ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা সার কারখানায় ইউরিয়া সারের বস্তা সরবরাহের অভিযোগ

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধুচক্র

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৭ আগস্ট ২০১৮

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধুচক্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ বিসিআইসি কর্তৃক চীন থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সারের প্রতি বস্তায় ওজনে কম থাকার অভিযোগ উঠেছে। ৫০ কেজির এক বস্তার সারে ৩ কেজি থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজনে কম থাকার অভিযোগ উঠলেও যমুনা সার কারখানা কর্তৃপক্ষ বিসিআইসির নির্ধারিত ডিলারদের মধ্যে ওই সার সরবরাহ করায় একদিকে ডিলাররা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন এবং সার ক্রেতা সাধারণ কৃষকদের কাছে বিশ্বস্ততা হারাচ্ছেন। অন্যদিকে কৃষক খুচড়া বাজার ওজনে কম থাকা সারের বস্তা কিনে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জামালপুরের সার ডিলাররা। ওই অসাধুচক্রটি ওজনে কম থাকা সার সরবরাহ অব্যাহত রাখায় জামালপুরের সার ডিলারদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যমুনা সার কারখানা সূত্রে জানা গেছে, তিতাস গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় যমুনা সার কারখানার উৎপাদন গত পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে ইউরিয়া সার বিদেশ থেকে আমদানি করে যমুনা সার কারখানার আওতাধীন টাঙ্গাইল, শেরপুর ও জামালপুর জেলার কৃষকদের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে বিসিআইসির মাধ্যমে সৌদি আরব ও চীন থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার যমুনা সার কারখানায় সরবরাহ করছে বিসিআইসির নির্ধারিত জামালপুরের মেসার্স নবাব ট্রেডার্সসহ কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা বল মার্কা সার ক্রয় করা হয় ১৫ হাজার মেট্রিক টন। অভিযোগ ওঠে এই বল মার্কা সার নিয়েই। ওই সার তিন জেলার ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হলে বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারে ৩ কেজি থেকে ৫ কেজি করে ওজন কম থাকার অভিযোগ ওঠে। এতে ডিলার এবং কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারের বর্তমান বাজারমূল্য ৮০০ টাকা করে। কৃষকরা ওই সারের বস্তা কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চীন থেকে আমদানি করা সারের বস্তায় ওজনে কম থাকার অভিযোগ উঠলেও যমুনা সার কারখানা কর্তৃপক্ষ ডিলারদের কাছে ওই সার সরবরাহ করায় ডিলাদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর সারাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা থাকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। বিসিআইসির ইউরিয়া উৎপাদনকারী ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিসিআইসি চারটি কারখানা বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে সিলেটের শাহ জালাল ও জামালপুরের যমুনা সার কারখানায়ও উৎপাদন কমে গেছে। কয়েক মাস চলে, আবার কয়েক মাস বন্ধ থাকে। ফলে বিসিআইসি বর্তমানে প্রতি বছর মাত্র সর্বোচ্চ ৩ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও সরকার আমদানি নির্ভর ইউরিয়া সার সরবরাহ করে দেশের সারের চাহিদা মেটাচ্ছে। এ জন্য সরকার বিসিআইসির মাধ্যমে কাতার, সৌদি আরব, চীন, আলজিরিয়াসহ ৫/৬টি দেশ থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করে দেশের বাফার গুদামে মজুদ রাখে। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন জেলার ডিলারদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। যেসব দেশ থেকে সরকার ইউরিয়া সার আমদানি করে তার মধ্যে একমাত্র চীন ব্যতীত বাকি দেশগুলো সরাসরি ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় ইউরিয়া সার সরবরাহ করে। কিন্তু চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো লুজ ইউরিয়া সার জাহাজের কার্গোতে করে রফতানি করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, চীন থেকে আমদানি করা লুজ সার বিসিআইসির নির্ধারিত ঠিকাদার বন্দরে জাহাজ থেকে সার নামানের সময় ব্যাগিং করে। একই সঙ্গে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্দর থেকে ট্রাকে লোডিং, কেরিং, আনলোডিংয়েরও কাজ করে। জাহাজ থেকে ব্যাগিং করার সময়ই ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দিয়ে বস্তায় ভরে সার সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে সার ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফারটিলাইজার এ্যাসোসিয়েশন জামালপুর জেলা শাখার আওতাধীন ডিলাররা যমুনা সার কারখানা কর্তৃপক্ষকে প্রতি বস্তায় ওজনে কম থাকার বিষয়টি অবহিত করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো চীন থেকে আমদানি করা বল মার্কা ওই ইউরিয়ার সার পুরোটাই কৌশলে ডিলারদের সঙ্গে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফারটিলাইজার এ্যাসোসিয়েশন জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, চীনের বল মার্কা ইউরিয়া সার সরবরাহকারী বন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুধু জামালপুর জেলাতেই নয়, সারাদেশের প্রতিটি জেলায় হাজার হাজার মেট্রিক টন বল মার্কা ইউরিয়া সার সরবরাহ করে প্রতি বস্তায় ওজনে কম দিয়ে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই অভিযোগে দুর্নীতি পরায়ণ ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হলেও দুদকের কোন সারা পাওয়া যায়নি। এ দিকে চীন থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সারের বস্তায় ওজনে কম থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ যমুনা সার কারখানার আওতাভুক্ত জেলাগুলোর জন্য সারের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে আমদানিকৃত ইউরিয়া সার ক্রয় শুরু করেছে। আসছে সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত মৌসুমে ডিলারদের সঙ্গে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপক (বিপণন) গোকুল চন্দ্র সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বল মার্কা ইউরিয়া সারের ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তায় ওজনে কম থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা প্রায় ৬০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার রিব্যাগিং করে বিপণন করেছি। একই সঙ্গে চীন থেকে ওই সার আমদানি বন্ধ করে দিয়েছি।
×