ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী হলো আরও ২৭১ বেসরকারী কলেজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৩ আগস্ট ২০১৮

 সরকারী হলো আরও ২৭১ বেসরকারী কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার, মামলা, মানহীন বেসরকারী কলেজ সরকারী করাসহ নানা বিতর্ক শেষে অবশেষে দেশের ২৭১ বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণের সরকারী আদেশ জারি হয়েছে। রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব নাসিমা খানমের স্বাক্ষরে এ আদেশ জারি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর রবিবার এ আদেশ জারি করা হলো। এ নিয়ে এখন দেশে সরকারী কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৯৮। এতদিন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, সরকারী আলিয়া মাদ্রাসাসহ সরকারী কলেজের সংখ্যা ছিল ৩২৭। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা কি হবে তা নিয়ে গত ৩১ জুলাই একটি নতুন বিধিমালাও জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন সরকারী হওয়া শিক্ষকদের অবস্থান, বদলি ও পদোন্নতির বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হবে নতুন বিধিমালা অনুযায়ী। সরকারী হওয়া কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা জেলার ৪, মানিকগঞ্জের ৪, নারয়ণগঞ্জের ৩, মুন্সীগঞ্জের ৩, গাজীপুরের ৩, নরসিংদীর ৪, রাজবাড়ির ২, শরীয়তপুরের ৪, ময়মনসিংহের ৮, কিশোরগঞ্জে ১০, নেত্রকোনার ৫, টাঙ্গাইলে ৮, জামালপুরে ৩, শেরপুরে ৩, চট্টগ্রামে ১০, কক্সবাজারে ৫, রাঙ্গামাটি ৪, খাগড়াছড়িতে ৬, বান্দরবানে ৩, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ফেনীতে একটি করে, কুমিল্লায় ১০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬, চাঁদপুরে ৭, সিলেটে ৯, হবিগঞ্জে ৫, মৌলভীবাজারের ৫, সুনামগঞ্জে ৮, রাজশাহীতে ৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২, নাটোরে ৩, পাবনায় ৭, সিরাজগঞ্জে ৩, নওগাঁ জেলায় ৬, বগুড়ায় ৬, জয়পুরেহাটে একটি, রংপুরে ৭, নীলফামারীতে ৪, গাইবান্ধায় ৪, কুড়িগ্রামে ৭, দিনাজপুরে ৯, লালমনিরহাটে ৩, ঠাকুরগাঁওয়ে একটি, পঞ্চগড়ে ৪, খুলনায় ৫, যশোরে ৫, বাগেরহাটে ৬, ঝিনাইদহে একটি, কুষ্টিয়ায় ২, চুয়াডাঙ্গায় ২, সাতক্ষীরায় ২, মাগুরায় ৩, নড়াইলে একটি, বরিশালে ৬, ভোলায় ৪, ঝালকাঠিতে ৩, পিরোজপুরে দুই, পটুয়াখালীতে ছয়টি ও বরগুনায় তিনটি করে কলেজ রয়েছে। এই ২৭১ বেসরকারী কলেজ সরকারী হওয়ার পর দেশে মোট সরকারী কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৯৮। এ ২৭১ কলেজে রয়েছেন অন্তত ১০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। রবিবার থেকেই তারা সরকারী বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধা পাবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে সরকারী স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণা অনুসারে বিভিন্ন সময়ে ৩২৯ স্কুল ও ২৯৯ কলেজ জাতীয়করণে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশির) কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক সব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের সব সম্পত্তি সরকারকে ডিড অব গিফট (দানপত্র) দলিল করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। কিন্তু বেসরকারী থেকে সরকার হলেও বেসরকারী এ শিক্ষকদের বিসিএস ক্যাডার মর্যাদা দেয়া নিয়ে আপত্তি ওঠে শিক্ষা ক্যাডার ছাড়াও শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকেও। একপর্যায়ে জাতীয়করণ করা হলেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির আপত্তিতে আটকে যায় কলেজ সরকারীকরণের আদেশ জারির প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয়ের বেসরকারী কলেজ শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিপ্রাপ্ত ২৯৩ কলেজ সরকারী করতে অর্থ ছাড়ের সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতি বছর ১০০ কলেজ জাতীয়করণের প্রস্তাব দিয়ে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছিল। তিন ধাপে জাতীয়করণ হলে অসম প্রতিযোগিতা ও ঘুষ দুর্নীতির আশঙ্কায় একসঙ্গে জাতীয়করণ করতে পাল্টা চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণে অর্থ মন্ত্রণালয় কোন বরাদ্দ রাখেনি। জাতীয়করণসহ চার হাজার ৯৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন সচিব সোহরাব হোসাইন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ৩২৯ স্কুল ও ২৯৯ কলেজ সরকারীকরণের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে সরকারীকরণ কার্যক্রমের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন সরকারীকরণকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ শুরু হচ্ছে। এজন্য আগামী অর্থবছরে সরকারীকরণকৃত ৩২৭ স্কুলের জন্য ৩৪৯ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার এবং ২৯৯ কলেজের জন্য ৬২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। দেশে বর্তমানে ৩৩৫ সরকারী কলেজ রয়েছে। ৩১৫ উপজেলায় কোন সরকারী কলেজ নেই।
×