ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার ফিরেছেন ২১০ জন

লেবানন থেকে ৩০ হাজার অবৈধ কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৩ জুলাই ২০১৮

 লেবানন থেকে ৩০ হাজার অবৈধ কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে

ফিরোজ মান্না ॥ অবশেষে অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের লেবানন ছাড়তে হচ্ছে। রবিবার ২১০ অবৈধ কর্মী দেশে ফিরেছেন। পর্যায়ক্রমে দেশটি থেকে ৩০ হাজারের বেশি অবৈধ কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে। কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ২১০ অবৈধ কর্মী দেশে ফিরবেন। সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর লেবানন থেকে প্রথম চালানে ২১০ অবৈধ কর্মী দেশে ফিরছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, লেবাননে ‘ইকামা’ জটিলতায় পড়েছেন এক লাখের বেশি কর্মী। দেশটিতে অবৈধ কর্মীর কারণে বৈধ কর্মীরাও ইকামা নবায়ন করতে পারছেন না। ইকামা নবায়ন করতে গিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ কেউ ইকামা পেলেও-তাদের বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলও অচিরেই লেবানন গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, লেবানন থেকে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া ফিরতে পুরুষ কর্মীকে বছরে ২৭০ মার্কিন ডলার ও নারী কর্মীকে ২০০ মার্কিন ডলার জরিমানা দিয়ে দেশে আসতে হয়। অবৈধ প্রবাসীদের পক্ষে প্রতি বছর জরিমানার এই বিশাল টাকার অঙ্ক জোগাড় করা খুব কঠিন। এই সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রদূত লেবানন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। লেবানন সরকারও তার আহ্বানে সাড়া দেয়। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে বৈরুত দূতাবাস অবৈধ প্রবাসীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দূতাবাসে নাম লিপিবদ্ধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রায় চার হাজার ২শ’ প্রবাসী দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে থেকে তিন হাজার ৯শ’ অবৈধ প্রবাসী জরিমানা ছাড়াই শুধু বিমান টিকেটের টাকা পরিশোধ করে দেশে ফেরত আসতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত সকল অবৈধ প্রবাসীকে দেশে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এদের মধ্যে যেসব প্রবাসীর সঙ্গে সন্তান রয়েছে বা যারা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। লেবাননে বাংলাদেশের দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে বহু কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তারা যথাসময়ে ইকামা বা চাকরির অনুমতিপত্র করেনি। ফলে যারা বৈধ কর্মী তারা ইকামা নবায়ন করতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। যদি তারা বৈধ হতে না পারে তাহলে বৈধ কর্মীদের সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। যাতে বৈধ কর্মীরা ইকামা নবায়ন করতে পারেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের নারী- পুরুষ মিলে দেড় লাখ কর্মী কাজ করছেন। লেবাননে বাংলাদেশী কর্মীরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যান। কিন্তু তারা তিন বছর মেয়াদে গিয়ে ৭/৮ বছর থাকছে। এতে বহু কর্মী এমনিতেই অবৈধ হয়ে পড়েন। অবৈধ এসব কর্মী লুকিয়ে নানাভাবে কাজ করেন। মালিকরা এসব কর্মীদের কম মজুরি দিয়ে কাজ করান। আবার অনেকে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। লেবাননে বর্তমানে যারা অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তারা আগে বৈধভাবে কাজ করতে পেরেছেন। বর্তমানে ইকামা নবায়ন না করতে পেরে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। অবৈধ হয়ে পড়া কর্মীর সংখ্যা ৩০ হাজারের ওপরে। দেশটিতে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোন অবৈধ কর্মীকে দেশে রাখবে না। এই সিদ্ধান্তের পর পুলিশ গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। আটক হয়েছেন অনেক বাংলাদেশী কর্মী। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশটিতে শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মীরা কাজ করছিলেন। কিন্ত কিছু কর্মীর কারণে বাজারটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে সমস্যা সমাধানের। অল্পদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল দেশটি সফর করবে। তারা লেবাননী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে চান। এদিকে, লেবাননে অবৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বহু বাংলাদেশী কর্মী এখন জেলে রয়েছেন। অবৈধ কর্মীদের আটক করতে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। লেবানন কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কর্মীদের বেলায় এর আগে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও, বর্তমানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবৈধদের কারণে যারা লেবাননে বৈধভাবে বসবাস করছেন, তারাও ইকামা নবায়নে হিমশিম খাচ্ছেন। ইকামা নবায়নে এর আগে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগত। এখন মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও ইকামা নবায়ন করতে পারছেন কর্মীরা। নতুন ইকামা বা ইকামা নবায়ন করতে গিয়ে কর্মীদের বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। গত এক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী ইকামা নবায়ন করতে না পেরে দেশে ফিরে এসেছেন। লেবানন সরকার কয়েক দফা অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করেছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশটি থেকে বহু অবৈধ কর্মী দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু যারা এই ক্ষমার সুযোগ নেননি তাদের অনেককে এখন জেল খাটতে হচ্ছে। দূতাবাস চেষ্টা করে যাচ্ছে যারা আটক রয়েছে তাদের দেশে ফেরানোর। কিন্তু নানা আইনী জটিলতায় জেলখানায় থাকা কর্মীদের মুক্ত করে দেশে পাঠানো যাচ্ছে না। এখন যেসব অবৈধ কর্মী দেশে ফিরতে চান তাদের বৈরুত দূতাবাসের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে দেশে ফিরতে হবে।
×