ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পিপিপির আওতায় দিয়েও আইসিটি পার্ক নির্মাণে ভাল ফল মিলছে না

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৬ আগস্ট ২০১৮

 পিপিপির আওতায় দিয়েও আইসিটি পার্ক নির্মাণে ভাল ফল মিলছে না

ফিরোজ মান্না ॥ আইসিটি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে আইসিটি পার্ক নির্মাণ পিপিপির আওতায় দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পার্ক পিপিপির আওতায় দিয়েছে প্রযুক্তি বিভাগ। বিদেশী বিনিয়োগ না হলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তিবিদও গড়ে উঠবে না। ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট পূরণ করতেও পারবে না সরকার। যদিও প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের তাগিদেও কোন লাভ হচ্ছে না। বেশির ভাগ আইসিটি পার্ক নির্মাণ কাজ অর্ধেকের কম হয়ে থেমে আছে। পিপিপির আওতার কাজও খুব বেশি এগোয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে আইসিটি পার্কগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কয়েকটি আইসিটি পার্কে পিপিপির আওতায় কিছু কাজ করা হচ্ছে। তবে ২১ সালের আগেই দেশের সব আইসিটি পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় কাজ করতে গিয়েও ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি জেলায় দীর্ঘদিন ধরে আইসিটি পার্ক নির্মাণ কাজ চলছে। হাতে নেয়া প্রকল্পগুলো গত বছরই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজগুলো এখনও শেষ হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর হাইটেক পার্ক, সিলেটে ইলেক্ট্র্রনিক সিটি, মহাখালীতে আইটি ভিলেজ, রাজশাহী আইটি ভিলেজ, জনতা টাওয়ার সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক, যশোর সফটওয়ার পার্ক, নাটোর ফ্রিল্যান্সার ইন্সটিটিউট ও বিভাগীয় পর্যায়ে রয়েছে আইটি ভিলেজ। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি উল্লেখ করার মতো। বাকি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি খুব একটা নেই বললেই চলে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য গাজীপুরে হাইটেক পার্ক শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাইটেক বা আইসিটি পার্ক স্থাপন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য সময়োপযোগী কার্যক্রম হাতে নেয়া হয় কয়েক বছর আগে। কিন্তু প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতিহীনতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৬২ দশমিক ৮৩ একর জমির ওপর ইলেক্ট্র্রনিক সিটি স্থাপন করা হবে। ঢাকার মহাখালীতে ৪৭ একর জমির ওপর প্রস্তাবিত আইটি ভিলেজ নির্মাণের জন্য এখনও ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি। রাজশাহীতে ৩৪ দশমিক ৫৬৩১ একর জমিতে আইটি ভিলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় জনতা টাওয়ার সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক পুরোপুরি চালু হয়নি। এক মাত্র যশোরে সফটওয়ার পার্কের ডরমেটরি বিল্ডিং ও এমটিবি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কটি ১৫ তলা ভবনবিশিষ্ট হবে। নাটোরে ফ্রিল্যান্সার ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য এক দশমিক ২৩৯৩ একর জমি এবং নাটোর আইটি ভিলেজ স্থাপনের কাজ শুরুই হয়নি। এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে টেকনোলজি পার্ক বা আইটি ভিলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পে কনসালটেন্ট নিয়োগও করেছে মন্ত্রণালয়। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজে হাত দেয়া হবে। অনেক প্রকল্প ২০১৮ সালের আগে শেষ হবে না। তবে বিসিএসআইআর এর ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং তথ্য প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয়করণ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় বৈজ্ঞানিক ডাটাবেজ, মানবসম্পদ ডাটাবেজ, ফিনান্সিয়াল ডাটাবেজ, লাইব্রেরি ডাটা বেজ ও মেডিক্যাল ডাটাবেজের জন্য সফটওয়ার তৈরি করা হচ্ছে। এখন সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই সেবাগুলো মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেক দূর এগিয়েছে। বেশ কয়েকটি ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ জনবল তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দক্ষ জনবল তৈরির কাজ অব্যাহত রয়েছে। ২০২১ সালের আগেই দেশে ৭০ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সৃষ্টি হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার টার্গেট বাস্তবায়ন হবে। আইসিটি-ইকোসিস্টেমের সব অনুষঙ্গ প্রস্তুত করা হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যপ্রযুক্তি যেমন অফুরান সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে তেমনিভাবে কিছু চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন করছে। এ সব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে নিয়ত পরিবর্তনশীল তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি, বিগ ডাটা এনালাইটিকসহ তথ্যপ্রযুক্তির চলমান ও ভবিষ্যত ধারায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এ জন্য দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদেশী বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ না করলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বমানের জনবল গড়ে উঠবে না।
×