ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

হতদরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হতদরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা

চলতি সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী তিন মাস হতদরিদ্র ৫০ লাখ মানুষ মাত্র ১০ টাকা মূল্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত হতদরিদ্রদের জন্য সুসংবাদ সন্দেহ নেই। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল দশ টাকা দরে চাল দেয়া। শতভাগ না হলেও গরিবদের জন্য সরকার দু’বছর আগে থেকে বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় ওই দশ টাকা দরে চাল বিতরণ করে আসছে। বিশেষ করে গত বছর সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতিতে পড়ি আমরা। সে সময়েও গরিব মানুষ না খেয়ে থাকেনি। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় এটি সম্ভব হয়েছে। বলা দরকার খাদ্যের চাহিদাও সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। দশ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে- এটা সরকারের একটা বড় অর্জন। এ অর্জনকে ব্যাহত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সরকারের নানা ধরনের খাদ্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন কাবিখা, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ, সরকারী সংস্থায় নিজেদের চাল সরবরাহ করা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, বর্তমানে মানুষের আয় বেড়েছে, ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। হতদরিদ্র শব্দটি ব্যবহার করা হলেও সত্যি বলতে কী এমন অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ দেশে এখন খুব বেশি নেই। তবু ৫০ লাখ মানুষকে দশ টাকা করে চাল দেয়ার নীতিটি অবশ্যই সরকারের জনবান্ধব নীতি। মানুষের কল্যাণের আদর্শ সমুন্নত থাকলেই কোন সরকার এই ধরনের কর্মসূচী হাতে নিয়ে থাকে। এটা ঠিক যে, দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। সে বিবেচনায় চাল বণ্টনই সব কিছুর আগে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তবে এটাও মানতে হবে যে- শুধু চাল নয়, জীবনধারণের জন্য, সঠিক পুষ্টির জন্য মানুষকে অন্যান্য খাদ্যের ওপরও নির্ভর করতে হয়। বিশেষ করে আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য উপাদান মানবদেহের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আগামীতে সরকারকে এদিকটিও ভেবে দেখতে হবে। বিত্তহীন দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে যথাযথভাবে শনাক্ত করে তাদের জন্য জাতীয় একটি খাদ্য কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সেই কার্ড ব্যবহার করে সরকার পরিচালিত খাদ্য সংস্থা থেকে মানুষ ন্যায্য বা নামমাত্র মূল্যে শুধু চাল নয়, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিনতে পারবেন। হয়ত এক-দু বছরে এটি সম্ভব হবে না। সদিচ্ছা থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জনকল্যাণমূলক সরকার এটি চালু করতে পারে। খাদ্যমন্ত্রী দশ টাকা কেজি চাল বিতরণ কর্মসূচীতে কোন ধরনের অন্যায় ও অনিয়মের ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যা প্রয়োজনীয়। স্থানীয় সরকারের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সরকারী বরাদ্দের নয় ছয় করা, অভীষ্ট জনগোষ্ঠীকে ঠিকমতো প্রাপ্য বুঝিয়ে না দেয়া, প্রাপ্য বিতরণের বিনিময়ে টাকা দাবি করা, বরাদ্দের চাল-গম খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়াÑ এমন অভিযোগ বিস্তর। দশকের পর দশক ধরে এ অপচর্চা চলছে। টিআর, কাবিখা, ভিজিএফ প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়। সরকারের সামাজিক কর্মসূচীর মূল বাস্তবায়ন-সহযোগী স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ যথাযথ বা সুষ্ঠুভাবে কাজ করে না। ভিজিএফের চাল নিয়ে এ ধরনের অনিয়ম রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যা সম্প্রতি কোরবানি ঈদের সময়ও দেখা গেল। তাই আশা করা যায় দরিদ্র মানুষের কল্যাণে টেকসই ও যথাযথ একটি খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে বর্তমান সরকার দৃঢ় ব্যবস্থা নেবে ।
×