ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সিটিতে ভোট আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩০ জুলাই ২০১৮

তিন সিটিতে ভোট আজ

শাহীন রহমান ॥ রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট নগরীতে ভোটের উৎসব আজ। নগরপিতা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি নির্বাচনে ৮ লাখ ৮২ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। কোন বিরতি ছাড়াই বেলা চারটা পর্যন্ত চলবে। ভোট গ্রহণ শেষেই ভোট গণনা শুরু হবে। ইতোমধ্যে তিন সিটিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী এলাকা ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য আগেই ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট প্রদানের সুবিধায় নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে তিন সিটিতে তিনজন নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তিন সিটিতে মেয়র প্রার্থী যারা ॥ রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট সিটিতে ১ জন করে মেয়র পদের বিপরীতে মোট ১৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটাররা এদের মধ্য থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। দলীয় ভিত্তিতে হওয়ায় মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কমিশনের বরাদ্দকৃত প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। রাজশাহী সিটিতে মোট ৫ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীকে, বিএনপির মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে, জাতীয় পার্টির মোঃ হাবিবুর রহমান কাঁঠাল প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মুরাদ মোর্শেদ হাতী প্রতীকে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোঃ শরীফুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ভোটাররা জানিয়েছেন রাজশাহীতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৬। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নৌকা প্রতীকে, বিএনপির মোঃ মজিবর রহমান সরওয়ার ধানের শীষ প্রতীকে, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ কাস্তে প্রতীকে, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী মই প্রতীকে এবং জাতীয় পার্টির মোঃ ইকবাল হোসেন লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সিলেট সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন ৭ । এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহম্মদ কামরান নৌকা প্রতীকে, বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী (জামায়াত) এহসানুল হক জুবায়ের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ডাঃ মোঃ মোয়াজ্জোম হোসেন খান হাতপাখা প্রতীকে, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের মোঃ আবু জাফর মই প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ এহছানুল হক তাহের হরিণ প্রতীকে এবং মোঃ বদরুজ্জামান সেলিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারসহ ২২ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ এপিবিএন এবং ব্যাটালিয়ন আনসারদের সমন্বয়ে মোবাইল টিম, প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি টিম, প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জানায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোট গ্রহণের দিন এবং পরের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন রয়েছে। নির্বাচনী অপরাধ বিচার আমলে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন তিন সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক হাকিম নিয়োজিত রয়েছেন। রাজশাহী থেকে জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মামুন-অর-রশিদ জানান, সিটি নির্বাচনে মোট ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪ টিই গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে এরইমধ্যে শনাক্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন। এবার একই ভেন্যুতে দুটি ইভিএম কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবি হিন্দু একাডেমি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম-এ। এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর, তালাইমারী, বিনোদপুর, মেহেরচ-ী, নওদাপাড়া, শালবাগান, লক্ষ্মীপুর, মহিষবাথান, ভাটাপাড়া, হেতেম খাঁ, কাদিরগঞ্জসহ কিছু এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। সিলেট থেকে স্টাফ রিপোর্টার সালাম মশরুর জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩৪ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৮০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। নির্বাচন কমিশনের ভাষায়-এই ভোট কেন্দ্রের নাম ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’। ঝুঁকিপূর্ণ ৮০ কেন্দ্রের মধ্যে শুধু কোতোয়ালি থানা এলাকায়ই রয়েছে ৪০ ভোট কেন্দ্র। কোতোয়ালি থানা এলাকায় ১৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৭টি সাধারণ, দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় ২টি ওয়ার্ডে ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ, জালালাবাদ থানা এলাকার ১টি ওয়ার্ডের ৪টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ, এয়ারপোর্ট থানা এলাকার ৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১১ টি ও সাধারণ কেন্দ্র ১২টি, মোগলাবাজার থানা এলাকার ১টি ওয়ার্ডের ৫ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ ও শাহপরান থানা এলাকার ৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র ১৪টি ও সাধারণ ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৫টি। ১৩৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ৬৭ টি, দক্ষিণ সুরমা থানায় ১২টি, জালালাবাদ থানায় ৮টি, এয়ারপোর্ট থানায় ২৩টি, মোগলাবাজার থানায় ৫টি ও শাহপরান থানায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯টি। বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার খোকন আহম্মেদ হীরা জানান, সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রবিবার বিকেলে রিটানির্ং অফিসারের কার্যালয় থেকে ব্যালট পেপার ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে শহরে মোতায়েন করা হয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বরিশাল সিটির ১১টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আজ সোমবার (৩০ জুলাই) বরিশাল নগরীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বরিশাল সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেন, সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমান জনকন্ঠকে বলেন, নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষক এসেছে। তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পোলিং এজেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, কোন পোলিং এজেন্টকে বাধা দেয়ার সুযোগ নেই। বিষয় হচ্ছে অনেক প্রার্থী পোলিং এজেন্টই দিতে পারেননি। সে বিষয়টিও আমরা খেয়াল করেছি। বরিশালে তিন মেয়র প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন ॥ স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রবিবার পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিএনপি ॥ ভোট নিয়ে হুঁশিয়ারি দেয়ার একদিন পর পিছিয়ে এলেন সিটি নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। মেয়র প্রার্থীকে শোকজ ॥ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার বিকেলে জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, শনিবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিপুল পরিমাণ মানুষ নিয়ে পথসভা করায় সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে শোকজ করা হয়েছে।
×