ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

হেলথ রেভ্যুলেশন ইন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ আগস্ট ২০১৮

হেলথ রেভ্যুলেশন ইন বাংলাদেশ

(গতকালের চতুরঙ্গ পাতার পর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের কঠোর তত্ত্বাবধানে এবং নীতিমালা মেনে ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের উৎপাদিত ফার্মাসিউটিক্যালস প্রডাক্ট পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উত্থান বিস্ময়কর। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রফতানির মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে এই শিল্প খাত। বর্তমানে দেশে ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ওপরে এবং আন্তর্জাতিক বাজার ২২০০ কোটি টাকার বেশি। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই শিল্প গার্মেন্ট শিল্পকে অতিক্রম করবে। সরকারের ইতিবাচক নীতি কৌশল এই শিল্পের সুস্থ বিকাশ ও মানসম্মত উৎপাদনশীলতার জন্য যথেষ্ট সুনাম অর্জন এবং আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। সম্ভাবনাময় ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবস্থিত ওষুধ শিল্পনগরী প্রকল্পের এপিআই শিল্পপার্ক (এ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট-এপিআই) প্লট বরাদ্দ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই পার্কে কাঁচামাল উৎপাদনের সব ধরনের সুবিধা করে দেবে সরকার। পার্কটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। বরং উল্টো কাঁচামাল রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার ১২০০ কোটি টাকার বেশি। হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় রোগীদের মানসিক, অর্থনৈতিক, অসুস্থতা বিষয়ক বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি ও রোগীর সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে রোগীর রোগমুক্তির জন্য চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও সহায়তা করা হয়। বর্তমান সরকারের সাড়ে নয় বছরে স্বাস্থ্য-বিষয়ক বেশকিছু সূচকে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেকের কাছেই অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যুহার রোধে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মাতৃমৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ১.৮১ এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৪ জন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি হাজারে ৩১ জনে নেমে এসেছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের সফলতায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যক্ষ্মা রোগের সফলতার হার ৯৬% শতাংশ, কালাজ্বরে মৃত্যুর হার এখন শূন্যের কোঠায়। হেপাটাইটিস বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মামস ও রুবেলার টিকা এখন সরকারী কর্মসূচীর আওতাভুক্ত হয়েছে। পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৭২ বছর। এইচআইভির বিস্তারের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। ২০১১ সালে বার্ড ফ্লু প্রতিহত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন পোলিওমুক্ত রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন জনবান্ধব ও গরিবমুখী কাজের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ তৃতীয় বিশ্বের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মানসূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও আফগানিস্তানের ওপরে, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের নিচে। ল্যানসেটের গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের যে দেশগুলো ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে প্রাথমিকভাবে ভালো করেছে বা অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছে, সে তালিকায় আছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস ও রুয়ান্ডা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস, শিশুমৃত্যুহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেভিড ন্যাবারো বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সাম্প্রতিক অর্জন বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই দৃষ্টান্তস্বরূপ। ডেভিড ন্যাবারো ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সফরকালে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তিনি ম্যালেরিয়া নির্মূল, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদরোগ, নারীদের ক্যান্সার প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কর্মসূচীর প্রশংসা করেন। (সমাপ্ত) লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×