ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল উত্তর চট্টগ্রাম

জাতীয় পার্টির দুর্গে ভাগ বসাতে চায় আওয়ামী লীগ ॥ কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৫ আগস্ট ২০১৮

জাতীয় পার্টির দুর্গে ভাগ বসাতে চায় আওয়ামী লীগ ॥ কুড়িগ্রাম

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ দীর্ঘদিন থেকেই কুড়িগ্রাম জেলাকে জাতীয় পার্টির দুর্গ বলা হতো। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে জাতীয় পার্টির দুর্গ ততই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সবল হচ্ছে নৌকার শক্ত অবস্থান। জেলার চার আসনের কোথাও বিএনপি কখনোই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি। প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান এবং বিশাল ভোট ব্যাংক থাকলেও জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কে নিরাশ হতে হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলেও দশম জাতীয় নির্বাচনে চার আসনই ছেড়ে দিতে হয়েছে জাতীয় পার্টি কিংবা জাতীয় পার্টি (জেপিকে)। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার ৪ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩টি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এবং ১টি আসন জাতীয় পার্টি জেপির দখলে রয়েছে। এবার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলে গেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এবার আসনগুলো ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা হাতে গোনা হলেও প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। তবে নির্বাচনী জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কে কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীই স্পষ্ট করে জানেন না কার ভাগ্যে জুটবে মনোনয়ন। নাকি গত নির্বাচনের মতো আবারও শরিক দলগুলোকে আসন ছেড়ে দিতে হবে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, জাতীয় পার্টির আগের অবস্থান এখন আর নেই। জেলার লাঙ্গলের ভোটাররাই এখন আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির তুলনায় প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগের রয়েছে শক্ত অবস্থান। নৌকার পক্ষের ভোটার-সমর্থক অন্যান্য যে কোন দলের তুলনায় বেশি কুড়িগ্রামের চার আসনেই। তাই তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে জনপ্রিয় দলের প্রার্থীকে এবার মনোনয়ন দিলে চার আসনের মধ্যে তিন আসনেই নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এবারে মনে প্রাণে নৌকা প্রতীকে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে চান আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। জনপ্রিয়তা কিছুটা কমলেও কুড়িগ্রামের চার আসনেই জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রয়েছেন অনেকটাই নির্ভার। তারা আশা করছেন ক্ষমতায় যাওয়ার হিসাব-নিকাশ থেকে জেলার চার আসনই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সব কটি আসনেই ছাড় দিতে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারে। এদিকে বিএনপিও বসে নেই। চার আসনেই বিএনপি ভোটের হিসাবে কিছুটা দুর্বল থাকলেও জোট-মহাজোটের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে পৃথক নির্বাচন হলে প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। কুড়িগ্রাম-১ (ভুরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী) ॥ এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ হলেও জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রয়েছে একক প্রার্থী। মহাজোটের কারণে গত নির্বাচনে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এতে দলটির প্রার্থী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বর্তমান এই আসনের সংসদ সদস্য। পরপর চারবার তিনি এ আসন থেকে জাপার মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি এ আসনে একক প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় জোটের তোড়জোড় শুরু করেছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজারসহ সর্বত্র। এ আসনে আওয়ামী লীগের নিজস্ব বিশাল ভোট ব্যাংক থাকলেও জোট-মহাজোটের রাজনীতির কারণে আসনটি দখলে রাখতে পারছে না আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগের গ্রুপিংও রয়েছে চাঙ্গা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন উঠান বৈঠক, পোস্টার, বিল বোর্ড, সভা-সমাবেশ এবং স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন সম্ভব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীরা যে কোন মূল্যে আসনটি বাগিয়ে আনতে মরিয়া। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছলাম হোসেন সওদাগর, নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রধান, কৃষক নেতা মজিবর রহমান বীরবল, ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন, মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পপতি আখতারুজ্জামান ম-ল, মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও কেন্দ্রিয় যুবলীগের সদস্য ডাঃ মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল। ২০০৮ সালে নির্বাচনে শিল্পপতি গোলাম মোস্তফাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে মহাজোটের কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয় আওয়ামী লীগকে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী বদল করে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আছলাম হোসেন সওদাগরকে। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী একেএম মোস্তাফিজুর রহমানকে আসনটি ফের ছেড়ে দিতে হয়। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন আছলাম সওদাগর। আগামী সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়নের আশায় মাঠে রয়েছেন তিনি। মাঠপর্যায়ে পরিচিতি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করায় জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা দলের মনোনয়ন দলীয় নির্দেশে প্রত্যাহার করলেও থেমে থাকেননি। নির্বাচনী এলাকায় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় শিল্প কারখানা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান, সোনাহাট স্থলবন্দর, কচাকাটা থানাসহ কিছু কাজ করেছেন। তবে এলাকায় না থাকায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তার কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবুও গোলাম মোস্তফা চেষ্টা করছেন মনোনয়নের জন্য। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মজিবর রহমান বীরবল একবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তার বাবা সাবেক সাংসদ শামছুল হক চৌধুরীর মতো জনগণের পাশে থাকতে চান। গত কয়েক বছর থেকে শুধু পোস্টার ও বিলবোর্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়ে আসছেন ষাটের দশকের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান ম-ল। ওসমান গণি কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। এলাকার ব্যাপক গণসংযোগ করছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জনগণের কাছে থেকে কাজ করছেন তিনি। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা ডাঃ মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল। ভোটারদের মাঝে পরিচিতি বাড়াতে অক্লান্ত চেষ্টা করছেন। তার দাবি, ক্লিন ইমেজ এবং নতুন ও তারুণ্যদিপ্ত নেতৃত্বের জন্য দল তাকে বিবেচনা করবে। এ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন আ খ ম শহিদুল ইসলাম বাচ্চু। পরবর্তী সময়ে তার ভাগ্নে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এ আসনটি নিজের দখলে রেখেছেন। এবারও দলের একক প্রার্থী হিসেবে তিনি ব্যাপক নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তার দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির এ দুর্গে কাউকে ভাগ বসাতে দিতে রাজি না। বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের এলাকায় তেমন জনপ্রিয়তা নেই। তিনি নিজ এলাকায় বেশি সময় থাকেন না। টিআর-কাবিখা ও জিআর প্রকল্পে নানা অনিয়ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে স্বজনপ্রতির কারণ তার এলাকায় ব্যাপক দুর্নাম আছে। কিন্তু জোটের প্রার্থী হওয়ায় বার বার এ আসনে জয়লাভ করেন তিনি। এবার জাতীয় পার্টির দুর্গে হানা দিতে চায় বিএনপির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুর রহমান রানা। তাকে বিজয়ী করতে ভোটের রণকৌশল নির্ধারণে শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। বেশ কয়েকবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি একবারও। অবশ্য ’৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে সাবেক এমপি পদবির ধারণ করলেও আসল লড়াইয়ে জেতা হয়নি তার। এই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে তার শক্ত প্রতিপক্ষ ছিলেন জেলা জামায়াতের আমির আজিজুর রহমান। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির (জেপি) হয়ে গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন এ্যাডভোকেট রশীদ আহম্মেদ। এ বছরও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। কুড়িগ্রাম-২ (সদর-রাজারহাট-ফুলবাড়ি) ॥ জেলার এ আসনটি অত্যন্ত মর্যাদার। এ আসনের বর্তমান এমপি বিরোধীদল জাতীয় পার্টির চীফ হুইপ সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৭৯-২০০১ পর্যন্ত টানা ছয়বার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে এবার জাতীয় পার্টিকে এ আসনটিতে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে যে কোন মূল্যে আসনটি ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে জাতীয় পার্টি। তবে অতীতের মতো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নিজে প্রার্থী হয়ে সেক্ষেত্রে জোটের অঙ্ক অন্য দাঁড়াবে। তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘন ঘন দল বদলের কারণে তার কিছুটা দুর্নাম রয়েছে এলাকায়। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি ফেরদৌস আহমদ কোরাইশীর পিডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে জাপায় ফেরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এইচএম এরশাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি। উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলীর কাছেও শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর জাপায় ফিরে ২০১৪ সালের মহাজোটের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। জাতীয় পার্টির দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থার কারণে দলগতভাবে তার বিজয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে মহাজোটের প্রার্থী হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। তবে তাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে বিমানের সাবেক পরিচালক মেজর (অব) আবদুস সালামের নাম আলোচিত হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, চাকরি বিধিমালার কারণে গতবার মনোনয়ন পাননি। তবে এবার মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী। তবে বিরোধী দলের হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, একাধিকবার মন্ত্রীও ছিলাম। আমি শুধু আমার নির্বাচনী এলাকা নয়, কুড়িগ্রাম জেলাসহ গোটা দেশের হয়ে কাজ করেছি। আর কুড়িগ্রাম জাতীয় পার্টির দুর্গ। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের লাঙ্গল মার্কা এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে মিশে আছে। তৃণমূল পর্যন্ত দলের শক্ত ভিত রচনা করেছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ জাফর আলীর নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। মাঠপর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতির মাপকাঠিতে তিনি এখনও অন্যদের থেকে এগিয়ে। এছাড়াও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) আ ম সা আ আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ম-ল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সুফিয়ান ও ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডাঃ হামিদুল হক খন্দকারের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা সবাই দলের মনোনয়ন চাইবেন। সবাই বিলবোর্ড ও পোস্টার দিয়ে পরিচিতি অর্জনের চেষ্টা করছেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চেষ্টা করছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন। তার ক্লিন ইমেজ ও যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। জেলার চার আসনে দলীয় এমপি না থাকায় হতাশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনোবল সংহত রাখতে জাফর আলীকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। এমপি হিসেবে নির্বাচনের জন্য দিনরাত এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুড়িগ্রামে দৃশ্যমান যা উন্নয়ন হয়েছে, তা সবই আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে আমার হাত ধরে হয়েছে। সে বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর নাম শোনা যাচ্ছে। ২০০৬ সালে বাতিল ঘোষিত নির্বাচনে তিনি এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কুড়িগ্রাম শহরের চামড়াগোলা এলাকায় তার বাড়ি রয়েছে। রহুল কবীর রিজভী এই আসনে নির্বাচন করবেন কিনা তা স্পষ্ট না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় কয়েক দফা ত্রাণ বিতরণ করে নেতাকর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন। এছাড়াও এই আসনে প্রার্থী হিসেবে বিএনপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম বেবু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ ও সাইফুর রহমান রানার পক্ষে নেতাকর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যদিও তারা দু’জনই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। এই দল থেকে কে প্রার্থী হবেন তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) ॥ দশম জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুল। কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণের পর এ আসনের হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। এবার আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আসনটি নিজ দখলে নিতে কেন্দ্রে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। আসনটিতে মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি ও দলীয় কার্যালয়ের কারণে দলটির সাংগঠনিক কর্মকা- মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে এবার এ আসনে জাতীয় পার্টি রয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলীর অবস্থান বেশ শক্ত। এছাড়া চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী (বীর বিক্রম), অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম এ মতিন, সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন তালুকদার মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মতি শিউলী দলের মনোনয়ন পেলেও মহাজোটের কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। এবারও মতি শিউলী মনোনয়নের জন্য জোর লবিং করছেন কেন্দ্র পর্যন্ত। পাশাপাশি মাঠ দখলে রাখতে দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন। তবে অন্য প্রার্থীরাও ছাড় দিতে নারাজ। তাছাড়া গত কয়েক বছরে দলীয় কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগে প্রকাশ্য কোন্দলে মাঝে মধ্যেই সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। এত ঘটনার পরও উলিপুরের নেতৃত্ব মতি শিউলীর কব্জায়। তবে একজন নারী হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দখল করায় বিরোধীরা এখনও তার বিরুদ্ধে তৎপর। মতি শিউলী বলেন, আমাদের সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। তৃণমূল থেকে উঠে এসে আমি উলিপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি। একমাত্র আমিই নির্বাচনমুখী কর্মকা- পরিচালনা করছি। নিরন্তরভাবে মাঠে পড়ে থেকে মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হয়ে কাজ করছি। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করছি। প্রচার করছি সরকারের উন্নয়ন ও ভাল কাজের। তাই আশা করি মনোনয়ন পাব। দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। মনোনয়ন পেলে সবাই দলের প্রার্র্থীর পক্ষেই একাট্টা হয়ে কাজ করবেন। আর বার বার জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়ার কারণে নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় বেশি নাম শোনা যাচ্ছে সনিক প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান ডাঃ আক্কাস আলীর। দীর্ঘদিন ধরে উলিপুর জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সাবেক এমপি মরহুম মাইদুল ইসলামের ভাই শফিকুল হক দারা টিআর-কাবিখা ও বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্মকরণের অভিযোগ রয়েছে। ডাঃ আক্কাসের জনপ্রিয়তা থাকলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। তবে ইদানিং জাপা চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার সখ্য ও বন্যায় এলাকায় ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতার কারণে আলোচনায় এসেছেন নতুন করে। অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম হাবীব দুলাল জাতীয় পার্টি ত্যাগ করে ট্রুথ পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেছেন। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে হতাশ হতে হয়। ২০০৯ সালে কুড়িগ্রাম-২ আসনে এরশাদের ছেড়ে দেয়া আসনে উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি। কিছুদিন ধরে বিলবোর্ড ও ব্যানার দেখা যাচ্ছে তার নাম। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য তাসভিরুল ইসলাম ছাড়াও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল খালেকের নাম রয়েছে। তবে তাসভিরুল ইসলামের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। তাদের পারিবারিক ভোট ব্যাংক রয়েছে। কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারি-রাজীবপুর-চিলমারি) ॥ দশম জাতীয় নির্বাচনে কাকতালিয়ভাবে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি জেপির প্রার্থী রুহুল আমিন। দলের সাংগঠনিক অবস্থা তেমন ভাল না হলেও শুধু পারিবারিক কারণে নির্বাচিত হন তিনি। যদিও রুহুল আমিন একাধিকবার রৌমারী সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এমপি হিসেবে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আগামী নির্বাচনেও তিনি জেপি থেকে একক প্রার্থী। এক সময়ে আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত থাকলেও সেই অবস্থা এখন আর নেই। এ আসনের লাঙ্গলের ভোটাররাই এখন আওয়ামী লীগের। আসন বিন্যাসের পর এলাকার সিংহভাগ মানুষ আওয়ামী লীগ ও নৌকার সমর্থক। দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মতে, আসনটিতে দলের একজন স্বজ্জন, ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দিলে অনায়াসে বিজয়ী হবে নৌকা। মনোনয়নের আশায় আওয়ামী লীগের প্রায় এক ডজন নেতা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেনÑ রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যন মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী প্রয়াত মরহুম আবদুর রাজ্জাকের শ্যালক হাজী মুরাদ লতিফ, সাবেক রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেন, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাইদুল ইসলাম মিনু, কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ আমজাদ হোসেন, এনজিও পরিচালক মোঃ আবু হানিফ মাস্টার, রৌমারী উপজেলা আ’ লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, চিলমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক মনি, রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু হোরায়রা, এ্যাডভোকেট মাসুম ইকবাল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল কাদের, চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক, সহকারী অধ্যাপক মজিবুর রহমান প্রমুখ। মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী একাধিকবার যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আ’ লীগের কিছু নেতাকর্মী আমাকে ভাল না বাসলেও সাধারণ মানুষ আমাকে ভালবাসে। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে ঠেকানোর জন্য কিছু আ’লীগের নেতাকর্মী অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিউল আলম বলেন, দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনরুদ্ধার করব। তাছাড়া সাধারণ মানুষও আমাকে ভালবাসে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেনÑ রাজীবপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, রৌমারী বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাহেদ হোসেন সোনা, মমতাজ হোসেন লিপি ও বেসরকারী সংস্থ আরএসডিএয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী। এক সময়ের দুর্গ বলে খ্যাত এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা মোটেও ভাল নয়। দলটি থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন রাজীবপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও রাজীবপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ইউনুছ আলী, ব্যবসায়ী জাইদুল ইসলাম জাহিদ, জাপা চেয়ারম্যানের কূটনৈতিক উপদেষ্টা সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মেজর (অব) আশরাফ উদ দৌলা তাজ।
×