ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়;###;আগামীকাল নেত্রকোনা

আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে, বিএনপি মরিয়া পুনরুদ্ধারে ॥ রাজশাহী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৭ আগস্ট ২০১৮

আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে, বিএনপি মরিয়া পুনরুদ্ধারে ॥ রাজশাহী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি নির্বাচনের পর পুরো জেলার ভোটের চিত্রই পাল্টে গেছে। বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ার পর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে নৌকার পালে যেন নতুন করে হাওয়া লেগেছে। পাল্টে গেছে ভোটের হিসাব-নিকাশও। সিটি নির্বাচনের পর এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজশাহীর ছয়টি জেলাতেই বইছে ভোটের হাওয়া। এখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নৌকার পালে হাওয়া লাগায় রাজশাহীর ছয়টি আসন আগামী নির্বাচনেও ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগসহ চৌদ্দ দলীয় জোট। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিই বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখছেন প্রার্থীরা। সিটি নির্বাচনে ভরাডুবির পর নির্বাচনী মাঠে অনেকটাই বিবর্ণ হয়ে পড়েছে বিএনপির ধানের শীষ। এক সময়ের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর ছয়টি আসনেই দলটির সাংগঠনিক অবস্থা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় নড়বড়ে। তবুও বিএনপি চায় তাদের হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। তবে প্রতিটি আসনেই বড় দুই দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। মনোনয়ন নামক সোনার হরিণ ধরতে উভয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীদের পরিবর্তে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ দলেরই সম্ভাব্য প্রার্থী ও এমপিদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর। এখনই শক্তহাতে এসব কোন্দল-দ্বন্দ্ব ও বিভেদ দূর করতে না পারলে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন যেমন হাতছাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি বিএনপিরও আসন পুনরুদ্ধারের আকাক্সক্ষা গুড়েবালি হয়েই থাকবে। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিই রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। আর রাজশাহী সদর আসনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ছয়টি আসনে এবার পুরোনোরা মনোনয়ন আঁকড়ে ধরার পাশাপাশি নতুনদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। তবে রাজশাহীর এই ছয়টি আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে ভোটারদের অভিমত হচ্ছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যদি একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারে এবং সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে আবারও সবকটি আসন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হতে পারেন। রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন ॥ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়নে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাকায় এবং বিএনপির সংস্কারপন্থীদের কাতারে ভিড়ায় আমিনুল হকের পরিবর্তে তার ভাই এনামুল হককে দলীয় মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে সাবেক পুলিশ প্রধান এনামুল হক পরাজিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে। গত নির্বাচনেও তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তবে এবার বিএনপির প্রার্থী হয়ে অংশ নিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তিনি ছাড়াও এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে ইতোমধ্যে প্রচারে নেমেছেন দলের চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব জহুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান মার্কনি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শাহিন। তবে এ আসনে বিএনপির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শরিক দল জামায়াত। দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির আরও তিন নেতা অনেক দিন থেকেই এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। জোটগত নির্বাচন হলে বিএনপিকে যে কয়েকটি আসন জামায়াতকে ছেড়ে দিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম রাজশাহী-১ আসন। অন্যদিকে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন খান। তবে নৌকা মার্কার মনোনয়ন যিনি পাবেন তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন এমনটাও বলছেন তারা। এ আসনে বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। মনোনয়ন লাভের ক্ষেত্রে এবারও তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে এক হয়ে মাঠে নেমেছেন দলের সাতজন নেতা। যারা নিজেদের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে দাবি করছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় তারা ‘সেভেন স্টার’ নামে পরিচিত পেয়েছেন। যেকোন মূল্যে এমপি ফারুক চৌধুরীর মনোনয়ন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তিনি আগেও দুইবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। রাজশাহী-২ (সদর) আসন ॥ এ আসনটিও ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত দখলে ছিল বিএনপির। ২০০৮ সালে চৌদ্দ দলীয় জোটের প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এ আসন থেকে সংসদ নির্বাচিত হন। তার কাছে পরাজিত হন দুইবারের সাংসদ ও তিনবারের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। গত নির্বাচনেও দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন ফজলে হোসেন বাদশা। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে আবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমে পড়েছেন মিজানুর রহমান মিনু। যদিও বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মহানগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর থেকে মিনু-বুলবুলের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। ফলে এই আসনটিতে আগামীতে মনোনয়ন দৌড়ে আসতে পারেন বিএনপির প্রবীণ নেতা কবীর হোসেন ও দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে শেষ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচিত পরাজিত মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। অন্যদিকে ফজলে হোসেন বাদশা ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাবির সাবেক উপাচার্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর আবদুল খালেক ও জাতীয় পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। তবে ১৪ দলীয় জোট অটুট থাকলে ফজলে হোসেন বাদশাই এ আসনে পুনরায় মনোনয়ন পেতে পারেন এমনটাই শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, জোটের প্রার্থী হিসেবে যিনি মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই সবাই থাকবেন। বর্তমানে নির্বাচনের মৌসুম শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়েছে নগরী সমৃদ্ধ এ আসনে। সিটি নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে এ আসনের মনোনয়ন যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে সিটি ভোটে বিপুল ব্যবধানে নৌকার জয়লাভের পর নতুন আশা সঞ্চার করেছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। যদিও জোটগত নির্বাচন হলে অনেকটায় মনোনয়ন নিশ্চিত হয়ে আছে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন ॥ এ আসনটি ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে সৃষ্ট হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কারা নির্যাতিত আওয়ামী লীগ নেতা আয়েন উদ্দিনকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আয়েন উদ্দিনের কাছে প্রায় ৭২ হাজার ভোটে পরাজিত হন সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। এরপর দলের সভাপতি পদ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়। কিন্তু গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সহসভাপতির পদ দেয়া হয় তাকে। এরই মধ্যে আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা আবার নতুন করে মাঠে নেমেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক ডজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের বেশির ভাগের বাড়ি নেই এই সংসদীয় এলাকায়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে মূল লড়াইয়ে থাকবেন বর্তমান এমপি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এ আসানে আসাদুজ্জামান আসাদ মনোনয়নের সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন বলেও তার দাবি। আর বিএনপির আধা ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকবেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। এ প্রসঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আমি প্রতিবাদ করায় গ্রেফতার হয়ে সাড়ে তিন বছর জেলে ছিলাম। এর প্রতিদান হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেন। গত সাড়ে চার বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড আবার আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমার বিশ্বাস। আয়েন উদ্দিন, মিরাজ উদ্দিন মোল্লা, আসাদুজ্জামান আসাদ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে আরও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু এবং পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী। বিএনপি থেকে এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মিলন ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আরও রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট কামরুল মনির, রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রায়হান। এ আসনটিতেও রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইতোমধ্যে মনোনিত হয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। এ আসনে জামায়াতের কোন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন ॥ এ আসনটিও ২০০৮ সাল থেকে সৃষ্টি হয়। আগে মোহনপুর ও বাগমারা নিয়ে ছিল রাজশাহী-৩ আসন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে কেবল বাগমারা নিয়েই একটি আসন করা হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবার এনামুল হক ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি জঙ্গী অধ্যুষিত এ আসনে সন্ত্রাস ও জঙ্গী নির্মূলে অনেক সোচ্চার রয়েছেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। এ কারণে এবারও মনোনয়ন দৌড়ে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তবে মনোনয়ন কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে অন্য নেতাদের বিরোধ দ্রুত মিটিয়ে না ফেললে আগামী নির্বাচনে সমস্যা হবে বলেই মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। অন্যদিকে এ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন ৯ জন। যাদের অনেকেই ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। এ আসনে একাধিকবার নির্বাচিত এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা আবু হেনা। সংস্থাপন্থী হওয়ার কারণে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন এই সাবেক সংসদ সদস্য। এরপর তার বহিস্কারাদেশ আর প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে তিনিও এবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপির অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক এমপি অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল গফুর, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, জিয়া পরিষদের নেতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডাঃ জাহিদ দেওয়ান শামীম, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক মকলেছুর রহমান ম-ল, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুর রাজ্জাক প্রমাণিক, বাগমারা উপজেলা সভাপতি ডিএম জিয়াউর রহমান, তাহেরপুর পৌরসভার সভাপতি আবু নাইম শামসুর রহমান মিন্টু এবং ড্যাবের সদস্য ডাঃ আশফাকুর রহমান শেলি। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন ॥ কৃষি ও মৎস্য চাষে সমৃদ্ধ এই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। বিএনপির কব্জা থেকে আসনটি উদ্ধার করে ২০০৮ সাল এবং সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তিনি। দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে আগামী নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের আরও পাঁচ নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন- সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মনসুর রহমান ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, আবদুল ওয়াদুদ দারা দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলের মধ্যে বিভেদ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে টাকার বিনিময়ে স্কুল-কলেজে চাকরি দেয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই সঙ্গে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নেরও অভিযোগ রয়েছে এমপির বিরুদ্ধে। এ কারণে পুঠিয়া-দুর্গাপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগে এমপিবিরোধী একটি শক্ত বলয় তৈরি হয়েছে। তবে এমপির সমর্থকরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এসব কুৎসা রটাচ্ছেন, যার কোন ভিত্তি নেই। আসনটিতে টানা ১০ বছর এমপি ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফা। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। ফলে ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ম-ল। হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে। এ দু জন নেতাই দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া। এ দু জন নেতা ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন- কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল করিম সনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবু কবর সিদ্দিক, দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জুম্মা ও দুর্গাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মন্টু। রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন ॥ এ আসনটি আগে বিএনপির দখলে থাকলেও ২০০৮ সালে নতুন মুখ হিসেবে প্রার্থী হয়েই বাজিমাত করেন বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তরুণ প্রজন্মের প্রার্থী হয়ে গত নির্বাচনেও দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। টানা দুইবারের এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের করা ফলে এই আসনে আগামী নির্বাচনেও শক্ত প্রার্থী হচ্ছেন শাহরিয়ার আলম। এলাকার ভোটারদের মতে আগামী নির্বাচনেও শাহরিয়ার আলমই নিশ্চিত মনোনয়ন পাবেন। আর বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ। তবে গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই আরেক সাবেক এমপি রায়হানুল হক। কিন্তু তিনি পরাজিত হন বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে। রায়হানুল হক এবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন। চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম বলেন, দুই উপজেলার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির থেকে শুরু করে সবখানেই শাহরিয়ার আলমের উন্নয়নের ছোঁয়া। তিনি বাঘা পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণী ও আড়ানী পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করেছেন। দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের রাস্তা পাকা এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। শাহরিয়ার আলম শতাধিক গরিব শিক্ষার্থীকে নিজ খরচে লেখাপড়া করান। হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও আসছে নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতাম, যদি শাহরিয়ার আলম না থাকতেন। শাহরিয়ার আলম এলাকার উন্নয়ন দিয়েছেন। এত উন্নয়ন আগে কখনও হয়নি। আমার কাছে উন্নয়নই বড় কথা। তাছাড়া শাহরিয়ার আলম দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণীপেশার মানুষের হৃদয়ে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়া তৃণমূলের সব নেতাকর্মীই তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। দলের ভেতরে এখন কোন বিভেদ নেই। তাই আগামী নির্বাচনে শাহরিয়ার আলমের কোন বিকল্প নেই। তিনি মনোনয়ন নিয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছেন। তবে মনোনয়ন নিয়ে কিছুই ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, নিজের মনোনয়ন নিয়ে ভাবছি না। উন্নয়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। সেটা ভেবেই কাজ করছি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে আছি। সরকারী সহযোগিতা না পেলে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা দিয়েছি। এলাকার উন্নয়ন করেছি। ফলে আমার উন্নয়নের কথা একবার মনে করলে জনগণ অন্যদিকে যাওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই। এ দিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের টানা দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবশীষ রায় মধু, রমেশ দত্ত, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক এবং যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল।
×