ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কমিটির প্রথম বৈঠক

কয়লা আমদানির উৎস চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩০ জুলাই ২০১৮

 কয়লা আমদানির উৎস চিহ্নিত  করার  সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কয়লা আমদানির উৎস চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়লা আমদানি সংক্রান্ত কমিটির প্রথম বৈঠকে রবিবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বড়পুকুরিয়ার সঙ্গে উৎপাদনে আসা অন্য কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রেও এই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা সঙ্কটের কারণে বন্ধ বিদ্যুত কেন্দ্র চালু করতে সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি রবিবার বিকেলে প্রথম বৈঠক করে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রথম বৈঠকে কয়লা আমদানি নিয়ে আলোচনা করেছি। শুরুতে উৎস অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কীভাবে আমদানি করা যায় সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। কমিটি বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সাম্প্রতিক কয়লা সঙ্কট নিরসনে কয়লা আমদানির পদ্ধতি ঠিক করবে। এই আমদানির করা কয়লা ক্রয়, পরিবহন করার বিষয়ে সুপারিশ করবে এই কমিটি। পাশাপাশি কয়লা আমদানির বিষয় তদারকি করা এবং এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় তদারকিও করা হবে। কয়লা নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, তিন দেশ থেকে বাংলাদেশ কয়লা আমদানি করতে পারে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াতে ৭৬ বিলিয়ন টন কয়লার প্রমাণিত মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ৫১ ভাগ কয়লা বিটুমিনাস শ্রেণীর আর ৪৯ ভাগ কয়লা সাব বিটুমিনাস শ্রেণীর। ইন্দোনেশিয়াতে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন টন। তবে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন টন। ইন্দোনেশিয়ার কয়লার দাহ্য ক্ষমতা কম এর জলীয় অংশ বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লার পরিবহন ব্যয় কম হলেও দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে সংশ্লিষ্টরা। তবে সব থেকে উন্নত কয়লা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাতে। দেশটির প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন টনের মধ্যে ৯৬ ভাগ উন্নত বিটুমিনাস শ্রেণীর। কয়লায় সালফারের উপস্থিতি এক ভাগের নিচে। কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে ২০০ মিটারের জাহাজ ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পরিবহন করতে পারে। এজন্য ১০ মিটার ড্রাফট (সাগরে পানির গভীরতা) থাকা উচিত। কয়লা পরিবহনে ৩০০ মিটার লম্বা জাহাজ ব্যবহার করলে ৮০ হাজার টন কয়লা আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ১২ মিটার ড্রাফট দরকার হবে। আর ৩৫০ থেকে ৪০০ মিটার লম্বা জাহাজে কয়লা আনলে এক সঙ্গে দেড় লাখ টন কয়লা আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে সাগরে ১৬ মিটার ড্রাফট এর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ সাগরের গভীরতা এবং রেল রাস্তার বিচার করলে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা কয়লা বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রের জন্য আমদানির উপযুক্ত। চট্টগ্রাম থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। তবে মংলা বা পায়রা বন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি করা হলে পানি পথে কয়লা পরিবহনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। তবে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে যে বন্দরই ব্যবহার করা হোক না কেন গভীর সমুদ্র থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে কয়লা খালাস করতে হবে। তবে মংলা এবং পায়রা এলাকায় লাইটারেজ জাহাজ রাখাও অনেকটা দুরূহ বিষয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। দামের দিক দিয়ে অতীত এবং ভবিষ্যত বিশ্লেষণ করে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার কয়লা ২০১৫ তে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনতে টন প্রতি ৮১ দশমিক ৫ ডলার ব্যয় হতো বলে ধারণা করা হয়। তবে পর্যায়ক্রমে এই দর বৃদ্ধি পাবে ২০২০ এ দাম দাঁড়াবে ১০৩ দশমিক ৩ ডলার, ২০২৫ এ দাম হবে ১২৫ দশমিক এক ডলার, ২০৩০ এ ১৪৭ ডলার হবে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলে ২০৩৫ এ ১৬৮ দশমিক ৯ এবং ২০৪০ এ দাঁড়াবে ১৯০ দশমিক ৭ ডলার। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি কয়লা ২০১৫ তে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনতে টন প্রতি ৫৯ দশমিক ৭ ডলার ব্যয় হতো বলে ধারণা করা হয়। তবে পর্যায়ক্রমে এই দর বৃদ্ধি পাবে ২০২০ এ দাম দাঁড়াবে ৭৫ ডলার, ২০২৫ এ দাম হবে ৯০ দশমিক তিন ডলার ২০৩০ এ ১০৫ দশমিক ৩ ডলার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলে ২০৩৫ এ ১২১ এবং ২০৪০ এ দাঁড়াবে ১৩৬ দশমিক ৪ ডলার। পিডিবি সূত্র বলছে, কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট এক সঙ্গে চালানো হলে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লার দরকার হয়। এখন একটি ইউনিট সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকায় প্রতিদিন চার হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হচ্ছে। নতুন করে কয়লা তোলা আরম্ভ হলে প্রতিদিন ৫ হাজার টন কয়লা তোলা সম্ভব না হলে বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। এই সঙ্কট দূর করতেও কয়লা আমদানি করা জরুরী বলে মনে করা হয়। কেন্দ্রটি শেষ দিকে এসে প্রতি দিন এক হাজার ৫০০ টন কয়লা ব্যবহার করছিল। এতে ১৫০ মেগাওয়াট থেকে ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হলেও উত্তরের বিদ্যুত পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব বলে মনে করছে পিডিবি।
×