মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ মানে ঈদের দিনটি নয় শুধু। পরের কয়েকদিনও হাসি, রাশি আনন্দে কাটে। এবারও তাই। বুধবার ছিল ঈদ-উল-আজহা। ইতোমধ্যে কয়েকদিন গত হয়েছে। তাতে কি? রেশ কাটেনি এখনও। আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ পর্ব চলছে। একই সঙ্গে চলছে ঘুরে বেড়ানো। ফাঁকা ঢাকায় যে যার মতো করে ঘুরছে। বেড়াচ্ছে। খোলা জায়গা, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঈদ উদ্যাপনের সঙ্গী হয়েছে। দেখে মনেই হয় না শহর ঢাকায় কোন দুঃখ আছে। এ যেন আনন্দ নগরী। এ উৎসব যেন ফুরোবার নয়।
উৎসবের রঙটা মূলত ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশু-কিশোররা। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে তাদের সরব উপস্থিতি। ঢাকা শিশু পার্কের কথাই আগে বলতে হয়। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা সব সময়ই একটু বেশি। ঈদের দিন থেকেই জায়গাটি অধিকার করে নিয়েছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। সাধারণ সময়ে পার্কের দরজা খোলা হয় বেলা ২টায়। এখন খোলা হচ্ছে সকালে। সকাল ১০টা থেকে খোলা। রাত ৮ টা পর্যন্ত আসা-যাওয়া করছে বাচ্চারা। এখানে ১০টির মতো রাইড। উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, ০৩ মেরি-গো-রাউন্ড, লম্ফঝম্ফ, চাকা পায়ে চলা, টয় ট্রেন- সবটিতেই চড়ছে তারা। ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকেটে শিশু পার্কে প্রবেশ ও রাইড উপভোগ করতে পারবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শিশু পার্ক।
চিড়িয়াখানা একটু দূরে। মিরপুরের শেষ প্রান্তে। এর পরও প্রচুর দর্শনার্থী। অন্যান্য সময়ের মতো ঈদেও সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে চিড়িয়াখানা। এখানে বানর দেখার মধ্য দিয়ে শুরু। তার পর বাঘ, হাতি, জিরাফ, জেব্রা ও হরিণ...। এভাবে কতশত প্রাণী দেখা! ঈদ উপলক্ষে এখানে আনা হয়েছে নতুন প্রাণীও। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে দুই জোড়া আফ্রিকান সাদা সিংহ আনা হয়েছে। এসেছে একজোড়া কালো ভালুক। উটপাখি ও ইমু, লাভ বার্ডগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন। তাই আগ্রহ নিয়ে দেখছেন সবাই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১ লাখ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন।
জাতীয় জাদুঘর খোলা আছে ঈদের পরদিন থেকে। শাহবাগে অবস্থিত জাদুঘরে সাধারণ দর্শনার্থীর ভিড়। বিশাল জাদুঘরের প্রতিটি গ্যালারি ঘুরে দেখছেন তারা। এখানে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অনেকেই ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে আসছেন।
মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও এলাকার মানুষের অন্যতম প্রধান গন্তব্য শিশুমেলা। এখন অবশ্য নতুন নাম ধারণ করেছে। মালিকানা গ্রহণ করেছে সিটি কর্পোরেশনের। এখানে আছে ৪০টির মতো রাইড। ছেলেরা যেমন চড়ছে বুড়োরাও তেমনি। প্রতিটি রাইডের পাশে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা। তারপর চড়ার সুযোগ। তখন আনন্দ আর ধরে না। ঈদের প্রথম দিন সকাল ১০টা থেকে খোলা রাখা হয়েছে। বন্ধ হচ্ছে রাত ৯টায়।
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দন পার্কে তো উপচে পড়া ভিড়। ঈদের প্রথম ৭ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ফ্যান্টাসি কিংডম। এখানে চমকপ্রদ অনেক রাইড। সেই সঙ্গে ওয়াটার কিংডমে সাঁতার কাটার সুযোগ। ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব সøাইড, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইড আছে। দারুণ উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। প্রায় একই ছবি নন্দন পার্কের। এখানেও মূলত জলকেলি। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে গা ভেজানোর অদ্ভুত সব আয়োজন। নেচেগেয়ে দারুণ আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
এসবের বাইরে পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিলের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আনন্দ। চালু রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিংশলের ফুডকোর্ট। খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে চলছে আড্ডা। পাশেই স্টার সিনেপ্লেক্স। সেখানে নতুন নতুন মুভি দেখার সুযোগ। যমুনা ফিউচার পার্কেও ঈদের রেশ। ‘ব্লকবাস্টারে’ দেশী-বিদেশী ছবি। অনেক রেস্তরাঁ খোলা রাখা হয়েছে। এসবের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, মানিক মিয়া এভিনিউসহ খোলামেলা জায়গাগুলাতে আপনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকার মানুষ। এই বেড়ানো, এই উৎসব আনন্দ আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে।