ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমর্থককে গালি দিয়ে ফের শাস্তির মুখে সাব্বির!

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২৯ জুলাই ২০১৮

সমর্থককে গালি দিয়ে ফের শাস্তির মুখে সাব্বির!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফর্মহীনতাই ভুগতেই আছেন। বিশেষ কোন নৈপুণ্য নেই। নৈপুণ্যের জন্য বরাবর নয়, মাঠের বাইরের বিষয় নিয়েই বারবার আলোচনায় আসেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাব্বির রহমান রুম্মন। আর তাতে করে শাস্তিও পেতে হয় এ ক্রিকেটারকে। এবার যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করায় শাস্তি হতে পারে সাব্বিরের। হার্ডহিটার এ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে বিতর্ক যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কিছুদিন না যেতেই নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক সমর্থককে নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে অকথ্য ভাষায় গালাগালির অভিযোগ ওঠে সাব্বিরের বিরুদ্ধে। আর এ ঘটনা প্রমাণ হলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে বড় রকমের শাস্তি পেতে পারেন সাব্বির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থকদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হবে এ নিয়ে বিসিবির একটি গাইডলাইন আছে। সবসময়ই সংযত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। সতর্ক থাকতে বলা হয়। কিন্তু সাব্বির তা মানেননি। বিষয়টি নিয়ে বিসিবিও বিব্রত। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন যেমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘খেলোয়াড়, বিশেষ করে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে সে ব্যাপারে আলাদা একটা গাইডলাইন দেয়া আছে। তাদের বলা আছে এই মাধ্যমে সমর্থকদের সঙ্গে কথোপকথনে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু এটা এখন সবাই জানে (সাব্বিরের ঘটনা)। বোর্ডের হাতে যখনই এটা আসবে, যদি দেখা যায় সে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, তাহলে ডিসিপ্লিনারি কমিটির হাতে ইস্যুটি তুলে দেব আমরা। এরপর তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’ যখনই ডিসিপ্লিনারি কমিটির হাতে তুলে দেয়া হবে তখনই বোঝা হয়ে যাবে; সাব্বির দোষী! আর দোষী মানেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। সেটি বড়ও হতে পারে। আবার ছোট্ট শাস্তিও হতে পারে। চলমান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে সাব্বির বিশেষ কোন নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। তাকে নিয়ে ভরসা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রথম দুই ওয়ানডেতে তার প্রতিদান দিতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতে চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে ৩ ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে ১২ রানের বেশি করতে পারেননি। এমন সময় বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়েছেন, যখন দলের জেতার জন্য ৭ বলে ৮ রানের প্রয়োজন। তার আউটের পর দল এলোমেলো হয়ে যায়। হেরেও যায়। প্রতিটা ম্যাচেই বলতে গেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসছেন তিনি। এটি যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে এ বছর মার্চে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। সেটি তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যের খাতায় লেখা। টেস্টে ১১ ম্যাচের ২২ ইনিংস খেলে চার হাফসেঞ্চুরি আছে। সর্বশেষ গত বছর সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ফর্ম নেই। তাই টেস্ট দলে এখন আর তার জায়গা হয় না। ওয়ানডেতেও অবস্থা করুণ। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে ৫৩ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। হাফসেঞ্চুরি পাঁচটি। সর্বোচ্চ স্কোর ৬৫। তাও গত বছর মে মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন। এরপর ৩০ রানের উর্ধে ইনিংস মাত্র একটি। ২০ রানের উর্ধে ইনিংস দুটি। কী বেহাল দশা! টি২০তে সাব্বিরকে কার্যকর ভাবা হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৪১ ম্যাচ খেলা হয়েছে। হাফসেঞ্চুরি আছে চারটি। সর্বোচ্চ ইনিংস ৮০ রানের। ২১ ম্যাচ পর এ বছর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন। এমন অবস্থায় দিন দিন বাজে খেলায়, ফর্মহীনতায় ভোগায় সমর্থকরা কটু কথা বলতেই পারেন। তা সহ্যও করতে হয় ক্রিকেটারদের। কিন্তু সাব্বির যেন তা মানতেই নারাজ। আর তাইতো অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেও ছাড়েননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের শেষে ফেসবুকে তার নামে বেশ সমালোচনাও হয়। আর তারই জেরে দু’জন ব্যক্তিকে ইনবক্সে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন তিনি। সেই গালাগালির ব্যাপার ভাইরাল হতে সময় নেয়নি। ইতোমধ্যে বিসিবির কর্মকর্তাদের কানেও পৌঁছে গেছে। সাব্বিরের এমন আচরণ অবশ্য নতুন নয়। বরাবর সাব্বির কোন না কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আর শাস্তির মুখে পড়েছেন। এর আগে আফগানিস্তান সিরিজে সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে তার মারামারির ঘটনা জানা যায়। তারও আগে রাজশাহীতে ঘরোয়া লীগ খেলতে গিয়ে এক কিশোর সমর্থককে পেটান সাব্বির। আম্পায়ারদের হুমকি দেন। তাতে ঘরোয়া লীগ থেকে ৬ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞার শাস্তিও পান। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। বিপিএলে নারীঘটিত কেলেঙ্কারির জন্য ১২ লাখ টাকা জরিমান হয়েছিল সাব্বিরের। একটি করে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেন সাব্বির। আর শাস্তি ভোগ করেন। আবারও শাস্তির মুখে সাব্বির!
×