ভাল একটা রেজাল্ট পাব। এই রেজাল্ট পাওয়ার জন্য বাইরের দিক থেকেও সমর্থন প্রয়োজন।’ প্রত্যাশিত রেজাল্ট পেতে প্রথম ম্যাচে ভাল করার বিকল্প নেই। আর তাই ভুটানের বিপক্ষে জিততে চায় বাংলাদেশ। এই দলটির কাছেই এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর ৩-১ গোলে হেরেছিল লাল-সবুজের দেশ। ওই হারে দেশের ফুটবল রীতিমতো তলানিতে চলে যায়। কেননা নিজেদের ইতিহাসে ওই ম্যাচের আগে ভুটানের কাছে কখনও হারেনি বাংলাদেশ। সেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই সাফ মিশন শুরু করছে জেমি ডে’র দল। ম্যাচটির আগে আরেকটি তথ্য উজ্জীবিত করতে পারে স্বাগতিকরদের। ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবশেষ জয় এই ভুটানের বিপক্ষেই। ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর সাফ সুজুকি কাপেই (৩-০ গোলে)। সেই ভুটানের বিপক্ষেই আবার জয়ে ফিরতে চায় বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত সাফে মোট পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-ভুটান। এতে বাংলাদেশের জয় ৪টি, অন্যটি ড্র। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে অবশ্য অতীত নিয়ে ভাবছেন না। ১৫ সপ্তাহ ধরে গড়ে তোলা দলটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে এমন বিশ্বাস তার। ইংলিশ কোচের প্রাথমিক লক্ষ্য গ্রুপ পর্ব পেরুনো, অর্থাৎ প্রথমে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য গ্রুপ পর্ব উতরানো। এর বাইরে আপাতত কিছু ভাবছি না। আমার ওপর কোন চাপ নেই। খেলোয়াড়দের ওপরও চাপ নেই।’
×