ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লর্ডস বিপর্যয়ে দিশেহারা কোহলি

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 লর্ডস বিপর্যয়ে দিশেহারা কোহলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লর্ডস টেস্টের চতুর্থদিনে ইনিংস ও ১৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০তে’ পিছিয়ে পড়েছে ভারত। বৃষ্টিতে প্রথমদিনের পুরোটা নষ্ট হওয়ায় কার্যত আড়াই দিনে ইনিংস হার ‘অধিনায়ক’ বিরাট কোহলির ক্যরিয়ারের সবচেয়ে বাজে উদাহরণ। ৩৬ টেস্টের নেতৃতে সুপার ব্যাটসম্যানের এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। ইংলিশ পেসারদের তোপের মুখে দিশেহারা সফরাকারীরা অলআউট ১০৭ ও ১৩০ রানে। দুই ইনিংস মিলিয়ে খেলতে পেরেছে মাত্র ৮২.২ ওভার; এক ইনিংসেরও (৯০ ওভার) কম। অথচ ৮৮ ওভারেই ৭ উইকেটে ৩৯৬ রান করে নিজেদের একমাত্র ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এমন হারের পর কোনরকম রাখঢাক না করে ভারত অধিনায়ক বলেছেন, এই হার তাদের প্রাপ্য ছিল। কোহলি বলেন, ‘সত্যি বলতে নিজেদের শেষ পাঁচ টেস্টের মধ্যে এই প্রথম আমাদের এতটা দিশেহারা দেখিয়েছে। লর্ডসে যেভাবে খেলেছি তাতে হারই প্রাপ্য ছিল।’ তাহলে কি পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেন না ভারতের ক্রিকেটাররা? ভারতীয় অধিনায়কের উত্তর, ‘পরিবেশকে দোষারোপ করার কোন প্রশ্নই নেই। পিচ বোলারদের সহায়তা করলেও সঠিক জায়গায় বলটা তো ফেলতে হবে। এখানেই ওদের (ইংল্যান্ড) বোলারদের বিরুদ্ধে একেকটি রান করার জন্য আমাদের কষ্ট করতে হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু বোলারদের দায়টাও কম নয়।’ বৃষ্টির জন্য প্রথমদিনের খেলা ভেসে গিয়েছিল। সেই অর্থে আড়াই দিনে লজ্জাজনক হারের মুখ দেখতে হয়েছে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ভারতকে। দ্বিতীয়দিন খেলা শুরুর পর ৩৫ ওভার ২ বলে ১০৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ ওভারে মাত্র ১৩০ রানে অলআউট তারা। হারের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে কোহলি আরও বলেছেন, ‘দল বাছাইয়ে ভুল ছিল।’ ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে পিচে সুইং সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন লর্ডসের সেই পিচেই ইংল্যান্ডে প্রথম ইনিংসে ৩৯৬ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। দুই স্পিনারকে নিয়ে নেমেছিল ভারত। তারা দু’জনেই বল হাতে সফল হতে পারেননি। তরুণ কুলদীপ যাদব সাকুল্যে হাত ঘুরিয়েছেন ১০ ওভার। অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিনও ১৭ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। আগে থেকেই ছিল বৃষ্টির আভাস। প্রথমদিনের পুরোটা ভেস্তে যাওয়ার পরও ভারত যেভাবে দুই স্পিনারকে দলে রেখেছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ম্যাচের পর কোহলি বলেছেন, ‘হারের পর মনে হচ্ছে দল গঠনে ভুল হয়েছিল। আমরা সম্ভবত কিছুটা আগেই দল বেছে নিয়েছিলাম।’ ভারত অধিনায়ক অকপটে স্বীকার করেছেন টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে এটাই ভারতের সবচেয়ে জঘন্য হার। লর্ডসে প্রথমদিন বৃষ্টির জন্য খেলা হয়নি। তবুও দ্বিতীয়দিন টসের আগে একজন পেসারকে বসিয়ে অতিরিক্ত স্পিনার খেলিয়েছে ভারত। বিরাট মনে করেন, তার এই সিদ্ধান্ত কাজে লাগেনি। বলছেন, ‘সত্যি, এখন মনে হচ্ছে, দলগঠনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল ছিল। আসলে আমরা বুঝতে পারিনি পেসারদের এতটা সাহায্য করবে এই উইকেট।’ অন্যদিকে ইংল্যান্ড দলের প্রশংসা করে কোহলি বলেছেন, ‘ওরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছে। বিশেষ করে ওদের বোলাররা পর্যন্ত দলের জন্য রান করতে আগ্রহী ছিল। যেটা আমাদের মধ্যে ছিল না।’ ভারতের বিপর্যয়ের পরে সঞ্জয় মাঞ্জারেকর টুইট করেন, ‘এর পরের টেস্টে আমাদের একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলাতেই হবে।’ এজবাস্টনের প্রথম টেস্টে হারের পরই অনেকে যেটা বলে আসছিলেন। পাশাপাশি সফরকারীদের উদ্বেগের কারণ বিরাটের পিঠের ব্যথা। এ বিষয়ে অবশ্য বিরাট বলেন, ‘কোমরের কাছে ব্যথা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তৃতীয় টেস্টে আগে পাঁচদিন সময় পাচ্ছি। আশা করছি, এর মধ্যে সেরে উঠব।’ সৌরভ গাঙ্গুলীও দলের ব্যাটিংয়ে বিরক্ত, ‘এত ঠুকঠুক করে খেলার কী আছে, কে জানে!’ আর হরভজন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলারের সঙ্গে মননস্তাত্ত্বিক যুদ্ধটাও জিততে হবে। এত ঘাড়ে চড়তে দিলে তো নিজেদের পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যাবে।’ অজিঙ্কা রাহানে চার বছর আগে লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবারের সফরে তাকেও দিশাহীন দেখাচ্ছে। দীনেশ কার্তিকের টেস্ট ক্যারিয়ার যদি লর্ডসের পরও অক্ষত থাকে তা হলে বুঝতে হবে ভারতীয় ক্রিকেটে ঘোর দুর্যোগ উপস্থিত। কারও কারও মনে হচ্ছে, ট্রেন্ট ব্রিজ থেকেই ঋষভ পন্থকে নামিয়ে দেয়া হোক। আড়াই দিনে হারের চেয়ে খারাপ আর কী হবে।
×