ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক আকমলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে শিক্ষক সমিতি

মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশোভন উক্তি করায় উত্তাল ঢাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ জুলাই ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশোভন উক্তি করায় উত্তাল ঢাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে এবার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ। ঔদ্ধত্যপূর্ণ ওই বক্তব্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেনকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে তার ৩৭ বছরের অধ্যাপনাকালে শ্রেণীকক্ষে যে সিলেবাস পড়িয়েছেন তা খতিয়ে দেখারও ঘোষণা দিয়েছে সমিতি। এ দিকে অধ্যাপক আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ নাশকতা প্রতিরোধে ৭ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ। বুধবার কলাভবনের মূলফটকে এক মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতি বলেছে, কোটা সংস্কারকে ইস্যু করে বেশকিছু দিন যাবত দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাশকতা ও অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ঘাপটি দিয়ে থাকা বিএনপি-জামাতপন্থী কুচক্রী মহল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে অশোভন ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া, বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া, এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন আহমেদ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন, ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নীলিমা আকতার, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. সামাদ প্রমুখ। শিক্ষক সমিতি বলেছে, ১৯ জুলাই নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের ব্যানারে সমাবেশে অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তার পিতা... তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? আমরা বিস্মিত হই এই ভেবে যে, এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সত্ত্বেও উক্ত সমাবেশের আয়োজকরা তার এ বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ তো করেনইনি বরং বাহবা দিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার হীন ও গভীর চক্রান্তে লিপ্ত আছে। ঘটনা পরম্পরায় প্রতীয়মান হয় যে, আকমল হোসেনের এই বক্তব্য তার একক বক্তব্য নয়, এটি সেই অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের অপভাবনার বহিঃপ্রকাশ; যারা মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বারংবার বিতর্ক তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করে তারা শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকেই নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপরও আঘাত করেছেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতি চুপ থাকতে পারে না। আমরা শিক্ষক সমিতি থেকে বলেছি তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আঘাত করা হয়, তখন এ দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গার ওপর আঘাত করা হয়। তিনি যদি নিঃশর্ত ক্ষমা চান এবং এ কথা বলেন, এমন কথা তিনি আর ভবিষ্যতে বলবেন না এবং অন্তর থেকে সেকথা ধুয়ে মুছে ফেলবেন, তাহলে শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে বিবেচনা করে দেখবে ভবিষ্যতে আর কোন কর্মসূচী দেবে কী না। এটা যদি না হয় শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলন করবে। এমনকি ভবিষ্যতে এ দেশের কোন নাগরিক যেন এমন কথা মুখ থেকে বের করতে না পারেন, যার মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে অপমান করা হয় শিক্ষক সমিতি সেই পথে যাবে। অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, একজন সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে তার এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ঢাবি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি । ছাত্রলীগের ৭ দফা ॥ অধ্যাপক আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ নাশকতা প্রতিরোধে ৭ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্র লীগের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করে স্বারকলিপি জমা দিয়েছেন। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি কাজী এনায়েত, আদিত্য নন্দী, সাকিব হাসান সুইম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ব্যাখ্যা দিলেন অধ্যাপক আকমল হোসেন ॥ অধ্যাপক আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের দ্বারা আয়োজিত এক সমাবেশে দেয়া বক্তব্য নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয়। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক অংশের সভায় দেয়া বক্তব্য থেকে আমি বুঝতে পারছি যে আমার বক্তব্যকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করা হচ্ছে না।
×